শনিবার, ২৩ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

তরুণ চিকিৎসকদের আঙিনা ‘ওয়াইস্যাব’

অতি জরুরি পদ্ধতি নিয়ে নবীন-তরুণ চিকিৎসক এবং মেডিকেল শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে চিকিৎসকভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইয়াং সোশ্যাল অ্যাকটিভিজম বোর্ড (ওয়াইস্যাব)।

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

তরুণ চিকিৎসকদের আঙিনা ‘ওয়াইস্যাব’

হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হয়ে হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। এমন স্পর্শকাতর সময়ে কী করতে হবে, কোথায় নিয়ে যেতে হবে- তা নিয়ে হতবিহ্বল অবস্থা তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জরুরি চিকিৎসা পদ্ধতি কার্ডিও-পালমোনারি রিসাসিটেশন (সিপিআর)। সিপিআর পদ্ধতিতে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাঁচানো যায় জীবন।

এমন অতি জরুরি পদ্ধতি নিয়ে নবীন-তরুণ চিকিৎসক এবং মেডিকেল শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে চিকিৎসকভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইয়াং সোশ্যাল অ্যাকটিভিজম বোর্ড (ওয়াইস্যাব)। একই সঙ্গে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জন্য নেওয়া হয় পেশাগত ক্যারিয়ার ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং নেতৃত্ব বিকাশমূলক নানা কর্মসূচি। সঙ্গে থাকে অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান। নানা কর্মসূচি এবং উদ্যোগের ফলে সংগঠনটি ক্রমেই তরুণ-নবীন চিকিৎসকদের নির্ভরযোগ্য আঙিনায় পরিণত হচ্ছে। রূপ নিচ্ছে চিকিৎসকদের প্ল্যাটফরমে। তাছাড়া করোনাকালে অনলাইনে করোনার নমুনা পরীক্ষার ফল দিয়ে সবার নজর কাড়ে। ২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে  চমেক, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজ, সিআইএমসি, সিআইডিসি, সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ, ইউএসটিসি ও মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজসহ দেশের বেশকিছু মেডিকেল কলেজের ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী সম্পৃক্ত। জানা যায়, সংগঠনটি ইতোমধ্যে ২ শতাধিক মেডিকেল শিক্ষার্থী ও তরুণ চিকিৎসককে দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ (হ্যান্ডস অন সিপিআর) প্রদান, দেশের সরকারি-বেসরকারি ৩২টি মেডিকেল কলেজের প্রায় ৩৫০ জন তরুণ চিকিৎসককে মেডিকেল ক্যারিয়ার সম্মেলন আয়োজন এবং কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ (সিএইচডি) ক্যাম্প আয়োজনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিভাগের প্রায় অর্ধশতাধিক জন্মগত হৃদরোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা, পরামর্শ প্রদান ও তাদের পরিবারে সচ্ছলতা বৃদ্ধিতে আয় বৃদ্ধিমূলক উপহার প্রদান করে। ওয়াইস্যাবের ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট ডা. হামিদ হোছাইন আজাদ বলেন, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে সুদূরপ্রসারী চিন্তা-পরিকল্পনা নিয়ে ওয়াইস্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়। ইতোমধ্যে চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যারিয়ার এবং দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণের আয়োজন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে মোবাইল হেলথ ক্যাম্প, দেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের মধ্যে নেটওয়ার্ক গঠন ও সমন্বয় সাধনে নানা কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে ৭০টি মোবাইল মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত প্রায় ৫ হাজার মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা ও তাদের মাঝে ওষুধ বিতরণ করা হয়। তাছাড়া নিয়মিত আয়োজন করা হচ্ছে রোড টু হেলথ, স্কুল হেলথ, অঙ্গনা ও মেডিসিন ব্যাংক শীর্ষক স্বাস্থ্য কর্মসূচি। ওয়াইস্যাবের কমিউনিকেশন অ্যান্ড নেটওয়ার্কিং কো-অর্ডিনেটর সাবরিনা মোস্তাফা সাকি বলেন, করোনার প্রথম ঢেউয়ে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সমন্বয়ে অনলাইনে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট দেওয়া হয়েছিল। তাতে মানুষ অনেক বেশি উপকৃত হয়েছিল। তাছাড়া করোনাকালীন অনলাইনে স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিকিৎসকদের আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর এবং ওয়াইস্যাব চিকিৎসকদের বিনামূল্যে টেলিমেডিসিন সেবা দেওয়া হয়।

জানা যায়, ওয়াইস্যাব বছরজুড়েই স্বাস্থ্যসেবা-কেন্দ্রিক নানা কর্মসূচির আয়োজন করে থাকে। করোনায় শহীদ চিকিৎসকদের পরিবার ও সম্মুখসারিদের সম্মাননা প্রদান, ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতায় আলোচনা অনুষ্ঠান, ব্রেস্ট ক্যান্সার স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম আয়োজন, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ বিষয়ে তরুণ চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের গবেষণামূলক কর্মসূচি, অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার প্রতিরোধ এবং থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে তরুণ-তরুণীদের মাঝে সচেতনতাসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

সর্বশেষ খবর