খুলনার রূপসা থানার অবহেলিত গ্রাম ছিল জাবুসা। উপজেলার ৩ নম্বর নৈহাটি ইউনিয়নের এই গ্রামে জোয়ারের লোনা পানিতে প্লাবিত হয়ে জমিতে ফসল হয় না। ফলে দরিদ্রতা ছিল এলাকার মানুষের নিত্যসঙ্গী। এই গ্রামে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে মৎস্য চাষ নতুন এক সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে। গ্রামে তানভীর ফিসারিজ নামে একটি খামারের মাধ্যমে রেণু পোনা থেকে শুরু করে বাগদা, গলদা চিংড়ির পাশাপাশি সাদা মাছ তথা রুই, কাতল, মৃগেল, কালিবাউস, সিলভারকার্পসহ বিভিন্ন কার্প জাতীয় মাছ ছাষ হয়। এতে ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকে গ্রামের আর্থ সামাজিক চিত্র।
জাবুসা গ্রামের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম লিটু বলেন, জোয়ারের লোনা পানির কারণে যেসব জমিতে ফসল হতো না; এখন ওইসব জমিতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সাদা সোনা বা চিংড়ি। আর সাদা মাছ তো আছেই। অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করায় এলাকার গরিব মানুষ সেখানে কাজ করে তাদের অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটিয়েছে। তাদের দেখাদেখি আরও নতুন নতুন খামার গড়ে তুলেছে। একই কথা বললেন জাবুসা গ্রামের নৈহাটি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মো. বাবর আলী। তিনি বলেন, ওই ফিসারিজে চিংড়ি ও সাদা মাছ চাষ করে সফল হয়েছে তারা। ওই এলাকার মানুষ এখানে রোজ ও মাস হিসেবে কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এলাকার বেকার যুবকরা মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবেও সমৃদ্ধ হয়েছেন।
শুধু জাবুসা নয়; রূপসার ৩ নম্বর নৈহাটি ইউনিয়নের আরও একাধিক গ্রাম ও ২ নম্বর শ্রীফলতলা ইউনিয়নে মাছ ও পোলট্রি ফার্ম রয়েছে তাদের। এই ফার্মের উদ্যোক্তা আলহাজ মোহাম্মদ আবু সাঈদ। জাবুসা গ্রামের সেলিম মিয়া বলেন, এখানকার উৎপাদিত মাছ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে। উৎপাদিত চিংড়ি বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।ওই ফিসারিজের ম্যানেজার জাকির হোসেন বলেন, আমাদের প্রকল্পে দিনে দুইবার জোয়ারের পানি আসে। জোয়ারভাটার কারণে প্রকল্পে মাছ চাষে সফলতা এসেছে। পাশাপাশি আমরা আধুনিক পদ্ধতিতে গলদা, বাগদা ও হরিনা চিংড়ি চাষ করি; যা বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
রূপসা উপজেলার সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী বলেন, ‘আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তিতে মাছ চাষ করলে মাছের উৎপাদন কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এরা সেটাই করছে। আমরা বিষয়টি সব সময় পর্যবেক্ষণ করছি এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি।’