শিরোনাম
শনিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

লাল পাহাড়ে ত্রিপুরাদের বর্ণিল জীবন

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

লাল পাহাড়ে ত্রিপুরাদের বর্ণিল জীবন

সম্প্রতি সম্পন্ন হয়েছে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বৈসু উৎসব। উৎসবে রঙিন হয়ে উঠে কুমিল্লার লালমাই পাহাড়। চৈত্রের শেষ দিনে আনন্দ র‌্যালি, ফুল ভাসানো ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মেতে ওঠে ত্রিপুরা পল্লীর তরুণ-তরুণীরা। এদিন তারা নিজেদের সাজায় ঐতিহ্যবাহী পোশাকে। তরুণীরা পরেছেন বর্ণিল থামি পোশাক। তাদের গলা, কপাল আর কোমরে নানা গহনা। বর্ণিল জীবনযাপনের সঙ্গে রয়েছে তাদের নানা সংকটও।

লালমাই পাহাড়ের ত্রিপুরা পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, বাতাসে বসন্তের ¯িœগ্ধ আবেশ। নাকে লাগে শাল আর মেহগনির মিষ্টি গন্ধ। পাহাড়ের ঢালুতে বসবাস ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের। চৈত্রের শেষ দিনে ঘরে ঘরে হরেক রকম সবজির সংমিশ্রণে রান্না হয় পাঁচন। এছাড়া তৈরি করা হয়েছে লুচি মিষ্টান্নসহ নানান রকমের খাবার। এর আগে সকালে ত্রিপুরা পল্লী থেকে তরুণ-তরুণীরা র‌্যালি নিয়ে আসে কুমিল্লা কোটবাড়ির বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) পুকুরে। নিজেদের পুকুর না থাকায় সেখানে গিয়ে তারা ফুল ভাসিয়ে উলুধ্বনি দিয়ে গঙ্গা পূজা করেন।

সূত্রমতে, কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার লালমাই পাহাড় এলাকার সালমানপুর, জামুড়া, বৈষ্ণবমুড়া, পাশের সদর উপজেলার হাদকপুরে ৯৮টি ত্রিপুরা সম্প্রদায় পরিবার বসবাস করে। সালমানপুর ত্রিপুরা পল্লীর স্কুলে ২৫-৩০ জন শিশু ককবরক ভাষা শেখার সুযোগ পাবে। তবে জামুড়া, বৈষ্ণবমুড়া, হাদকপুরের শিশুদের নেই মাতৃভাষা নিয়ে লেখাপড়ার ব্যবস্থা। এদিকে চারটি এলাকায় পাঁচ শতাধিক ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন। তাদের ধর্মীয় মন্দির নেই। নেই মৃত্যুর পর সৎকারের শ্মশান। মরদেহ নিয়ে যেতে হয় আট কিলোমিটার দূরে নগরীর ঠাকুরপাড়া শ্মশানে। ধর্মীয় উৎসবের জন্য যেতে হয় নগরীর মন্দিরে। তাদের নেই কোনো পুকুর। তাই দুই কিলোমিটার দূরে বার্ডের পুকুরে পূজা দিতে হয়।

ভিক্টোরিয়া কলেজের স্নাতকের ছাত্রী অপর্ণা রানী ত্রিপুরা বলেন, আমাদের একটি সাংস্কৃতিক দল আছে। আমরা বিভিন্ন উৎসবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করি। নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও আমরা আনন্দ গানে সময় পার করি। স্থানীয় ত্রিপুরা কল্যাণ সমবায় সমিতির সভাপতি সজীব চন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, সালমানপুর ত্রিপুরাপাড়ায় শিশুদের মাতৃভাষা শেখানোর জন্য ককবরক ভাষার স্কুল নির্মাণ করা হয়েছে। পাহাড়ের অন্য পাড়ার শিক্ষার্থীদের জন্যও মাতৃভাষা শেখানোর ব্যবস্থা করা হোক। এখানে মন্দির ও শ্মশানের জন্য জমির প্রয়োজন। আমাদের কোনো পুকুর নেই। তাই দুই কিলোমিটার দূরে বার্ডের পুকুরে পূজা দিতে হয়। সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুভাশিষ ঘোষ বলেন, আমরা এখানে মাতৃভাষা শেখানোর জন্য ককবরক ভাষার স্কুল নির্মাণ করেছি। খাসজমি পেলে তাদের জন্য শ্মশানের জমি বরাদ্দ করা হবে। তাদের একটি পুকুর হলে ভালো হয়। এ বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।

সর্বশেষ খবর