শনিবার, ২০ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
চা-শ্রমিক মাকে নিয়ে আবেগঘন পোস্ট

চাকরি পাচ্ছেন সেই রবি

শনিবারের সকাল ডেস্ক

চাকরি পাচ্ছেন সেই রবি

হতদরিদ্র এক চা-শ্রমিক মায়ের সন্তান সন্তোষ রবিদাস অঞ্জন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্নাতকোত্তর পাস করে তিনি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন।  নামমাত্র মজুরি পেয়ে খেয়ে-না খেয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে সন্তানকে মানুষ করার প্রাণান্ত চেষ্টা করেন তার মা কমলি রবিদাস। সম্প্রতি চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা করার আন্দোলনের জেরে মাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট লেখেন সন্তোষ রবিদাস অঞ্জন। মায়ের এই সংগ্রামমুখর জীবনের গল্প সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়।  মৌলভীবাজারের সেই সন্তোষ এবার চাকরি পেতে যাচ্ছেন। বিষয়টি তিনি নিজেই গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। রবি বলেন,  ‘স্নাতকোত্তর শেষ করার পর বিসিএসসহ বিভিন্ন ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা দিয়েছি। প্রাইমারি পরীক্ষায় লিখিততে উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক পরীক্ষাও দিয়েছি। কিন্তু পরীক্ষার ফলই প্রকাশ হয়নি। আমার পোস্ট ভাইরাল হওয়ার পর জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাকে চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, আমার সঙ্গে জেলা প্রশাসন থেকেও যোগাযোগ করা হয়েছে। হয়তো কোনো উচ্চবিদ্যালয়ে খন্ডকালীন শিক্ষকতার প্রস্তাব থাকতে পারে। আগামী রবিবার বাড়ি গেলে জানতে পারব। এ ছাড়া আরও কিছু ব্যক্তি ও কোম্পানির পক্ষ থেকে চাকরি দিতে বায়োডাটা চাওয়া হয়েছে।’ তার চাকরির খবর শুনে খুশিতে আত্মহারা তার মা। ছেলের চাকরি হলে অবশেষে সুখের দেখা পাবেন তিনি। বুধবার সকালে সরকারি খাদ্যসহায়তা নিয়ে সন্তোষদের বাড়ি যান কমলগঞ্জের ইউএনও সিফাতউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সংবাদ প্রকাশের পর ডিসি স্যার আমাকে এই মা-ছেলের ব্যাপারে খোঁজ নিতে বললেন। তাঁদের বাসায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে চাল-ডালসহ কিছু খাবার দিয়েছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁর মায়ের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তাও দিয়েছি। সন্তোষকে আপাতত খন্ডকালীন কোনো চাকরি দেওয়া যায় কি না, সে চেষ্টা করছি। আশা করছি, আগামী রবিবার সুখবরটা দিতে পারব।’ মৌলভীবাজারের শমসেরনগরে ফাঁড়ি কানিহাটি চা বাগানের এক শ্রমিক পরিবারে জন্ম সন্তোষ রবিদাস অঞ্জনের। জন্মের ছয় মাসের মধ্যে বাবাকে হারান তিনি। মা কমলি রবিদাস চা বাগানের শ্রমিক। তখন মজুরি পেতেন দৈনিক ১৮ টাকা। সেই সময় ছেলেকে অন্যের বাসায় রেখে তিনি চলে যেতেন চা বাগানে।

 

ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন সন্তোষ। ২০১৩ সালে ভর্তি হন ঢাকার বিএএফ শাহীন কলেজে। সন্তোষের মায়ের মজুরি ছিল তখন ১০২ টাকা। তিনি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ছেলের ভর্তির টাকা, ইউনিফর্ম আর বই-খাতা কিনে দিয়েছিলেন। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ছিল সন্তোষের এইচএসসির নিবন্ধন। তাঁর মা কমলি রবিদাস তখন ৫০ টাকার একটি নোট দিয়ে চোখের জল ফেলতে ফেলতে বলেছিলেন, ‘দেহি, কেউ ধার দেয়নি রে বাপ।’ কলেজের এক শিক্ষকের কাছ থেকে ধার নিয়ে তখন নিবন্ধন ফি দেওয়া হয়। এইচএসসির পর ভর্তি পরীক্ষার কোচিংয়ের জন্য ফের ঋণ নিলেন ব্যাংক থেকে। লোনের কিস্তি পরিশোধে বাসা থেকে অনেক দূরে গিয়ে বালু শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। এভাবে খেয়ে না খেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে পড়ার সুযোগ পেলেন সন্তোষ।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর