শনিবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
উদ্ভাবন

বিজ্ঞানী আমিনুল হকের অপার সম্ভাবনাময় রাবি ধান-১

মর্তুজা নুর, রাবি

বিজ্ঞানী আমিনুল হকের অপার সম্ভাবনাময় রাবি ধান-১

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোনমি অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের অধ্যাপক ড. আমিনুল হক। কৃষির সঙ্গে সম্পর্কিত তৃণমূল জনগোষ্ঠীর জীবনের দৈনন্দিন চালচিত্রে অভাব-অনটন, অনাহার-অর্ধাহার, চিকিৎসাহীনতা, সর্বোপরি জীবনের প্রতি তাদের অনীহার দৃষ্টিভঙ্গি বিজ্ঞানীকে গভীরভাবে মর্মাহত করে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে কাজ করার জন্য মনঃস্থির করেন। দেশবাসীর খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কৃষিজীবী জনগোষ্ঠী ও জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়নে তিনি আরও নিবিড়ভাবে গবেষণার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। ২০১৪ সালে উন্নত জাতের ধান উদ্ভাবনে গবেষণা শুরু করেন। বাংলাদেশের বিদ্যমান ধানের জাতগুলো পরীক্ষা করার পর গবেষণার প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা যায়, সরু-চিকন ও আগাম জাতের ধান উদ্ভাবন সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতি ত্বরান্বিত করার জন্য ধানের উন্নত সরু-চিকন ও আগাম জাত উদ্ভাবনে বিজ্ঞানী ড. আমিনুল ফিলিপাইন থেকে ২০১৪ সালে ১৬০৭, ১৬২১, ১৫৭৮, এনএসআইসি ২২২-সহ ধানের ৫৩টি লাইন সংগ্রহ করেন। বিজ্ঞান গবেষণায় দেশের শীর্ষ পর্যায়ের বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোনমি অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের গবেষণা মাঠে পরীক্ষামূলকভাবে আবাদ করেন। কৌলিক সারিটি ২০১৪ সালে রোপা আমন মৌসুমে ৪টি স্থানে ও ২০১৫ সালে ৩টি কৃষকের জমিতে ফলন উপযোগিতা যাচাই করা হয়। পর পর দুই বছরই দেখা যায়- প্রচলিত জাত ব্রি ধান-৩৯ জাতের চেয়ে ফলন ভালো ও চাষাবাদ উপযোগী। পরীক্ষণে পেডিগ্রি-আইআর ৭৮৫৮১-১২-৩-২-২ ও প্যারেন্টেজ নম্বর-আই আর ৭৩০১২-১৩৭-২-২-২ / পিএসবিআরসি-১০ এর বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সাদৃশ্য দেখতে পান। ধানের নতুন জাত হিসেবে অবমুক্তায়নের জন্য তিনি পরীক্ষামূলকভাবে আবাদের জন্য তা চূড়ান্ত করেন। সরু-চিকন ও আগাম জাতের চাহিদা মেটাতে তিনি উদ্ভাবন করেন রাবি ধান-১।

অধ্যাপক ড. আমিনুল হক উদ্ভাবিত এই রাবি ধান-১ অপার সম্ভাবনার পথ উন্মোচন করতে যাচ্ছে। তার উদ্ভাবিত নতুন জাত রাবি ধান-১ এর গুণাগুণ অন্য যে কোনো উচ্চ ফলনশীল জাতের তুলনায় উন্নত, অথচ উৎপাদন খরচ অপেক্ষাকৃত কম। রাবি ধান-১ এর ফলন অন্যান্য ধানের তুলনায় হেক্টরপ্রতি দেড় থেকে দুই টন বেশি। গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, বিভিন্ন উচ্চফলনশীল জাতের উৎপাদনকাল হলো-রাবি ধান-১ একশ ছাব্বিশ থেকে একশ ত্রিশ দিন, পাইজাম একশ বেয়াল্লিশ দিন, ব্রি ধান-৩৯ একশ ছাব্বিশ দিন ও বিআর-১১ একশ পঁয়তাল্লিশ দিন। হেক্টরপ্রতি এ জাতগুলোর ফলন হলো- রাবি ধান-১ সাড়ে ৫ থেকে ৬ টন, পাইজাম সাড়ে ৪ থেকে ৫ টন, ব্রি ধান-৩৯ চার থেকে সাড়ে ৪ টন, বিআর-১১ সাড়ে ৪ থেকে সাড়ে ৫ টন।

সর্বশেষ খবর