শনিবার, ২৮ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

উদ্যোক্তা চায়না রহমানের সফলতার গল্প

ব্যবসা ছড়িয়েছেন নানা দিকে। চায়নিজ রেস্টুরেন্ট ও কমিউনিটি সেন্টার, পারলার, মেয়েদের জন্য জিম ও বুটিক হাউস- সবখানেই সফল তিনি...

শনিবারের সকাল ডেস্ক

উদ্যোক্তা চায়না রহমানের সফলতার গল্প

বিয়ের পর নতুন করে ক্যারিয়ার শুরু করতে অনেকেই পিছিয়ে পড়েন, কেউ কেউ থেমে যান। সেখানে ব্যতিক্রম চায়না রহমান। তার বাড়ি মাদারীপুরে। বিয়ের পর ঢাকায় স্থায়ী হন। ঘরে বসে সময় কাটছিল না। কিছু একটা করতে চাইছিলেন। এক আত্মীয়ের অ্যাডভার্টাইজিং ফার্ম ছিল। সেখানে গিয়ে কাজটা দেখলেন, শিখলেন। আজ থেকে ২০ বছর আগের কথা। ফকিরাপুলে নিজেই শুরু করলেন বিজ্ঞাপনী ফার্ম। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রচারের কাজ শুরু করেন এ ফার্মের মাধ্যমে। সেখানে লাভের মুখ দেখেন শিগগিরই। কয়েক বছর পর শুরু করেন রেস্টুরেন্ট ব্যবসা। মাত্র সাত কি আটজন কর্মী নিয়ে যাত্রা হয় গ্রামীণ চায়নিজ রেস্টুরেন্টের। শনির আখড়ায় এখন সেটিই সবচেয়ে বড় চায়নিজ রেস্টুরেন্ট ও কমিউনিটি সেন্টার। ২০০৯ সালের দিকে এর শুরু বলে জানান চায়না রহমান। তিনি বলেন, ‘চাকরি নয়, নিজেই কিছু করব, এ ভাবনা থেকেই সংসারের পাশাপাশি ব্যবসা শুরু করি। এক দিন চায়নিজ রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে মনে হলো, এমন রেস্টুরেন্ট তো আমিও দিতে পারি। কাজটা চ্যালেঞ্জিং ছিল। প্রথমে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করতে হয়েছে। তবে রেস্টুরেন্ট শুরু করার পর ব্যবসায় উন্নতি দেখতে পেয়েছি। সময়ের ব্যবধানে এখন ১২ হাজার বর্গফুটজুড়ে চায়নিজ রেস্টুরেন্ট ও পার্টি সেন্টারে একসঙ্গে ১ হাজারেরও বেশি মানুষ বসার ব্যবস্থা করেছি।’ রেস্টুরেন্ট ব্যবসা ছাড়াও বুটিকস ও পারলার ব্যবসা রয়েছে তার। সৌন্দর্য সচেতন মেয়েদের জন্য পারলার শুরু করতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হয়েছে বলে জানান তিনি। বলেন, ‘পারলারের দোকান দিতে চাইলে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ি থেকে আপত্তি দেখা দেয়। তখন তাদের এ ব্যবসাটি বোঝাতে অন্য পারলারে নিয়ে যাই। পারলারের পরিবেশ, কাজের ধরন, মেয়েদের নিরাপত্তা ও সুযোগ সুবিধার বিষয়গুলো তাদের বুঝিয়েছি।’ শনির আখড়াতে চায়না রহমানের শুরু করা পারলারটির নাম গ্রামীণ বিউটি পারলার। মাত্র ৫টি চেয়ারে বসার সুযোগ নিয়ে এ পারলার শুরু করেছিলেন। এখন সুবিশাল এই পারলারে ৪০ জনেরও বেশি নারী সৌন্দর্যসেবা নিতে পারেন। এখানে কাজ করেন প্রায় ৩০ জন কর্মী। চায়না রহমান বলেন, ‘ভারত থেকে পারলার বিষয়ক প্রশিক্ষণ নিয়েছি আমি। মাত্র দুজন কর্মী নিয়ে পারলারের দোকানটি শুরু করেছিলাম। পারলারের সঙ্গে মেয়েদের জন্য আলাদা জিমও বানিয়েছি। মাত্র ২ হাজার টাকা দিয়ে মেয়েরা এখানে শরীরচর্চা করতে পারছে।’ এই পারলার থেকে কাজ শেখারও সুযোগ রয়েছে নারীদের। এখান থেকে ট্রেনিং নিয়ে, কাজ শিখে প্রায় ২ হাজার নারী স্বাবলম্বী হয়েছেন। তারা নিজেরাই শুরু করেছেন পারলার ব্যবসা। বুটিকস ব্যবসাতেও সফল হয়েছেন তিনি। ‘আমারা স্টাইল জোন’ নামে বেইলি রোড ও শনির আখড়াতে দোকান রয়েছে তার। বিয়ের শাড়ি ও লেহেঙ্গা থেকে শুরু করে নারীদের উপযোগী সব পোশাক মেলে এ দোকানে। তার নিজের ফ্যাক্টরিতে তৈরি হয় এসব পোশাক। তিনি বলেন, ‘আমার নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে প্রায় ২০ জন কারিগর রয়েছেন। সেখানে এসব পোশাক তৈরি হয়।’ তার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সব মিলিয়ে প্রায় ১০০ জন মানুষ কাজ করছেন। উদ্যোক্তা হিসেবে চায়না রহমানের গল্প অনুপ্রেরণা জোগায়। তিনি মনে করেন নিজের কাজ নিয়ে পরিশ্রমী হলে যে কোনো স্বপ্ন ছোঁয়া সম্ভব। তিনি বলেন, ‘যারা আমাকে দেখে প্রেরণা খোঁজেন তাদের বলব, সৎ ইচ্ছা ও সৎ সাহস থাকলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। এমন মানসিকতা নিয়ে লেগে থাকতে হবে।’ সংসারের কাজের পাশাপাশি বেশ ভালোভাবেই সব ব্যবসা সামলাচ্ছেন তিনি। জানান, ‘আমার স্বামী একজন সরকারি কর্মকর্তা। তিনি আমার সব ব্যবসা সামলাতে সাহায্য করছেন। তার সহায়তা না পেলে এত দূর আসতে পারতাম না। আমার দুই সন্তানও আমার ব্যবসায়িক কাজগুলো নিয়ে প্রশংসা করে। আমার মেয়েও চায় সে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি নয়, নিজেই ব্যবসা শুরু করবে। এসব আমাকে এগিয়ে যেতে শক্তি জোগায়।’ ঢাকার ব্যবসায়িক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আরও একটি বড় রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে চলেছেন চায়না রহমান। তিনি বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িয়েছেন। উদ্যোক্তা হিসেবেও হয়েছেন সফল।  এগিয়ে চলা নারীদের জন্য সফল এক উদাহরণ তিনি।  

সর্বশেষ খবর