শনিবার, ২৫ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

স্বপ্ন দেখাচ্ছে শ্রীমঙ্গলের গোলআলু

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

স্বপ্ন দেখাচ্ছে শ্রীমঙ্গলের গোলআলু

দেশে আলুর উৎপাদন বাড়াতে এ বছর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল অঞ্চলে বীজআলু চাষ করা হয়েছে। ফলনও হয়েছে ভালো। এতে দেখা দিয়েছে আলু চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে এ অঞ্চলে আলু চাষে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব বলে মনে করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। প্রচলিত জাতের বাইরে খাদ্যশিল্পে ব্যবহৃত ও রপ্তানিযোগ্য আলু বেশি করে চাষ করা গেলে আলু রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। এতে যেমন কৃষকরা লাভবান হবেন, তেমনি সরকারের বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জিত হবে। জানা যায়, শ্রীমঙ্গল অঞ্চলের আওতায় রয়েছে- মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা। এর মধ্যে এবার মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে ৩৫ একর জমিতে বীজআলু চাষ করা হয়েছে। ফলন হয়েছে প্রায় ২৪৫ টন। এ থেকে ৭৫.৬০০ টন বীজআলু সরকারিভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। আলুর ফলন দেখে খুশি কৃষকরা।

সম্প্রতি শ্রীমঙ্গল উপজেলার পারেরটং গ্রামে মাঠ পরিদর্শনে গিয়ে আলুর ফলন দেখে উচ্ছ্বসিত হয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুস শহীদ এমপি।

তবে সেচ ও কৃষকের জমির মালিকানা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে বিএডিসি। সেচব্যবস্থা না থাকায় এ অঞ্চলে অনেক জমি পতিত থাকে। অনেক জমি চা-বাগানের মালিকানাধীন। অনেক জমির মালিক আবার প্রবাসী। এসব জমি বর্গা চাষ নিয়ে কৃষকরা ফসল ফলান। আর জমির মালিকানা না থাকায় অনেক কৃষক ব্যাংকঋণ বা ভর্তুকি সুবিধা পান না। তাই ইচ্ছা থাকলেও কৃষকদের দিয়ে ব্যাংকঋণের আওতায় আলু চাষ করাতে পারে না বিএডিসি।

প্রচলিত জাতের বাইরে খাদ্যশিল্পে ব্যবহৃত ও রপ্তানিযোগ্য আলু বেশি চাষ করা গেলে রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। এতে যেমন কৃষক লাভবান হবেন, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জিত হবে।

জানা যায়, চলতি বীজআলু সংরক্ষণ মৌসুমে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের উদ্যোগে শ্রীমঙ্গল অঞ্চলে বীজআলুর চাষ করা হয়েছে। উৎপাদিত এই বীজআলু হিমাগারে সংরক্ষণ করা হবে। পরে নভেম্বর মাসে রোপণ মৌসুমে চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের মধ্যে এই বীজআলু বিতরণ করা হবে।

বিএডিসির শ্রীমঙ্গল অফিস জানায়, মানসম্মত বীজআলু উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণের লক্ষ্যে কৃষকদের দিয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ৮ একর, মৌলভীবাজারের গিয়াসনগরে ৪ একর ও হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার পরমানন্দ গ্রামে ৩৮ একর জমিতে বীজআলু চাষ করা হয়। এখান থেকে উৎপাদিত হবে প্রত্যায়িত শ্রেণির বীজআলু। এখানে সানশাইন (বিএডিসি আলু-১), এলুয়েট (বারি আলু-৯০) ও ডায়মন্ড জাতের উচ্চ ফলনশীল আলুর বীজ রোপণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে সানশাইন আলুর ফলন খুব ভালো হয়েছে। বিএডিসি জানায়, এ অঞ্চলের মাটি অ্যাসিডিক হওয়ায় সানশাইন বাদে অন্য আলুতে স্ক্যাব বা দাদ রোগ হয়ে থাকে। কিন্তু বিএডিসি আলু-১ (সানশাইন) স্ক্যাব প্রতিরোধী জাত হওয়ায় সানশাইন জাতের আলুতে স্ক্যাব হয় না। আলুর রং হয় সুন্দর। পারেরটং গ্রামের কৃষক নাজমুল হাসান জানান, তিনি গত বছরের নভেম্বর মাসে জমিতে বীজআলু রোপণ করেছেন। ৭০ শতাংশ সানশাইন আর ৩০ শতাংশ এলুয়েট জাতের বীজআলু চাষ করেন। আলু তুলতে সময় লেগেছে ৬৫-৭০ দিন। ফলন খুব ভালো হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে প্রতি শতাংশে প্রায় ৪ মণ। খরচ বাদ দিয়ে তার ২ লাখ টাকা লাভ হবে। আগামী মৌসুমের আগে সরকার সেচ সমস্যার সমাধান করলে এলাকার অন্য কৃষকরা আলু চাষ করবেন বলে জানিয়েছেন। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, অন্য আলুর আবাদ এ এলাকায় খুব একটা না থাকায় ভাইরাস ও রোগমুক্ত মানসম্মত আলু উৎপাদিত হবে। তাই আমরা কৃষকদের আলু চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। তবে সেচব্যবস্থা এবং জমির মালিকানা সমস্যার সমাধান করা গেলে এ অঞ্চলে আলু চাষে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।

সর্বশেষ খবর