শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
শত বছর ধরে চলছে এই প্রকৃতিপ্রেম

পাখিদের নিরাপদ বাসা চেয়ারম্যানবাড়ি

দিনাজপুর প্রতিনিধি

পাখিদের নিরাপদ বাসা চেয়ারম্যানবাড়ি

যুগ যুগ ধরে সাদা বক, পানকৌড়ি, ঘুঘু, সারস, ডাহুক আর রাতচোরা পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল কুমুরিয়া গ্রামের চেয়ারম্যানবাড়িসহ কয়েক পাড়া। এ ছাড়া ওই এলাকায় বাটবিড়াল, বেজি, বিভিন্ন জাতের গুইসাপ রয়েছে। কাঁঠাল, আম, জাম, নিম, ফলদ গাছ, বাঁশঝাড়সহ বিভিন্ন গাছের ডালে বাসা বেঁধেছে শত শত রাতচোরা, সাদা বক, পানকৌড়িরা। চেয়ারম্যানবাড়ির চারপাশে গাছ ও আশপাশের বাঁশঝাড়ে গড়ে উঠেছে পাখিদের অভয়ারণ্য। এলাকার যেদিকে চোখ যায় বিভিন্ন গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে কিংবা মগডালে দিনে-রাতে সব সময়ই পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে জানান দেয় তাদের উপস্থিতি। বছরে পাঁচ মাস এদের দেখা যায়। শত বছর ধরে এ অবস্থা বিরাজ করছে। নিরিবিলিতে বসবাস পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ভাবকী ইউপির কুমুরিয়া গ্রামের চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকা। এলাকায় পরিবেশবান্ধব পাখিদের কলকাকলিতে প্রকৃতি যেন ভিন্ন রূপ পেয়েছে।

চারদিকে তাকালেই দেখা যায় পাখি কোনোটি উড়ছে, কোনোটি ডাকছে। সকালে আর বিকালে পাখিদের আনাগোনায় মন জুড়িয়ে যাবে সবার। সকাল হলেই মা পাখিরা খাবারের সন্ধানে উড়ে যায় আবার সন্ধ্যা নামার সঙ্গে ফিরে আসে নীড়ে। সন্ধ্যার দিকে গাছগুলোর দিকে তাকালে মনে হবে শাখা-প্রশাখাজুড়ে সাদা-কালো ফুল। তবে বোঝা যায় ওরা নড়েচড়ে, ওড়ে, ডাকে। ফুল নয়, সাদা-কালো বক আর পানকৌড়ি নইলে রাতচোরা। কেউ বিরক্ত করে না এমন জায়গায় নিরাপদ আশ্রয়ে বাসা বেঁধে ডিম দেয় এবং তা দিয়ে বাচ্চা ফুটায় তারা। মা পাখিরা খাবার সংগ্রহ করে এনে মুখে তুলে দেয় বাচ্চা পাখির। এলাকার পুকুরগুলোতে দেখা যায় কোনো পাখি মাছ শিকারে ব্যস্ত। পাখির ওড়াউড়ি, মা পাখির বাচ্চাকে খাওয়ানো আর বাবা পাখির পাহারা দেওয়ার দৃশ্য প্রতিদিন সবাইকে মুগ্ধ করে। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি দেখে যে কারও মনে হতে পারে এটি পাখিদের রাজ্য। আছে বন্যপ্রাণীও। ওই এলাকায় বাইরে থেকে কোনো অতিথি এলে তারাও প্রকৃতির মাঝে মুগ্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যা আর সকালে যে কেউ গাছের নিচ দিয়ে হেঁটে গেলেই বুঝতে পারবে পাখিদের নিরাপদ আবাসের কথা। পাখির কিচিরমিচির কোলাহলে অনেকের সকালে ঘুম ভাঙে। তবে এক দিনে এ এলাকায় পাখিরা নিরাপদ আবাস গড়েনি। পাখিপ্রেমী মরহুম সফি উদ্দিন মন্ডল ও হযরত আলী এবং ভাবকী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মহুরম নজরুল হক শাহ যুগ যুগ ধরে পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তোলেন। তাই শত বছর ধরে এখানে পাখিরা আসছে বলে জানান তাদের উত্তরসূরিরা। অর্ধশত বিঘা জমির ওপর সবুজ ছায়া ঘেরা শত শত গাছ ও বাঁশঝাড় যুগ যুগ ধরে পাখিরা অভয়ারণ্য হিসেবে বেছে নিয়েছে।

সর্বশেষ খবর