নাটোরের বড়াইগ্রাম। এখানে বাণিজ্যিকভাবে ২১ বিঘা জমিতে মিসরীয় জাতের মাল্টা চাষ করে সফল হয়েছেন মিজানুর রহমান। উপজেলার আটঘরিয়ায় এ ফল চাষে সফলতা পাওয়ায় তিনি ‘মাল্টা মিজান’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছেন। মাল্টা চাষের পাশাপাশি তিনি আরও দুই বিঘা জমিতে ড্রাগন, ১৫ বিঘায় পেয়ারা, ৪ বিঘা জমিতে পেঁপে, এক বিঘায় আঙুর এবং এক বিঘা জমিতে আলুবোখারা ও অ্যাভোকাডোর চাষ করেছেন। তাঁর দেখাদেখি উপজেলার অনেক বেকার যুবক মাল্টাসহ বিভিন্ন ফল চাষ শুরু করেছেন। মিজানুর উপজেলার মাঝগ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে। জানা যায়, মিজান পেশায় ট্রাকচালক ছিলেন। এক সময় বাড়তি আয়ের আশায় সৌদি আরব যান। প্রবাসে থাকার সময় ইউটিউবে তিনি মাল্টা চাষের মাধ্যমে ময়মনসিংহের এক চাষির সফলতা দেখে নিজেও কৃষিতে উদ্বুদ্ধ হন। পরে দেশে ফিরে ২০১৭ সালে তিনি আটঘরিয়া এলাকায় সাত বিঘা জমি লিজ নিয়ে মিসরীয় জাতের মাল্টা চাষ করেন। পরে ভালো ফলন পাওয়ায় দুই দফায় জমি বাড়িয়ে মোট ২১ বিঘা জমিতে মাল্টার চাষ করেছেন তিনি। তাঁর বাগানে বর্তমানে দুই হাজার ১০০টি মাল্টা গাছ রয়েছে। চারা রোপণের দুই বছর পর ফল ধরতে শুরু করলেও তিন বছর পর প্রতিটি গাছে পূর্ণাঙ্গরূপে ফল ধরা শুরু করে। প্রতিটি গাছ থেকে ৩০০-৪০০টি মাল্টা পান তিনি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাগানে সারিবদ্ধ মাল্টার গাছ। তাঁর বাগানে সাত-আটজন শ্রমিক কাজ করছেন। তারা সারা বছরই এ বাগানে কাজ করেন। এ ছাড়া মাঝে মাঝে বেশি শ্রমিকও লাগে। মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রতিবছর বিঘাপ্রতি প্রায় দুই লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করা যায়। সে হিসেবে আমি মাল্টা বাগান থেকে বছরে কমপক্ষে ৪২ লাখ টাকার ফল বিক্রি করি।’ এবার বাগানের প্রায় অর্ধেক মাল্টা বিক্রি করেছেন। সব ফল বিক্রি শেষে জমি লিজের টাকা, শ্রমিকের মজুরি ও অন্যান্য খরচ বাদে চলতি মৌসুমে তাঁর কমপক্ষে ২৫ লাখ টাকা লাভ থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সচরাচর রাজধানী ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ, পাবনা, মুন্সিগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও গাজীপুর থেকে ব্যাপারীরা তাঁর বাগানে এসে মাল্টা কিনে নিয়ে যান বলে জানান। প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থী এবং ক্রেতারা ভিড় করেন তাঁর বাগানে। মিজানুর রহমান বলেন, ‘ইদানীং বিভিন্ন জাতের ফলে ফরমালিন ব্যবহারের হিড়িক পড়েছে, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। মানুষকে ফরমালিনমুক্ত নিরাপদ ফল খাওয়ানোর কথা চিন্তা করেই মাল্টার বাগান করেছি। লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশ না গিয়ে উদ্যমী তরুণরা দেশেই মাল্টাসহ বিভিন্ন ফল চাষ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেন।’ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সজীব আল মারুফ বলেন, ‘মাল্টা চাষে সফল মিজানুরকে প্রয়োজনীয় সার সরবরাহসহ নানাভাবে সহযোগিতা করেছে কৃষি বিভাগ। তাঁর দেখাদেখি এলাকায় মাল্টা চাষের প্রবণতা বাড়ছে। এ উপজেলায় বর্তমানে মোট ১৫ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ করা হয়েছে।’ তবে সরকারিভাবে এ ফল চাষে প্রণোদনার ব্যবস্থা না থাকায় মাল্টা চাষিদের খুব বেশি সহযোগিতার সুযোগ থাকে না বলে তিনি জানান।