শনিবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
মূল রচনা

ন্যাশনাল জিওগ্রাফির চোখে বিশ্বনন্দিত পর্বতারোহী ওয়াসফিয়া নাজরীন

বিশ্বের অনুপ্রেরণীয় ২৫ নারী বিজ্ঞানী ও এক্সপ্লোরার

সাইফ ইমন

ন্যাশনাল জিওগ্রাফির চোখে বিশ্বনন্দিত পর্বতারোহী ওয়াসফিয়া নাজরীন

এভারেস্ট জয়ী দেশের প্রথম নারী পর্বতারোহী ওয়াসফিয়া নাজরীন। দেশের সব নারীকে তিনি উৎসর্গ করেছিলেন তার অনন্য অর্জন। হয়ে উঠেছেন বিশ্বব্যক্তিত্ব। থেমে থাকেননি তিনি। একের পর এক জয় করেছেন বিশ্বের উঁচু উঁচু পর্বতশৃঙ্গ।  ন্যাশনাল জিওগ্রাফির প্রকাশিত ‘নো বাউন্ডারিজ’র ২৫ নারী বিজ্ঞানী ও এক্সপ্লোরারের তিনিও একজন।

 

ছোটদের অনুপ্রাণিত করতে প্রকাশিত হয়েছে ন্যাশনাল জিওগ্রাফির অনুপ্রেরণামূলক বই ‘নো বাউন্ডারিজ’।   এতে স্থান পেয়েছেন গোটা বিশ্বের ২৫ জন অনুপ্রেরণীয় নারী ব্যক্তিত্ব। যারা সবাই স্বমহিমায় উজ্জ্বল।  এদেরই একজন বাংলাদেশের মেয়ে ওয়াসফিয়া নাজরীন। ১৯৮২ সালের ২৭ অক্টোবর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার দাদার বাড়ি ফেনী জেলায়। ওয়াসফিয়া ঢাকার স্কলাসটিকা স্কুল থেকে ও এবং এ লেভেল সম্পন্ন করার পর যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় এগনেস স্কট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। তার বিষয় ছিল সামাজিক মনোবিজ্ঞান ও স্টুডিও আর্ট। এরপর স্কটল্যান্ডে কিছু দিন পড়াশোনা করেন। ছাত্রজীবনে তিনি যুদ্ধ বিরোধী এবং মানবতার পক্ষে বিভিন্ন বৈশ্বিক ইস্যুতে সক্রিয় আন্দোলনকর্মী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বর্তমানে তিনি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নিয়োজিত রয়েছেন। 

বাংলাদেশ তথা সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীদের সম্মুখীন হতে হয় বিভিন্ন বাধা-বিপত্তির। ঘরের বাইরে বের হলেই শুনতে হয় নানান মন্তব্য। জীবনে নারীরা কী কী করতে পারবে না সেটা শুনতে শুনতেই পার হয়ে যায়। তাই কী কী করা যাবে সেটা অধিকাংশ সময়ই জানা হয় না। তবে এসব কিছু গায়ে মাখেননি ওয়াসফিয়া। নিজেকে গড়ে তুলেছেন, স্বপ্নপূরণ করেছেন নিজ সামর্থ্য গুণে। এভারেস্টের চূড়ায় নিয়ে গেছেন নিজের দেশের পতাকা। নাজরীন ২০১২ সালের ২৬ মে শনিবার সকাল ৭টায় এভারেস্ট চূড়ায় পা রাখেন। তিনি তার এই সাফল্য বাংলাদেশের নারীদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন। এরপর সাত মহাদেশের সাতটি সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ জয় করেন তিনি। যা

বাংলাদেশের প্রথম পর্বতারোহী হিসেবে একটি রেকর্ড। ২০১৫ সালের ১৮ নভেম্বর সকাল ১০টা ১৯ মিনিটে ইন্দোনেশিয়ার পাপুয়া অঞ্চল দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার (ওশেনিয়া) সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কারস্তনেজ পিরামিড জয়ের মধ্য দিয়ে সাতটি পর্বত জয়ের কাজটি সম্পন্ন করেন তিনি। বাংলাদেশ অন সেভেন সামিট কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২০১১ সালে ওয়াসফিয়া তার সেভেন সামিট অভিযান শুরু করেন। ১৬ হাজার ২৪ ফুট উচ্চতার কারস্তনেজ পিরামিডের স্থানীয় নাম পুনাক জায়া। সেভেন সামিটের অংশ হিসেবে ওশেনিয়া অঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হিসেবে ধরা হয় এটিকে। এটি ছিল সেভেন সামিটের সাত নম্বর চূড়া জয়। এ ছাড়া তিনি ২০০৯ সালে নেপালের লু রি পর্বত, ২০১০ সালে আইল্যান্ড পিক জয় করেন। ২০১৩ সালের ২৮ মার্চ ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এলব্রুস জয় করেন। রাশিয়ার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে তিনি এলব্রুস চূড়ায় আরোহণ করে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা ওড়ান। ন্যাশনাল জিওগ্রাফির বর্ষসেরা অভিযাত্রীর খেতাব পাওয়া এভারেস্ট জয়ী দ্বিতীয় বাংলাদেশি নারী ওয়াসফিয়া নাজরীন তার দুঃসাহসী অভিযানের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নে নিজের অঙ্গীকার ও কর্মতৎপরতার স্বাক্ষর রাখেন। এ জন্য ওয়াসফিয়াকে ২০১৪ সালের অন্যতম বর্ষসেরা হিসেবে মনোনীত করা হয়। ২০১৬ সালে তিনি ন্যাশনাল জিওগ্রাফির সেরা উদীয়মান অভিযাত্রীর তকমা জয় করেন। যার মাধ্যমে প্রথম নারী হিসেবে জিওগ্রাফির এ দুটি খেতাব জয় করতে সক্ষম হন তিনি। এসব অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে আরও একটু উচ্চতর স্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এই বাংলাদেশি নারী।

সর্বশেষ খবর