শনিবার, ৬ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
এগুলো বিক্রি করেই চলে জীবন

পলোর গ্রাম পলোডাঙ্গা

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

পলোর গ্রাম পলোডাঙ্গা

বছরজুড়েই চলে পলো তৈরির কাজ। তবে বর্ষা মৌসুমের শুরুতে কাজের ব্যস্ততা বাড়ে পলো কারিগরদের। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পলো কিনতে চলে আসেন ব্যবসায়ীরা। ফলে ফরিদপুরের গেরদা ইউনিয়নের পলো ছড়িয়ে যাচ্ছে দেশের আনাচে-কানাছে। দীর্ঘ চার যুগেরও অধিক সময় ধরে চলছে পলো তৈরির কাজ। ফলে গ্রামের আগের নামটি একেবারেই বদলে গেছে, বুকাইল গ্রামটি এখন সবার কাছে ‘পলোডাঙ্গা’ গ্রাম নামেই বেশি পরিচিত। এ গ্রামটিতে দেড় শতাধিক পরিবার পলো তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এই পলো শুধু মাছধরার কাজেই নয়, বাড়ির সৌন্দর্য বর্ধনেও ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই এই গ্রামের তৈরিকৃত পলো হাওরাঞ্চলসহ দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে হাওর অঞ্চলেই বেশি যাচ্ছে বোকাইল গ্রামের তৈরি পলো।

ফরিদপুর সদর উপজেলার গেরদা ইউনিয়নের বোকাইল গ্রামে চার যুগেরও অধিক সময় ধরে বাঁশের শলা দিয়ে পলো তৈরির কাজ চলছে। বর্তমানে এই গ্রামের দেড় শতাধিক পরিবার সারা বছরই এই পলো তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এই গ্রামের প্রতিটি ঘরে কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত নানা বয়সী মানুষ পলো তৈরির কাজ করে থাকেন। প্রতিটি পরিবারের তিন/চারজন সদস্য সপ্তাহে ৫০ থেকে ৯০টি পলো তৈরি করেন। এই পলো হাঁস-মুরগি লালন-পালন থেকে শুরু করে মাছ ধরার কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এ ছাড়া বাড়ির সৌন্দর্য বর্ধনেও এই বাঁশের তৈরি ছোট ছোট পলো তৈরি করা হয়। বর্তমানে বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরার জন্য চাহিদা থাকায় এই পলো তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। তবে পুরুষের পাশাপাশি গ্রামের মহিলারাও সারা দিন পলো তৈরি করেন আর সপ্তাহ শেষে বাড়ির পুরুষ সদস্যরা তৈরি করা পলো হাটে নিয়ে বিক্রি করে থাকেন। বাজারে প্রকারভেদে একেকটি পলো বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়।

এ গ্রামে যশোরের শার্শার জাফর মোল্লা প্রতি মাসেই পলো কিনতে আসেন। তিনি জানান, গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে তিনি পলো কিনেন। ২০০ থেকে ২৫০ টাকা করে একেকটি পলো কিনে তা ৫০ টাকা লাভে বাজারে বিক্রি করে থাকেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এ গ্রামে পলো কিনতে আসেন বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা ফরিদ হোসেন। তিনি বলেন, আগে এ গ্রামে কয়েকটি ঘর ছিল পলো তৈরি করত। এখন এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই পলো তৈরি হয়। ফলে এ গ্রামের নামই পাল্টে গেছে। পলো তৈরির সঙ্গে জড়িত বোকাইল গ্রামের ইউসুফ হোসেন বলেন, বড় আকারের একটি বাঁশ কিনতে খরচ পড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। প্রতিটি বাঁশ দিয়ে তিন থেকে চারটি পলো তৈরি করা যায়।

সুতা, গুনা ও অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে একেকটি পলো বিক্রি করে ১০০ থেকে ২০০ টাকা থাকে। প্রতিদিন গড়ে ৮-১০টি পলো তৈরি করা যায়। বোকাইল গ্রামের করিম মাতুব্বর, বাদশা শেখ জানান, পলো তৈরি করতে অনেকেই বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নেন। ফলে তারা অনেক সময় পলো বিক্রি করে বেশি একটা লাভ করতে পারেন না। সরকার যদি সহায়তা করত তাহলে পলো তৈরি করে গ্রামের মানুষ স্বাবলম্বী হতে পারত।

উন্নতমানের পলো তৈরিতে আগ্রহী কারিগরদের প্রশিক্ষণসহ আর্থিক সহযোগিতার কথা জানান ফরিদপুর বিসিকের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. রফিকউল্লাহ। তিনি বলেন, ‘অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় ফরিদপুরের বোকাইল গ্রামের পলো বেশ উন্নতমানের। ফলে এ গ্রামের পলোর চাহিদা রয়েছে। বিসিক সব সময় এসব ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পকে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর