শনিবার, ২০ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
মজার ছলে মহাকাশ দেখা

দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র

মানিক মুনতাসির, শ্রীপুর (গাজীপুর) থেকে ফিরে

দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র

পিচঢালা পাকা রাস্তা থেকে নেমে প্রায় ২ কিলোমিটার ইট বিছানো সরু মেঠোপথ। যেখানে গিয়ে ঠেকেছে সেখানে গজারির বনের মাঝস্থলে ছোট্ট নড়বড়ে একটা কাঠ ও বাঁশের সাঁকো। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে চললাম আরও প্রায় আধা কিলোমিটার। মেঠোপথের শেষ প্রান্তে চোখ আটকে যায় সুবিশাল নয়নাভিরাম চারতলা ভবনে। ছাদের ওপরে গ্লোব আকৃতির পর্যবেক্ষণ কক্ষ। চারদিকে সবুজের সমারোহ। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, ড্রাগনসহ নানা রকম দেশি-বিদেশি ফল, ফুলের গাছ আর সারি সারি গজারির বন। ভবনের সামনেই আম গাছতলায় লোহার পাত দিয়ে তৈরি বসার বেঞ্চ পাতানো উঠান, যেটি খালি চোখে বৃষ্টি কিংবা আলো ঝলমলে চাঁদ বা জ্যোৎ¯œা দেখার এক অনন্য জায়গা। ভবনের সিঁড়ি বেয়ে চারতলায় উঠলে চোখে পড়ে ঝকঝকে টাইলস মোড়ানো মেঝে। ছাদের ওপর ডিম্বাকৃতির বিশাল এক কক্ষ। সেখানে বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক টেলিস্কোপ, যা মূলত ব্যবহার করা হয় আমেরিকান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসায়। এই টেলিস্কোপের মাধ্যমেই মহাকাশের গ্রহ, নক্ষত্র, গ্রহাণুপুঞ্জ পর্যবেক্ষণ করছেন নাসার সাবেক মহাকাশবিজ্ঞানী ড. দীপেন ভট্টাচার্য। তার সঙ্গে চোখ মেলালাম আমরা কয়েকজন। তখন রাত সাড়ে ১০টা। আকাশ কিছুটা মেঘাচ্ছন্ন থাকায় আবারও অপেক্ষা। সোয়া ১১টা। আকাশে অনেক তারকারাজি। মাথার ওপর জ্বলজ্বল করছে একটি বড় তারকা। তড়িঘড়ি আমরা আবার ছাদে গেলাম। টেলিস্কোপে চোখ রেখেই দেখতে পেলাম গোলাকৃতির কমলারঙা জুপিটার। রাজধানীর এজি চার্চ স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র তাজওয়ার মুনতাসির কল্পর মহাকাশের প্রতি ব্যাপক আগ্রহ। বিস্ময় নিয়ে কল্পই আমাদের চেনাল জুপিটারকে। ছোট্ট কল্পর অনুসন্ধানী মন আর চোখকে অনেক অভিবাদন জানালেন বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী ড. দীপেন। পরদিন সকালে আকাশে ঝকঝকে রোদ। সেদিন টেলিস্কোপে চোখ পেতে সূর্যকে দেখলাম খুব কাছ থেকে। গাজীপুরে শ্রীপুরে নির্মিত এই পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে দেশ-বিদেশের বিজ্ঞানীরা আসছেন মহাকাশ গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের জন্য।

এটাই বেসরকারি পর্যায়ে দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ অ্যাস্ট্রো অবজারভেটরি (মানমন্দির) মহাকাশ পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ব্যবসায়ী নেতা শাহজাহান মৃধা বেণুর ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় নির্মিত এ অবজারভেটরির মূল কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় বাঘের বাজার-সংলগ্ন বেণুর ভিটায় প্রায় ৮০ বিঘা জায়গায় অবস্থিত এই চারতলা ভবনের ওপর অবজারভেটরির অবস্থান। প্রাথমিক পর্যায়ে ১৪ ইঞ্চি মিড ক্যাসিগ্রেইন টেলিস্কোপের সাহায্যে রাতের আকাশ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এখানে আরও অত্যাধুনিক ১০০ ইঞ্চি ব্যাসের রিফ্লেক্টর টেলিস্কোপ সংযুক্ত করা হবে। এখানে রেডিও টেলিস্কোপ স্থাপনের পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান এ উদ্যোক্তা।

জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের ছাদে ১৯৯০ সালে দেশের প্রথম অবজারভেটরি স্থাপন করা হয়। যে কজন বিজ্ঞানপ্রেমী মানুষের হাত ধরে দেশে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা শুরু হয় তাদের মধ্যে শাহজাহান মৃধা বেণু অন্যতম। জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার অন্যতম এই পথিকৃৎ বাংলাদেশে স্বাধীনতা-পরবর্তী জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক সব ঘটনার গবেষণা, পর্যবেক্ষণ ও উদযাপনে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

 

সর্বশেষ খবর