শনিবার, ২ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর

দিনাজপুরে অনেক গ্রামে ঐতিহ্যের মাটির ঘরের কদর এখনো কমেনি। সেখানে নজর কাড়া মাটির একতলা কিংবা দোতলা বাড়ি দেখা মেলে এখনো।

মাটির ঘর যাদের আছে তারা প্রতি বছরই মাটির প্রলেপ দেয় কিংবা রংবেরঙের নকশা-আলপনা এঁকে দৃষ্টিনন্দন করে তোলেন। অনেকে আবার চুনকামসহ বিভিন্ন রংও করেন। অনেকের বাড়ির দেয়ালের নকশা প্রথম দেখায় ওয়ালপেপার বা টাইলস বলে ভ্রম হতে পারে। অথচ এসব নকশা কোনো পেশাদার কারিগর বা শিল্পীর হাতের নয়, বাড়ির মা-বোনদের মনের ভিতরে লুকিয়ে থাকা শৈল্পিক সত্তা দিয়ে নিজ হাতে তা ফুটিয়ে তুলেছেন। তবে এখনো দিনাজপুরের বিরামপুরের খানপুর ইউপির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাঁওতাল অধ্যুষিত ধানজুড়ি গ্রামে শতাধিক বসতঘরের অধিকাংশই নকশা আর রঙের আলপনায় ঐতিহ্যবাহী মাটির বাড়ি দেখা যায়। অনেক পর্যটক এদিকে এলে এই সাজানো গ্রামটি দেখতে ভিড় করেন।

একসময় এ মাটির ঘর ঠান্ডা বলে এটিকে গরিবের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরও বলা হতো। গরমের সময় আরামদায়ক। তাই অনেক গ্রামে বিত্তশালীদেরও দোতলা মাটির ঘর ছিল। অনেক গ্রামে এখনো রয়েছে। তবে মাটির ঘর দেখা গেলেও আগের সেই ধান-চাল রাখার জন্য মাটির তৈরি গোলা ঘর ও কুঠি আর দেখা যায় না। অবশ্য দিন দিন মাটির ঘরও কমতে শুরু করেছে।

সদরের মহররমপুরের গাজী সুলতান জানান, দিনাজপুরে সাম্প্রতিক সময়ের বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে এসব মাটির ঘরের বেশির ভাগ হয় ভেঙে গেছে, না হয় ফেটে গেছে। আবার আধুনিকতার ছোঁয়ায় অনেকে হয়তো চেষ্টা করছেন মাটির ঘর আর না করার। কিন্তু একটু দরিদ্র পরিবার আবার ওই মাটির ঘর তৈরি করেছে, আবার কেউ করবে। মাটির সহজলভ্যতা, এর প্রয়োজনীয় উপকরণ আর শ্রমিক খরচ কম হওয়ায় মাটির তৈরি ঘর বানাতে আগ্রহী। আউলিয়াপুর গ্রামের মোসাদ্দেকসহ কয়েকজন জানান, সাধারণত এটেল বা আঠালো মাটি দিয়ে পানির সঙ্গে মিশিয়ে কাদায় পরিণত করা হয়। এরপর ২০-৩০ ইঞ্চি চওড়া দেয়াল তৈরি করা হয়। প্রতিটি ঘর তৈরিতে মাসখানেক সময় লেগে যায়। কারণ একেবারে দেয়াল তোলা যায় না। কিছু দেয়াল তোলার পর শুকাতে হয়। ১০-১৫ ফুট উঁচু দেয়ালে কাঠ বা বাঁশের সিলিং তৈরি করে তার ওপর খড় বা চীনের ছাউনি দেওয়া হয়। অনেকে বাঁশ, মাটি, টিন সংগ্রহ করে নিজেরাই মাটির ঘর তৈরি করেন। এক্ষেত্রে সময় বেশি লাগে। তবে খরচ কম পড়ে। শ্রমিক না নিলে কমপক্ষে ১৫-১৬ হাজার টাকা খরচ হয়। এই মাটির ঘর ভূমিকম্প বা বন্যা না হলে এর স্থায়িত্ব শতবছরও হতে পারে বলে তারা জানান।

ধানজুড়ি গ্রামের হেমব্রমসহ অনেকেই বলেন, ধানজুড়ি গ্রামের সব বাড়িই মাটি দিয়ে তৈরি। আমাদের জনগোষ্ঠীর পূর্বপুরুষদের আমল থেকেই এ মাটির বাড়ি নির্মাণ করে আসছি এবং এখনো মাটির বাড়িতে আছি। এই মাটির বাড়িগুলোতে তেমন আর্দ্রতাও থাকে না, আর মাটির বাড়ি তৈরিতে খরচও কম হয়। এ ছাড়াও ইটের বাড়ির তুলনায় মাটির বাড়ি গরমেও অনেকটা এয়ারকন্ডিশনের মতো থাকে। এ কারণে ইটের বাড়ির চেয়ে মাটির বাড়িতে বেশি আরাম।

 

সর্বশেষ খবর