টুলে ভর দিয়েই লেখাপড়া শিখে এখন ভাগ্য বদলেরও স্বপ্ন দেখছেন অদম্য শারীরিক প্রতিবন্ধী ইব্রাহিম। সুযোগ পেলে জীবনের সবটুকু দিয়ে স্বপ্ন পূরণ করে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে চান তিনি। প্রতিবন্ধীরা যে কারও বোঝা নয়, তাও দেখিয়ে দিতে চান তিনি। শারীরিকভাবে দাঁড়াতে না পারলেও কর্মদক্ষতায় নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন তিনি। শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও কোনো অংশে কম নন এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন অদম্য ইব্রাহিম।
জন্মগতভাবে দুই হাত ও দুই পা বাঁকা। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে জীবন যুদ্ধে জয়ী ইব্রাহিম। প্রতিনিয়ত টুলের ওপর ভর করে এগিয়ে চলেছেন আগামী দিনের স্বপ্ন পূরণে। পায়ের ওপর দাঁড়াতে না পারলেও মনের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিবন্ধী ইব্রাহিম বিকলাঙ্গ হাত-পা দিয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা পাস করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।
দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার হামিদপুর গ্রামের রাজমিস্ত্রি বাবা সাইফুল ইসলামের ঘরে জন্ম নিয়ে ইব্রাহিমের পথচলা ততটা সহজ ছিল না।
জন্মের পর থেকে বিকলাঙ্গ হাত-পা নিয়ে বাবা-মা ও প্রতিবেশীর সহযোগিতায় প্রতিকূলতার মাঝে বেড়ে ওঠা। তিন সন্তান নিয়ে অভাবের সংসারে ইব্রাহিমকে বড় করতে কষ্ট হলেও হাল ছাড়েননি পরিবার। প্রথমে মায়ের কোলে চড়ে একপর্যায়ে টুলে ভর দিয়ে চলতে হয় ইব্রাহিমকে। আর এভাবেই ছোট থেকে তার বড় হওয়া।
পরিবারের স্বপ্ন পূরণে প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্তর পেরিয়ে শেষ করেছেন উচ্চ মাধ্যমিকও। কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা পাস করেছেন ইব্রাহিম। অদম্য ইচ্ছা শক্তিতে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে কৌশলে টুলের ওপর ভর দিয়ে সাধারণ মানুষের মতো চলতে পারেন ইব্রাহিম।
বিকলাঙ্গ পা দিয়ে সাধারণ মানুষের মতো সুন্দর লিখতে পারেন আবার কম্পিউটারের নানা কাজ অনায়াসে করতে পারেন। বর্তমানে ঢাকায় কাজ করছেন বেসরকারি এক কোম্পানিতে। কম্পিউটার কম্পোজ, গ্রাফিক্স ডিজাইন, লোগো ডিজাইন, এডিটিংসহ অনেক কিছু সহজেই করে ফেলছেন পা দিয়েই। প্রতিবন্ধী হয়েও অর্জন করেছেন দক্ষতা। ভালো সুযোগ পেলে ইব্রাহিম ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বলে বিশ্বাস করেন। প্রতিবন্ধীরা বোঝা নয় সম্পদে পরিণত হতে পারে, পরিবারের হাল ধরে এমনটাই প্রমাণ করতে চান এ অদম্য ইব্রাহিম। উপযুক্ত চাকরি পেয়ে এলাকার মুখ উজ্জ্বল করবে সেই প্রতীক্ষায় ক্ষণ গুনছেন ইব্রাহিমের পরিবার ও এলাকাবাসী।
ইব্রাহিম জানান, জীবনের পথচলা মসৃণ না হলেও সবার দোয়া ও ভালোবাসায় আরও এগিয়ে যেতে চান তিনি। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সঙ্গী করেই কাজের মাধ্যমে বাবা-মার মুখ উজ্জ্বল করতে চান ইব্রাহিম।