চীন আবারও মহাকাশ গবেষণায় নতুন মাইলফলক স্থাপন করল। শেনঝো-২১ মহাকাশযানে করে দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়সী নভোচারীসহ তিন সদস্যের একটি দল সফলভাবে পৌঁছেছে তিয়ানগং মহাকাশ স্টেশনে। তাদের সঙ্গে পরীক্ষামূলক গবেষণার অংশ হিসেবে পাঠানো হয়েছে চারটি ইঁদুর।
স্থানীয় সময় শনিবার (১ নভেম্বর) ভোরে চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জিউকুয়ান স্যাটেলাইট লঞ্চ সেন্টার থেকে উৎক্ষেপিত এই যানটি মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টার মধ্যেই স্টেশনে ডকিং সম্পন্ন করে। উৎক্ষেপণ এবং ডকিং- দুই ধাপেই চীন এবার নিজস্ব গতির রেকর্ড ভেঙেছে।
এই অভিযানের নেতৃত্বে আছেন অভিজ্ঞ নভোচারী ঝ্যাং লু। তার সঙ্গে রয়েছেন ৩২ বছর বয়সী ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার উ ফেই, যিনি এখন পর্যন্ত চীনের সবচেয়ে কম বয়সী নভোচারী হিসেবে মহাকাশে গেছেন। এছাড়াও আছেন ৩৯ বছর বয়সী ঝ্যাং হংঝ্যাং, যিনি পে-লোড স্পেশালিস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
যাত্রার আগে তিন নভোচারী গোবি মরুভূমিতে অবস্থিত উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে পরিবার ও সহকর্মীদের বিদায় জানান। প্রথমবার মহাকাশে যাওয়ার অনুভূতি ব্যক্ত করে উ ফেই বলেন, নিজেকে অত্যন্ত সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে। দেশের জন্য অবদান রাখতে পারছি এটাই সবচেয়ে বড় গর্ব।
এই মিশনের বিশেষ আকর্ষণ চারটি ইঁদুর। এর মধ্যে দুইটি পুরুষ ও দুইটি স্ত্রী। মহাকাশের পরিবেশে ক্ষুদ্র স্তন্যপায়ী প্রাণীর আচরণ, মানসিক পরিবর্তন ও শারীরবৃত্তীয় প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এগুলোকে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে, প্রায় ৩০০ ইঁদুরের মধ্য থেকে নির্বাচন করা হয় এই চারটি ‘মহাকাশ প্রজেক্ট সদস্য’কে, যাদের দুই মাস ধরে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ওজনহীনতা ও সীমাবদ্ধ জায়গায় থাকার ফলে শরীর ও মস্তিষ্কে কী পরিবর্তন আসে, তা গবেষণা করা হবে।
এই তিন নভোচারী পরবর্তী ছয় মাস তিয়ানগং স্টেশনে অবস্থান করবেন। এ সময় তারা জীববিজ্ঞান ভিত্তিক গবেষণা, মহাকাশ চিকিৎসা বিষয়ক পরীক্ষা, তরল পদার্থ ও উপাদান বিজ্ঞানের গবেষণা, দীর্ঘমেয়াদি মহাকাশ অবস্থানের শারীরিক প্রভাবসহ মোট ২৭টিরও বেশি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা পরিচালনা করবেন।
বর্তমানে বিশ্বে সক্রিয় দু’টি মহাকাশ স্টেশনের মধ্যে একটি যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া পরিচালিত আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন এবং অন্যটি চীনের তিয়ানগং। চীন প্রতি ছয় মাস পরপর নভোচারী পরিবর্তন করে স্টেশনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
তিয়ানগং প্রকল্পের মাধ্যমে চীন ভবিষ্যতে চাঁদ ও গভীর মহাকাশ অভিযানের আরও বড় পরিকল্পনার দিকে এগোচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে- এই মিশন শুধু কৃতিত্ব নয় বরং চীনের দীর্ঘমেয়াদি মহাকাশ আকাঙ্ক্ষার আরো একটি দৃঢ় পদক্ষেপ। চীনের এই অভিযান আবারও দেখিয়ে দিল যে, মহাকাশ দৌড়ে দেশটি এখন আর অনুসারী নয়, বরং নিজের গতিতে সামনের সারিতে উঠে এসেছে।
তথ্য সূত্র- রয়টার্স, সিবিএস নিউজ।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ