নওগাঁর পোরশার মশিদপুর ইউনিয়নের গ্রামীণ রাস্তায় গেলে চোখে পড়বে ছোট-বড় সারি সারি তাল গাছ। গাছগুলো লাগিয়েছেন গৌতম কুমার সাহা নামের এক ব্যক্তি। প্রায় এক যুগ ধরে বিনা পয়সায় তালবীজগুলো রোপণ করে চলেছেন তিনি। প্রকৃতি সুরক্ষায় অনন্য অবদানের জন্য তিনি বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২৫-এর জন্য মনোনীত হয়েছেন। আগামী ৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করার কথা রয়েছে তার। গৌতমের বাড়ি পোরশা উপজেলার মশিদপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে।

গৌতম কুমার সাহা জানান, স্ত্রী ও এক ছেলেকে নিয়ে তার ছোট সংসার। তিনি একজন ক্ষুদ্র কৃষক। তারা দুই ভাই ও চার বোন। ১৫ বছর বয়সে বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরেন। ভাই বোনেরা পড়ালেখা করে কেউ চাকরি আবার কেউ ব্যবসা করে প্রতিষ্ঠিত হলেও অর্থকষ্টে দিন কাটে গৌতমের। মাটি ও খড়ের চালার জরাজীর্ণ বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করেন তিনি। ৬২ বছর বয়সী সহজ-সরল গৌতম এক দিন বাজারে চায়ের দোকানে চা খেতে খেতে টেলিভিশনে কোনো এক অনুষ্ঠানে দেখেন তাল গাছ মানুষকে বজ্রপাত থেকে রক্ষা করে ও মাটির ক্ষয়রোধ করে। এরপর থেকে প্রতি বছর ভাদ্র মাসে তাল পাকার সময় বাড়িতে তালের আঁটি (তালবীজ) জড়ো হলে কিংবা গ্রামের কারও বাড়ির আশপাশে আঁটি পড়ে থাকতে দেখলে সেগুলো সংগ্রহ করেন। পরে সেগুলো ব্যাগে ভরে সড়কের পাশে রোপণ করেন। ২০১২ সালের দিকে নিজের বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়া রাস্তা শিশা-দেউলিয়া সড়কের কোলাপাড়া থেকে ভবানীপুর পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার জুড়ে প্রায় ১ হাজার তালবীজ রোপণ করেন। শুরুর দিকে পরিবারের লোকজনের কাছ থেকেও তেমন উৎসাহ পাননি। তবে কিছু দিন পর তার লাগানো তাল বীজগুলো মাটি খুঁড়ে গাছ বড় হতে শুরু করলে তার মনে একটি ভালো লাগার অনুভূতি কাজ করে। সেগুলো গাছ হয়ে বড় হয়ে উঠতে থাকলে উৎসাহ আরও বেড়ে যায়। পরবর্তীতে ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে শিশা-দেউলিয়া সড়কের দুই পাশে বাকি অংশ জুড়ে তালবীজ রোপণ করেন। শিশা-দেউলিয়া সড়কের ৭ কিলোমিটার অংশ ছাড়াও এ পর্যন্ত আরও দুটি সড়কের দুই পাশে ১৫ কিলোমিটার জুড়ে তালবীজ রোপণ করেছেন। এর মধ্যে মহাদেবপুর-পোরশা সড়কের মাটিয়ান্দর সেতু থেকে করবোলা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার অংশ ও শিশা-মোল্লাপাড়া সড়কের ৫ কিলোমিটার অংশ জুড়ে তালবীজ রোপণ করেছেন। গৌতমের দাবি, এখন পর্যন্ত তিনি ৪০ হাজারেরও বেশি তালবীজ রোপণ করেছেন। অনেক গাছ উপড়ে পড়েছে, নয়তো মরে গেছে। তবে বেঁচে যাওয়া গাছের সংখ্যা ৩২ হাজারেরও বেশি। এক সময় চার আঁটিতে এক টাকা করে দেবেন ঘোষণা দেওয়ার পর গ্রামের শিশুরা তাল কুড়িয়ে এনে তার কাছে বিক্রি করত।