শনিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

যশোরে ফুলের স্বর্গ উদ্যান গদখালী

সাইফুল ইসলাম, যশোর

যশোরে ফুলের স্বর্গ উদ্যান গদখালী

কদিন বাদেই আসছে পয়লা ফাল্গুন। ‘বসন্ত বাতাসে সইগো বসন্ত বাতাসে, বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে, সইগো বসন্ত বাতাসে...।’ বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমের ‘বন্ধু’র বাড়ির ফুলের মতো দেশের বসন্ত বাতাস মাতাতে এবার পুরোপুরি প্রস্তুত ফুলরাজ্য হিসেবে খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীর ছয় সহস্রাধিক কৃষক।

পয়লা ফাল্গুনের পরপরই বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও স্বাধীনতা দিবস। এসব দিবসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে ফুলের চাহিদা। গদখালীর ফুলচাষিদের তাই এখন এক মুহূর্ত ফুরসত নেই। ফুলের প্রতিদিনের নিয়মিত চাহিদা জোগানের পাশাপাশি বিশেষ এ দিবসগুলোর জন্যও প্রস্তুত হচ্ছেন তারা। ইতিমধ্যেই দেশি-বিদেশি রং-বেরঙের নানা প্রজাতির ফুলে রঙিন হয়ে উঠেছে গদখালী অঞ্চলের মাঠ। খেতের পর খেত গোলাপ, গাঁদা, রাজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, রথস্টিক, গেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকা, জিপসি, অর্কিড আর পাতাবাহার। ফুলের বাহারি রঙে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে ফুলচাষিদের মুখও।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি ফুলচাষি আবদুর রহিম বলেন, করোনার কারণে লকডাউন, জাতীয় দিবস ও বিয়েসাদিসহ সব ধরনের অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় গত দুই বছর ফুলচাষিরা পুরোপুরি বেকার হয়ে পড়েছিলেন। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও অসময়ের বৃষ্টিতে বেশির ভাগ ফুলখেত ও ফুলের বীজ নষ্ট হয়ে যায়। এক পর্যায়ে সরকার চরম ক্ষতিগ্রস্ত ফুলচাষিদের জন্য প্রণোদনার ঋণের ব্যবস্থা করলে তারা আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেন। এবার আবহাওয়া অনুকূল থাকায় উৎপাদন ভালো হয়েছে। ফুলের দামও পাওয়া যাচ্ছে ভালো। দুই বছরের ক্ষতি ফুলচাষিরা এবার বেশ খানিকটা পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন।

গদখালী ফুল প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, বিজয় দিবস এবং ইংরেজি বর্ষবরণের দিনে গদখালীতে প্রায় ৮ কোটি টাকার ফুল বেচা-কেনা হয়েছে। সামনের বিশেষ দিবসগুলোয় গদখালীর ফুলবাজারে অনেক বেশি পরিমাণ ফুল বেচা-কেনা হবে বলে তারা আশা করছেন। ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নের পটুয়াপাড়া গ্রামের আলমগীর হোসেন এবার ১৫ কাঠা জমিতে জারবেরা ও দেড় বিঘা জমিতে গাঁদা ফুলের চাষ করেছেন।

 তিনি বলেন, করোনার মধ্যে গত বছর এই সময়ে তিনি ১০ হাজার টাকার ফুলও বিক্রি করতে পারেননি। তবে এবার বুদ্ধিজীবী দিবস, বিজয় দিবস ও ইংরেজি বর্ষবরণের দিনে তিনি ৫০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেছেন। হাড়িয়া গ্রামের মোখলেসুর রহমান এবার দেড় বিঘা জমিতে লং স্টিক গোলাপের চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ডিসেম্বর থেকে ফুলের চাহিদা যেমন বাড়ছে, দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। করোনা আর আম্ফানের ক্ষতি এবার কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা তার।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম জানান, এবার ঝিকরগাছা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে (গদখালী এলাকা হিসেবে পরিচিত) ৬ হাজার কৃষক ৬২৫ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে নানা জাতের ফুলের চাষ করেছেন। আর যশোরের আট উপজেলায় ফুলচাষ হয়েছে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। তিনি বলেন, গদখালী ফুলবাজারে বছরজুড়ে হাজার কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়। ফুলচাষের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অন্তত ৫০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত। এ রকম সম্ভাবনাময় একটি সেক্টরকে এগিয়ে নিতে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। তিনি বলেন, যেহেতু দেশের কাঁচা ফুলের মোট চাহিদার সিংহভাগই গদখালীর চাষিরা সরবরাহ করে থাকেন, তাই গদখালীতে একটি ফুল গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই তারা দাবি করে আসছিলেন। নানা কারণে তা আটকে আছে।

সর্বশেষ খবর