শনিবার, ২৩ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

বিলুপ্তির পথে গ্রামবাংলার কুঠি ও গোলা

বর্তমান সময়ে নানা ধরনের ফসল উৎপাদন হচ্ছে। গৃহস্থরা উৎপাদিত ফসল মাঠ থেকে ঘরে না তুলেই বাড়ির বাইরে ব্যবসায়ীদের ঘরে দিয়ে আসছে। ফলে ধান সংরক্ষণে আর ওইসব কুঠি বা মটকার ব্যবহার গৃহস্থদের প্রয়োজন হচ্ছে না

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

বিলুপ্তির পথে গ্রামবাংলার কুঠি ও গোলা

গ্রাম-বাংলার ধান-চাল সংরক্ষণের কুঠি বা গোলা কালের বিবর্তনে আজ হারানোর পথে। যদিও কোথাও কোথাও এখনো কিছু বাড়িতে এটি দেখা যায়। দিন দিন মানবজীবনের মানোন্নয়ন ঘটায় এবং ফসল উৎপাদনের ধরন পরিবর্তন হওয়ায় বর্তমান সময়ে সেগুলোর ব্যবহার না থাকায় এখন বিলুপ্তপ্রায়।

এক সময় দিনাজপুরের সদর, নবাবগঞ্জ, বীরগঞ্জ, পার্বতীপুর, বিরলসহ বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে দেখা যেত ধান কিংবা চাল সংরক্ষণের কুঠি ও গোলা। এই কুঠি বা গোলাকে অনেকে মটকাও বলে থাকে। এক সময় গৃহস্থরা তাদের উৎপাদিত ধান রাখার জন্য বাঁশের বাতা দিয়ে তৈরি করত যে ঘর, সেটাকেই বলা হতো গোলা। আর মটকা চাল রাখার জন্য তৈরি করা হতো ঘরের মধ্যে একইভাবে। আবার অনেকেই খড় ও মাটি দিয়ে তৈরি করত কুঠি। মটকা বা কুঠিতে ধান কিংবা চাল সংরক্ষণ করলে তাতে যেমন আলো বাতাস পাওয়ার সুবিধা, তেমনি ইঁদুরের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যেত।

নবাবগঞ্জের বল্লভপুর গ্রামের মজিবর রহমানের বাড়ির উঠানে দেখা মিলল কুঠি বা গোলা। তিনি এখনো কুঠিতে ধান চাল সংরক্ষণ করে থাকেন। মজিবর রহমান, মতিউর রহমানসহ অনেকে জানান, এক সময় গ্রামগঞ্জের মানুষ মটকা বা কুঠির ব্যবহার করলেও এখন আর করে না। কারণ ওই সময় জনসংখ্যা কম ছিল। বাড়িঘর বেশির ভাগই ছিল মাটির তৈরি। ওই সময় গৃহস্থরা এখনকার মতো ধান-চাল বিক্রি করত না। ধান-চাল নিজেদের প্রয়োজনেই ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করে রাখত। ফসল উৎপাদনও কম ছিল।

তবে বর্তমান সময়ে নানা ধরনের ফসল উৎপাদন হচ্ছে। গৃহস্থরা উৎপাদিত ফসল মাঠ থেকে ঘরে না তুলেই বাড়ির বাইরে ব্যবসায়ীদের ঘরে দিয়ে আসছে। ফলে ধান সংরক্ষণে আর ওইসব কুঠি বা মটকার ব্যবহার গৃহস্থদের প্রয়োজন হচ্ছে না। তাছাড়াও এখন ইটের তৈরি বাড়িঘরের সংখ্যা বেড়েছে। শহরের মতো করে গ্রামগঞ্জেও তৈরি করা হচ্ছে বাড়িঘর। ওইসব বাড়িঘরে গৃহস্থরা খাবারের জন্য শুধু চাল সংরক্ষণ করে থাকে। সেটাও করে থাকে লোহার তৈরি ড্রামসিটের দ্বারা ড্রামে। অবশ্য এসব চাল সংরক্ষণে বিভিন্ন  কোম্পানি এ ধরনের প্লাস্টিক পাত্র বা জার তৈরি করে বিক্রি করছে। যা সহজেই মানুষ প্রয়োজনে ক্রয় করতেও পারছে, যা আগে সম্ভব ছিল না। এর ফলে গোলা বা কুঠি বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর