শনিবার, ২ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা
বিশ্ব ভ্রমণে কাজী আসমা আজমেরী

বাংলাদেশি পাসপোর্টে ১৩০ দেশ ভ্রমণের রেকর্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশি পাসপোর্টে ১৩০ দেশ ভ্রমণের রেকর্ড

ভ্রমণকন্যা আজমেরী বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা, চায়না রেডিও, টাইম অব ইন্ডিয়া, সুইডেন রেডিও, ব্রায়ান টু, লেবানন টিভি, ডুমা রেডিওসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন  গণমাধ্যমে নিজের গল্প তুলে ধরেছেন। সম্প্রতি ঘুরে গেলেন বাংলাদেশ প্রতিদিন কার্যালয়।  ছবি : জয়ীতা রায়

 

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সবুজ রঙের পাসপোর্ট নিয়ে ১৩০ দেশ ভ্রমণের ইতিহাস গড়লেন কাজী আসমা আজমেরী। এর আগে ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর উজবেকিস্তান সীমান্ত থেকে দাশোগুজ দিয়ে তুর্কমেনিস্তানে পৌঁছে শততম দেশে পা রাখার মাধ্যমে অনন্য রেকর্ড গড়েন এই তরুণী। এরপরও থেমে যাননি। ভ্রমণ চলছেই। মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। কিছু কিছু মানুষ আছেন যারা নিজের স্বপ্নকেও ছাড়িয়ে যান। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পছন্দ করেন। এমনই একজন বাংলাদেশি কাজী আসমা আজমেরী। ১৩০ দেশ ভ্রমণ করার আনন্দ-উল্লাস বয়ে চলছে তার দেহ মনজুড়ে। গত ১৮ মে ১৩০টি দেশ ভ্রমণ সম্পন্ন করেন। ১৩ বছরে এতগুলো দেশ ভ্রমণের পর নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে আমি বিশ্বজয় করেছি। আমার অন্যান্য দেশের পাসপোর্ট নেওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও, আমি তা করিনি। আমি আমার দেশকে ভালোবাসি। প্রচ- ভালোবাসি। বাংলাদেশের মানুষ যাতে বিশ্ব ভ্রমণ করতে পারে এই চলার পথকে সুগম করতেই আমি বাংলাদেশি পাসপোর্ট হাতে ১৩০টি দেশ ভ্রমণ করেছি। এটা খুব সহজ কাজ নয়। প্রসেসিংগুলো অনেক জটিল হয়ে যায়। তবে আমার মনে হচ্ছে এখন আমি একটা যুদ্ধজয় করে নিজের প্রিয় মাতৃভূমিতে এসেছি।’

কাজী আসমা আজমেরী যিনি পাসপোর্ট গার্ল নামে পরিচিত বাংলাদেশ ও বিশ্বে। তাকে পাসপোর্ট গার্ল আখ্যায়িত ও সম্বোধন করেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান-কি মুন। আজমেরী একাধারে একজন বিশ্ব ভ্রমণকারী, চেঞ্জ মেকার ও মোটিভেশনাল স্পিকার। তিনি এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ৬৫০টির বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ৫০ হাজার ছেলেমেয়েকে ভ্রমণের গল্প শুনিয়েছেন। তার এই ভ্রমণের অনুপ্রেরণামূলক গল্প এবং বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্র্যান্ডিং করার চেষ্টা চলছে অবিরাম। খুলনা শহরের রায়পাড়ায় তার পৈতৃকবাড়িতে গড়ে তুলেছেন একটি লাইব্রেরি। এ ছাড়াও পরিবেশ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছেন। তার শততম ভ্রমণের দেশ তুর্কমেনিস্তান। তিনি যে দেশে যান অন্তত একটি করে গাছ রোপণ করেন। আবার ভ্রমণের সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজও করেন একজন দায়িত্বশীল পর্যটক হিসেবে। এই ভ্রমণকন্যা বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা, চায়না রেডিও, টাইম অব ইন্ডিয়া, সুইডেন রেডিও, ব্রায়ান টু, লেবানন টিভি, ডুমা রেডিওসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিজের গল্প তুলে ধরেছেন। এত কম বয়সে এত অর্জন নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণীয়। বিশেষ করে আমাদের দেশের নারীদের জন্য। কাজী আসমা আজমেরীর ইচ্ছা ছিল মুজিববর্ষে ১ লাখ ছেলেমেয়েকে অনুপ্রাণিত করবেন বিশ্বজুড়ে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে তার স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয়নি। কভিডের প্রাক্কালে বাংলাদেশে বাবা-মার সঙ্গে দেখা করতে এসে আটকে যান। ফলে নিউজিল্যান্ড রেডক্রসের চাকরিটাও হারাতে হয়। গত মে মাস থেকেই কাজ করছেন একটি ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্ট অনলাইনে। কিন্তু তাতে তিনি দমে যাননি।

করোনাকালীন চেষ্টা করেছেন দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াতে। ৫০০ পরিবারকে করোনাকালীন খাদ্য সহায়তাসহ সার্বিক সহযোগিতা করেছেন ভ্রমণকন্যা। দেশ ভ্রমণ কীভাবে শুরু হলো জানতে চাইলে কাজী আসমা আজমেরী বলেন, ‘ছোটবেলায় মায়ের সঙ্গে স্কুলে আসা-যাওয়া করতাম। এক দিন স্কুল ছুটির পর মা নিতে এলেন না। অবশেষে আমি একাই সাহস করে বাসার উদ্দেশে হাঁটা শুরু করলাম। হাঁটছি আর তাকিয়ে দেখছি আকাশটাকে। আকাশ দেখে মনে হলো, আকাশের শেষ সীমানা দেখব। কিন্তু আকাশের শেষ সীমানা আর দেখা যায় না। সেদিন বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হাঁটছিলাম। পরে খুলনা কাজীবাড়ির ছোট্ট মেয়ে আমাকে দেখে এলাকাবাসী ধরে নিয়ে বাসায় পৌঁছে দেন। তারপর থেকে দেশ ভ্রমণ করার ইচ্ছাটা লালন করি। আকাশের সীমানা খুঁজে চলেছি। ছাত্রাবস্থায় একবার আমার বন্ধুর মা আমাকে বলেছিলেন, তুমি একজন দুর্বল ও যোগ্যতাহীন মেয়ে। আমার ছেলে ২০ দেশ ঘুরেছে। আর তুমি মাত্র দুটো দেশ ঘুরেছো। এতেই তোমার অহংকার। বন্ধুর মায়ের কথাগুলোকে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। আমিও দেশ ভ্রমণ করে দেখিয়ে দেব। কমপক্ষে ৫০টি দেশ ঘুরব। ৫০টি দেশ ভ্রমণ করে থেমে থাকিনি। আমি ঘুরছি। আজ আমি ১৩০টি দেশ ভ্রমণ করে ফেলেছি। ইচ্ছা আছে পৃথিবীর সব দেশ ভ্রমণ করব। শিগগিরই ১৫০টি দেশ ভ্রমণ করে পৃথিবীকে দেখিয়ে দিতে চাই- আত্মবিশ্বাস থাকলে জয় করা যায় সবকিছু।

সর্বশেষ খবর