শনিবার, ২৩ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

‘অটো শিমে’ স্বপ্ন বুনছে পাবনার কৃষক

এস এ আসাদ, পাবনা

‘অটো শিমে’ স্বপ্ন বুনছে পাবনার কৃষক

যে দিকে দুই চোখ যায় মাঠের পর মাঠ চোখে পড়বে শিমের খেত। শিমের লতা-পাতার সবুজ সমারোহের মাঝে গোলাপি সাদা ফুল যে কারও নজর কাড়বে। এর মধ্যেই কিছু কিছু গাছে শিম ধরতে শুরু করেছে। আগাম অটো শিমে এখন স্বপ্ন বুনছে পাবনার আটঘরিয়া-ঈশ্বরদী মুলাডুলি ইউনিয়নের কৃষক।

আগাম ‘অটো শিম’ চাষে এখানকার কৃষকরা প্রতিবারই লাভবান হয়। এবারও লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছে তারা। তাই তো ‘অটো শিমে’র পরিচর্যায় চাষিরা মহাব্যস্ত। খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে চাষিরা এখন শিমের খেতে ফুল ও ফলের পরিচর্যায় সময় পার করছে।

সরেজমিন মুলাডুলি, দাশুড়িয়া, খিদিরপুর ও দেবোত্তর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, দেশের অন্যতম শিম উৎপাদনকারী হিসেবে পরিচিত এই এলাকায় এখন বেশ জোরেসোরেই চলছে আগাম শিম চাষ। জৈষ্ঠ্যের মাঝামাঝিতে আগাম শিম চাষের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন চাষিরা। বর্ষা মৌসুমের বৃষ্টির পানি থেকে শিম গাছকে রক্ষা করতে জমিতে ১২ থেকে ১৬ ইঞ্চি উঁচু করে তৈরি করা হয়েছে বিট বা টিবি। সে উঁচু বিটে তারা অটো শিম চাষ করেছে। ‘অটো’ জাতের শিম গাছ ইতোমধ্যে মাচায় উঠে ফুলে ফুলে ভরে গেছে। আগামী ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যেই পুরোদমে এসব শিম বাজারে উঠবে। অটো শিম চাষে প্রতি বছরই সফলতা পান এখানকার চাষিরা। তাই প্রতি বছরই  শিমের আবাদ বাড়ছে। শিম চাষকে কেন্দ্র করে ঈশ্বরদীর মুলাডুলিতে গড়ে উঠেছে বিশাল বাজার। শিমের মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ ট্রাক শিম ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ দেশের জেলা শহরগুলোতে যায়।

পারখিদিরপুর গ্রামের শিম চাষি আবুল হোসেন জানান, আড়াই বিঘা জমিতে তিনি শিমের আবাদ করেছেন। প্রতি বিঘা আবাদে খরচ হয় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। আবাদ ভালো হলে বিঘা প্রতি শিম বিক্রি হবে ১ লাখ ২০ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, গত বছরই আগাম জাতের অটো শিম বাজারে প্রথম বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা কেজি দরে। ফলন ভালো হলে আর কৃষক ন্যায্য দাম পেলে লাভবান হবে। বেতবাড়িয়া গ্রামের কৃষক ইউনুস আলী জানান, আগাম জাতের শিম চাষে ব্যাপক লাভবান হয়েছেন এখানকার কৃষকরা। শিম চাষে উৎসাহ বাড়ছে কৃষকদের। মুলাডুলি দৈনিক সবজি বাজার সমিতির উপদেষ্টা আমিনুল ইসলাম বাবু জানান, আগাম জাতের শিম চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এখনো শিম বেচাকেনা শুরু হয়নি। আশা করছি ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যেই আগাম জাতের শিম বাজারে আসবে।

মুলাডুলি ইউনিয়নের কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা মো. আলিউজ্জামান জানান, অটো, ঘৃতকাঞ্চন ও রূপসী নামের আগাম জাতের শিম এখানে চাষাবাদ বেশি হয়। আগাম জাতের শিমে চাষিরা লাভবান হলেও এ ফলনে সার ও কীটনাশক মাত্রাতিরিক্ত প্রয়োগ করতে হয়। ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় ১১৩০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়। এর মধ্যে শুধু মুলাডুলি ইউনিয়নে ৮৫০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়। ২০২১ সালে এ উপজেলায় ৮১ কোটি ৩৬ লাখ টাকার শিম বিক্রি হয়েছে। পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, চলতি মৌসুমে পাবনায় ১৫০ থেকে ২০০ কোটি টাকার শিম বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর