শনিবার, ২ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
অক্ষরজ্ঞানের পাঠশালা

গ্রামীণ নারীদের বদলে যাওয়ার গল্প

প্রতিভা

নজরুল মৃধা, রংপুর

গ্রামীণ নারীদের বদলে যাওয়ার গল্প

রংপুর নগরীতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সমাজ পরিবর্তন ও উন্নয়ন ফোরাম গত তিন বছর থেকে দরিদ্র নারীদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার কাজ করে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে চলছে সচেতনতামূলক নানা পরামর্শ। এই সংগঠনের পাঠশালা রয়েছে চারটি। এগুলো হচ্ছে- ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের রামপুরা হিন্দুপাড়ায় দুটি এবং ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের শালবন মিস্ত্রিপাড়া মহুয়ার দোলায় একটি স্থানে চলছে দুটি বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। প্রতিটি পাঠশালায় ২৫ থেকে ৩০ জন করে নিরক্ষর নারী বাংলা, গণিত ও ইংরেজির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন।

নগরীর রামপুরা কেন্দ্রের দরিদ্র নারী রাহেনা বেগম (৪৮)। তিনি বাসাবাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। তার কোনো অক্ষরজ্ঞান ছিল না। বাড়ির পাশেই পাঠশালা পেয়ে তিনি খুশি। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গৃহকর্মীর কাজ করেন। পরে এসে বাড়ির কাজ করেন এবং অসুস্থ স্বামীর সেবা করেন। এর মাঝেই সময় বের করে ছুটে আসেন এই পাঠশালায়। রাহেনা বেগম বলেন, লেখাপড়া না জানার কারণে অনেকের কাছে হাসির পাত্র হয়েছি। মনটা লেখাপড়ার জন্য ছটফট করত। বাড়ির পাশেই লেখাপড়ার সুযোগ পেয়ে আমি এখন লিখতে ও পড়তে পারি। এই পাঠশালায় আসার তার তিন মাস হয়েছে। গত তিন মাসে তিনি অনেক কিছু শিখতে পেরেছেন বলে খুশি। যত দিন এই পাঠশালা থাকবে তত দিন তিনি আসবেন বলেও জানান। ওই কেন্দ্রে বর্তমানে তার মতো আরও ২৪ জন হতদরিদ্র নারী সারাদিন তাদের কাজ শেষে এভাবেই  অক্ষরজ্ঞান নিতে ছুটে আসছেন সমাজ পরিবর্তন উন্নয়ন ফোরামের সেই পাঠশালায়।

পাঠশালার শিক্ষক দুলালী বেগম জানান, এই এলাকাতেই তার বাড়ি। এখানে দরিদ্র নারীদের শিখাতে পেরে তার ভালো লাগছে। নিরক্ষরদের অক্ষরজ্ঞানের মতো মহৎ কাজটি করতে পেরে তিনি নিজেকে গর্বিত মনে করছেন। এখানে বাংলা, অঙ্ক ইংরেজি শেখানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে সচেতনতামূলক বিভিন্ন দিক তাদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে।

সংগঠনটির সভাপতি সাংবাদিক এস এম পিয়াল নিজেও মাঝেমধ্যে পাঠ কেন্দ্রে ক্লাস নেন। তিনি জানান, সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সমাজ পরিবর্তন ও উন্নয়ন ফোরামের যাত্রা শুরু হয়।

নগরীর দরিদ্র অশিক্ষিত নারীদের মধ্যে জ্ঞানের আলো দেওয়ার জন্য তিন বছর আগে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। রামপুরায় দুটি পৃথক কেন্দ্রে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হলেও শালবন মিস্ত্রিপাড়ায় একটি কেন্দ্রে দুটি পাঠশালা পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিটি কেন্দ্রে শুধু পেশাজীবী নয়, স্থানীয় নিরক্ষর নারী-পুরুষের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এবার প্রথম শুদ্ধভাবে নামাজ শেখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সংগঠনের সদস্যদের অর্থ দিয়ে শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, উৎসাহ দেওয়ার জন্য পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। পরীক্ষায় ভালো করলে দেওয়া হয় পুরস্কার। এ ছাড়া লেখাপড়ার একঘেয়েমি দূর করার জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সহিদুল ইসলাম বাবলু বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার দেশ গড়তে হলে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু       এই শ্রেণির মানুষ কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে       না যাওয়ায় শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই আমরা বিভিন্ন এলাকায় অক্ষরজ্ঞানের পাশাপাশি সচেতনতামূলক শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছি।

 

সর্বশেষ খবর