শনিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

শতবর্ষী বটগাছে অর্ধশতাধিক মৌচাক

শতবর্ষী বটগাছ মানেই এক ধরনের কৌতূহল কাজ করে মানুষের মনে; হয়ে ওঠে ইতিহাসের সাক্ষী। তার ওপর এই গাছে রয়েছে অর্ধশতাধিক মৌমাছির চাক! যা রীতিমতো স্থানীয়দের চোখে বিস্ময়কর...

শনিবারের সকাল ডেস্ক

শতবর্ষী বটগাছে অর্ধশতাধিক মৌচাক

গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার নাকাই ইউনিয়নের মেঘাচর মাঝিপাড়া এলাকা। এখানে রয়েছে এক শতবর্ষী বটগাছ। আর এই বটগাছে একটি-দুটি নয়; রয়েছে অর্ধশতাধিক মৌমাছির চাক। চাকের অগণিত মৌমাছির গুনগুন শব্দে মুখরিত থাকে পুরো এলাকা। গাছে থাকা মৌচাকে তাকালে দেখা যায়, সত্যিই মধু আর বাসা তৈরিতে মেতেছে মৌমাছিগুলো। স্বাভাবিকভাবে এই শতবর্ষী বটগাছের মৌমাছিরা দিচ্ছে অর্থনৈতিক জোগানও। প্রাচীনকালের বিশাল বটগাছের ছড়িয়ে থাকা ডালের ওপর-নিচের অংশসহ প্রায় সব জায়গায় থেকে থেকে মৌমাছির দলের সংসার। ঝুলানো চাকগুলো দূর থেকে দেখতে পাখির বাসার মতো। মৌমাছির আনাগোনা ও দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য দেখতে অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন এখানে। শত বছরের পুরনো এই গাছে দিগন্তজুড়ে বিস্তৃত প্রকৃতির অবাধ্য স্বাধীনতায় এখানে বেড়ে ওঠে মৌমামির গুঞ্জরন। শত বছরের পুরনো গাছে এত মৌচাক মুগ্ধতা ছড়ায় দর্শনার্থীদের মনে। স্থানীয়রা বলেন, জীববৈচিত্র্যকে অপার স্বাধীনতায় বেঁচে থাকতে দিতে, সবুজ বনায়ন বৃদ্ধির প্রতিধ্বনিই যেন গুঞ্জরিত হয় এসব মৌমাছির গানে। কয়েক বছর থেকে এভাবেই মৌমাছি চাক করছে গাছটিতে। তবে এ বছরই সবচেয়ে বেশি চাক তৈরি করেছে মৌমাছির দর। গাছটি মন্দির সংলগ্ন হওয়ায় অনেকেই ‘দেব আত্মার’ গাছ বলে থাকেন। সম্প্রতি এই মৌচাক থেকে প্রায় ৫ মণ মধু সংগ্রহ করা হয়েছে। মধু বিক্রিত টাকা মন্দিরের উন্নয়ন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ছাড়াও ৫০টির বেশি মৌচাক দেখা যায় গাছটিতে। চারদিক থেকে মধুর ম ম গন্ধ ভেসে আসছে। গাছটির একপাশে নদী, সামনে মন্দির, আর দুই পাশে বাড়ি। স্থানীয় রঞ্জিত কুমার বলেন, ‘ছোটকাল থেকে বাপ-দাদার কাছ থেকে এই গাছের গল্প শুনে আসছি। ঝড়েও এই গাছের ডালপালা ভাঙে না। নদীর সব দিক ভাঙে কিন্তু গাছের দিকে ভাঙে না। কয়েক বছর আগে এভাবেই মৌচাক বসে এই গাছের গা ঘেঁষে। সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত মৌমাছি থাকে। পাশেই আমার বাড়ি, মৌমাছির চাক দেখতে খুব ভালো লাগে। মৌমাছি আমাদের কারও কোনো ক্ষতি করে না। আজ পর্যন্ত আশপাশে কাউকে মৌমাছি কামড় দেয়নি।’

শ্রী রানী মতি বলেন, ‘অনেক বছর আগে এই গাছের ডাল কাটায় আমার ভাসুরের মৃত্যু হয়েছে। এটি দেব আত্মা গাছ। আশপাশে অনেক বড় গাছ আছে, সেখানে কিন্তু মৌমাছি চাক করে না। আগের চেয়ে এবার বেশি চাক। গ্রামের (মাঝিপাড়া) সবাই মৌচাকগুলো দেখাশোনা করে রাখে। কেউ মৌমাছির চাকে ঢিল ছোড়ে না। নিজেদের প্রয়োজনে চাক থেকে মধু সংগ্রহ করে বিক্রি করি।’

স্থানীয় বাসিন্দা শ্রী বিষু রায় বলেন, ‘যখন মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করা হয় তখন আমরা খাঁটি মধু খেতে পারি। মন্দির-সংলগ্ন বটবৃক্ষটি একটা দর্শনীয় স্থান হিসেবে এখন পরিচিতি পাচ্ছে। এ গাছের মৌচাক দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসে। অনেকেই খাঁটি মধু কিনে নিয়ে যায়।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে গাছটির ভিডিও। সেখানে মৌচাকগুলো দেখতে খুব সুন্দর লাগছে। তাই আকৃষ্ট হয়ে অনেকেও ছুটে আসছেন এই শতবর্ষী মৌমাছির বৃক্ষটি দেখার আশায়।

সর্বশেষ খবর