শিরোনাম
শনিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

তিন ফুটবল-কন্যা যাচ্ছে রোনালদোর দেশ পর্তুগালে

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

তিন ফুটবল-কন্যা যাচ্ছে রোনালদোর দেশ পর্তুগালে

খেলার ছলে ফুটবল খেলত তারা। সেই খেলার ছল এখন শতভাগ পেশাদারিত্বের। বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৭ নারী ফুটবলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়ও তারা। নিজেদের আরও দক্ষ করতে বিকেএসপির উদ্যোগে তারা যাচ্ছে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর দেশ পর্তুগালে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী জুলাই মাসে উড়াল দেবে তারা। বলছিলাম ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার সিনহা জাহান শিখা, স্বপ্না আক্তার জেলি ও তানিয়া আক্তার তানিশার কথা। জানা যায়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় ক্রীড়া পরিদফতর বঙ্গমাতা নারী ফুটবলের সেরা ৪০ খেলোয়াড়কে নিয়ে বিকেএসপিতে দুই মাসের ক্যাম্প করে। সেই খেলোয়াড়দের মধ্য থেকেই গড়া একটি দল এখন প্রশিক্ষণের জন্য যাবে পর্তুগালে। এই দলেই সুযোগ পেয়েছে শিখা, স্বপ্না ও তানিশা। এর মধ্যে শিখা ও স্বপ্না রয়েছে ১১ জনের মধ্যে। আর তানিশা আছে স্ট্যান্ডবাই পাঁচজনের কাতারে।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে ২০১৮ সালে রানার আপ ও পরের বছর চ্যাম্পিয়ন হওয়া নান্দাইলের পাঁচরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল দলের সদস্য ছিল এ তিন ফুটবলার। বর্তমানে শিখা নান্দাইল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ছে। স্বপ্না ও তানিশা অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী।

এদের মধ্যে উপজেলার রাজাবাড়িয়া গ্রামের টমটমচালক বিপ্লব মিয়ার মেয়ে শিখা মূলত খেলেন লেফট উইংয়ে। একই এলাকার ইলাশপুরের কৃষক ফয়জুদ্দিন ফকিরের মেয়ে স্বপ্না গোলকিপারের দায়িত্ব পালন করে। আর মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ কুতুবপুর গ্রামের দিনমজুর দুলাল মিয়ার মেয়ে তানিশা ডিফেন্ডার হিসেবে মাঠে অবস্থান করে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় থেকেই ফুটবলের নেশায় জড়ায় তারা। তারপর থেকে শুধু ওপরের দিকে চলা। তাদের তিনজনের সঙ্গেই আলাদা করে কথা হয় বাংলাদেশ প্রতিদিনের। উঠে আসে সংসারের অনটনের গল্প। সেই অনটন জয় করলেও মানুষের কটূক্তি তাদের প্রতিনিয়ত উপেক্ষা করতে হয়েছে। পর্তুগাল যাত্রার কথা শুনে এখন সেই মানুষগুলোই এই তিন কন্যাকে দেখতে আসছে। এ ছাড়াও তিন কন্যার তিন গ্রাম আর গোটা উপজেলাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে আনন্দের জোয়ার। এ পর্যন্ত আসা মোটেও সহজ ছিল না জানিয়ে সিনহা জাহান শিখা বলে, ‘তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় আমার মা মারা যান। মা মারা যাওয়ার পর বাবা আরেকটি বিয়ে করেন। এরপর নানার বাড়িতে থেকে শুরু হয় সংগ্রামী জীবন। নানি অনেক কষ্ট করে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলার জন্যও আমার পেছনেও ব্যয় করেছেন। তাই আমি এখন শিখতে চাই। আর দেশের জন্য সেরাটাই দিতে চাই।’

উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস স্বপ্না আক্তার জেলির। বাবা কৃষিকাজ করেন। সাত ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট স্বপ্না। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় ফুটবলের সঙ্গে তার পরিচয়। স্বপ্না জানায়, ‘অভাব-অনটনের সংসারে অনুশীলনের জন্য আমাকে ভাড়া গুনতে হতো ৬০ টাকা। পাশাপাশি মানুষের টিপ্পনি তো থাকতই। সব উপেক্ষা করে নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা করেছি। চালিয়ে গেছি নিজের খেলা। নিজের সেরাটা দিয়ে জাতীয় দলের গোলরক্ষক হওয়াটা এখন স্বপ্ন।’

চন্ডিপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে খেলোয়াড়দের প্র্যাকটিস দেখে খেলার প্রতি আগ্রহ বাড়ে তানিয়া আক্তার তানিশার। সেখান থেকেই তার খেলার শুরু। তানিশা জানায়, ‘অর্থাভাবে অনেক সময় অনুশীলনে যাওয়া হয়নি। পাড়ার লোকেরা বাবা-মাকে বলত আমাকে নাকি বিয়েও দিতে পারবে না। কিন্তু সব কিছুর পরও আমি আমার পরিবারের কাছ থেকে সব রকম সহযোগিতা পেয়েছি নিজের খেলাটা চালিয়ে নেওয়ার জন্য।’

তিনি আরও জানান, যে মায়ের উৎসাহে আমি ফুটবল পায়ে নিয়েছি সে মায়ের গলায় এখন টিউমার। অর্থাভাবে চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না। ভালো খেলে টাকা পেলে সবার আগে মাকে অপারেশন করাব। কারণ চিকিৎসক জানিয়েছেন,  অপারেশন করা গেলে মা সুস্থ হয়ে যাবেন।

সর্বশেষ খবর