শনিবার, ৬ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
গড়ে তুলেছেন বাণিজ্যিক খামার

হুমায়ুনের শখের পাখি পালন

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

হুমায়ুনের শখের পাখি পালন

শখের বসে পাখি পালন শুরু করে এখন লাখ লাখ টাকার বাণিজ্যিক খামারে পরিণত হয়েছে। বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শত শত বেকার যুবক নিজেকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে পাখির খামার গড়ে তুলেছেন। বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সাধুবাড়ী গ্রামের হুমায়ুন কবির তেমনি এক তরুণ উদ্যোক্তা। প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকার পাখি বিক্রি করেন। এ তিনি আয় করছেন ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। তার মতো খামারে পালিত পাখি কেনাবেচা করে একেকজন যুবক প্রতি মাসে অর্ধলাখ টাকা আয় করে নিজেদের সংসার পরিচালনা করছেন। সফল যুবকদের সচ্ছলতা থেকে অন্য স্থানীয়রাও পাখির খামার গড়ে তুলতে শুরু করেছেন।

জানা যায়, বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সাধুবাড়ী গ্রামের হুমায়ুন কবিরের রয়েছে বিশাল পাখির খামার। তার বাড়িতে ঢুকতেই পাখির কলরব। হুমায়ুন কবির পাখিদের পরিচর্যা করছেন। বাড়ির মধ্যে একাধিক বড় বড় শেডে এসব পাখির বাসস্থান। সেখানে লাভবার্ড, বাজরিগার, ককাটেল, জাভা, বিদেশি ঘুঘু, ফিঞ্চ, ডায়মন্ড, কবুতরসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় এক হাজার পাখি রয়েছে। যার বর্তমান বাজারমূল্য ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা। সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা মূল্যের পাখিও রয়েছে তার খামারে। এসব পাখি অনলাইন ও মুঠোফোনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বিক্রি করে থাকেন।

হুমায়ুন কবির জানান, ছোটবেলা থেকেই পাখি পালনে শখ ছিল তার। সেই শখ থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি শুরু করেন পাখি পালন। এমনকি শিক্ষাজীবন শেষ হলেও চাকরির পিছে না ঘুরে পাখির খামার গড়ার পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী শিক্ষক বাবার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়ে বাড়িতেই শৌখিন খামার বানিয়ে দুই জোড়া বাজরিগার ও কিছু ফিঞ্চ পাখি কিনেন। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি হুমায়ুন কবিরকে। ধীরে ধীরে শৌখিন পাখির খামারটি বাণিজ্যিক খামারে পরিণত হয়। বর্তমানে তার খামারে সহস্রাধিক বিভিন্ন প্রজাতির পাখি রয়েছে। শখের এই খামার থেকেই সব খরচ বাদে প্রতি মাসে আয় করছেন ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। তার খামার দেখে এবং পরামর্শ নিয়ে অনেকেই পাখির বাণিজ্যিক খামার গড়ছেন। পাখির রাজ্যে বগুড়ার শেরপুরের হুমায়ুন কবিরের নাম বার্ডস কিং হিমু। বিশেষ করে ইউটিউব ও অনলাইন জগতে এই নামেই তাকে চেনেন সবাই।

২৬ বছর বয়সী যুবক হুমায়ুন কবির আরও জানান, বিগত ২০১০ সালে তার শখের পাখির খামারটি বাণিজ্যিক খামারে পরিণত হয়। এতে ব্যাপক সফলতাও পেয়েছেন তিনি। প্রতি মাসে পাখিদের জন্য ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার খাবার কিনতে হয়। আর পাখি বিক্রি করে থাকেন ১ লাখ ১০ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। সব খরচ বাদে নিট ষাট থেকে সত্তর হাজার টাকা লাভ হয়। তাই শহরে আরেকটি বড় খামার গড়ার কাজ শুরু করেছেন। সেখানে আরও বেশি দামি দামি পাখি তোলার পরিকল্পনা রয়েছে তার। ভবিষ্যতে এ ব্যবসার আরও প্রসার ঘটাতে চান উল্লেখ করে খামারি হুমায়ুন কবির বলেন, আগামীতে এসব পাখির বাচ্চা উৎপাদনের চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ বিভাগের আরও সহযোগিতা এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও প্রয়োজন।

পাখিদের অসুখ-বিসুখ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাখিদের শীতজনিত রোগ হয়ে থাকে। যেমন রানীক্ষেত। তখন স্থানীয় প্রাণিসম্পদ দফতরসহ অনলাইনে বিভিন্ন প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে থাকেন। আর এই দীর্ঘ ১৪ থেকে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতায় মোটামুখি নিজেই পাখিদের রোগবালাই সম্পর্কে জেনে গেছেন। তাই জটিল কোনো রোগ ছাড়া ছোটখাটো বিষয়ে কারও কাছে যেতে হয় না। বরং অনেক খামারিকে তিনি নিজেই পরামর্শ দিয়ে থাকেন। চাকরির পিছে না ছুটে এভাবেই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন তার পূরণ হয়েছে বলে জানান তিনি।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের সাধুবাড়ী গ্রামের শিক্ষক আবদুল কাদের মজনুর ছেলে হুমায়ুন কবির পাখির সফল খামারি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি এখন এই উপজেলার শিক্ষিত বেকার নারী-পুরুষের কাছে মডেল। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে তার মতো অন্তত দুই শতাধিক নারী-পুরুষ বাণিজ্যিক পাখির খামার গড়ে তুলেছেন। স্বপ্ন দেখছেন স্বাবলম্বী হওয়ার।

এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়া ব্যক্তিরাও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শৌখিন পাখির খামার গড়ে তুলেছেন। অবসর সময় কাটানোর পাশাপাশি বাড়তি আয়ের মাধ্যম হিসেবে এটিকে বেছে নিয়েছেন। তাদেরই আরেকজনের নাম মাহফুজার রহমান। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে শহরের বাগানবাড়ি এলাকায় অবস্থিত বাসার ছাদেই গড়ে তুলেছেন শৌখিন পাখির খামার। মাত্র দুই বছরের মধ্যেই সেটি বাণিজ্যিক খামারে পরিণত হয়েছে। তার খামারেও রয়েছে অন্তত ১৫ প্রজাতির বিভিন্ন বিদেশি পাখি। প্রতি মাসে ৯০ থেকে ১ লাখ টাকার পাখি বিক্রি করে থাকেন। তিনিও মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় করেন ওই খামার থেকে।

একইভাবে উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের মাকোরকোলা গ্রামের মাহবুব হোসেন, পৌরশহরের স্যানালপাড়ার স্কুলছাত্র লাবিব হাসান, বিকাল বাজারের কলেজছাত্র আবু রায়হান রনি, খন্দকার টোলার ফাহিমসহ অনেকেই পাখির খামার গড়ে ইতোমধ্যে সফলতা পেয়েছেন। মিলেছে অর্থনৈতিক মুক্তি। তাদের পরিবারে এনে দিয়েছেন সচ্ছলতা।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতর সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ২০০-এর মতো শৌখিন পাখির বাণিজ্যিক খামার রয়েছে। এ ছাড়া আরও দুই শতাধিক বাসাবাড়িতে শৌখিন পাখি পালন করা হচ্ছে। সবমিলিয়ে এ খাতে সহস্রাধিক পরিবারের লোকজনের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

সর্বশেষ খবর