শুক্রবার, ১৯ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক

ফারুক চৌধুরী

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক

বাংলাদেশের জাতিসংঘে যোগদানের পর বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘের সাধারণ সভায় বাংলায় তাঁর ভাষণ প্রদান করলেন ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৪-এ। হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী বাংলা ভাষার ইতিহাসে তা ছিল একটি স্মরণীয় দিন। ওই দিনে জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর বাংলা ভাষণের অনুবাদ তাৎক্ষণিকভাবে পড়ে শোনানোর দায়িত্ব আমাকে পালন করতে হয়েছিল। তত দিনে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি জানিয়েছে বিশ্বের ১২০টি রাষ্ট্র। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু-সময় পর্যন্ত বিশ্বের মাত্র দুটি দেশ, চীন আর সৌদি আরব ছাড়া, পৃথিবীর প্রায় সব দেশই আমাদের স্বীকৃতি জানিয়েছিল।

 

১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের স্বীকৃতির পথ সুগম করে দিল। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর ৬ আর ৭ তারিখে যথাক্রমে ভারত আর ভুটানের পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর ঢাকা প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত আমাদের স্বীকৃতির খাতা ছিল শূন্য। কিন্তু দিল্লি বিমানবন্দরে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুকে সংবর্ধনা জানানোর জন্য উপস্থিত ছিলেন অন্তত ২০টি দেশের রাষ্ট্রদূত অথবা কূটনৈতিক প্রতিনিধি। তদানীন্তন সোভিয়েত ব্লকের রাষ্ট্রদূত ছাড়াও তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ইতালি, পশ্চিম জার্মানি (সে সময়কার বিভক্ত জার্মানির সোভিয়েত ব্লকভুক্ত পূর্ব জার্মানির রাষ্ট্রদূত), নরওয়ে আর ডেনমার্কের প্রতিনিধিরা। বঙ্গবন্ধুর ঢাকা প্রত্যাবর্তনের পরই শুরু হলো বিশ্ব স্বীকৃতির পালা।

১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি আমরা পূর্ব জার্মানি আর মঙ্গোলিয়ার স্বীকৃতি লাভ করলাম, তার পরদিন বুলগেরিয়া আর পোল্যান্ডের। প্রতিবেশী মিয়ানমারের (সেই সময়কার বার্মা) স্বীকৃতি এলো ১৩ জানুয়ারি। জানুয়ারি মাসেই সোভিয়েত ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ ১৭টি দেশ আমাদের স্বীকৃতি জানাল। আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে সর্বাগ্রে স্বীকৃতি দিল সেনেগাল, ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সালে। ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ ছিল পশ্চিম ইউরোপের স্বীকৃতির দিন। সেদিন আমাদের পররাষ্ট্র দফতরে সযতেœ রাখা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির নথিটির কলেবর পেল বৃদ্ধি-ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, সুইডেন, নরওয়ে, পশ্চিম জার্মানি, যুক্তরাজ্য আর আইসল্যান্ডের স্বীকৃতিতে। সেদিনই আমরা পেলাম ইসরায়েলের স্বীকৃতিবার্তা, যা গ্রহণ করা সে সময়কার আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে ছিল অসম্ভব। ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সালে আমাদের কাছে স্বীকৃতি এলো ২৭টি দেশের, যার মধ্যে ছিল এশিয়ার দুটি মুসলিম রাষ্ট্র মালয়েশিয়া আর ইন্দোনেশিয়া। পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্কের প্রেক্ষাপটে তা ছিল আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি এলো ৪ এপ্রিল। আরব দেশগুলোর মধ্যে আমাদের প্রথম স্বীকৃতি জানায় ইরাক, ৮ জুলাই ১৯৭২ সালে। মাগরেবের দেশগুলোর মধ্যে মরক্কোর স্বীকৃতি এলো ১৩ জুলাই ১৯৭৩ সালে আর আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া ও মৌরিতানিয়া তার তিন দিন পর ১৬ জুলাইয়ে। অবশেষে পাকিস্তান আর ইরান স্বীকৃতি দান করল ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে, লাহোরে বঙ্গবন্ধুর ইসলামী শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের প্রাক্কালে।

বাংলাদেশের জাতিসংঘে যোগদানের পর বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘের সাধারণ সভায় বাংলায় তার ভাষণ প্রদান করলেন ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৪-এ। হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী বাংলা ভাষার ইতিহাসে তা ছিল একটি স্মরণীয় দিন। ওই দিনে জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর বাংলা ভাষণের অনুবাদ তাৎক্ষণিকভাবে পড়ে শোনানোর দায়িত্ব আমাকে পালন করতে হয়েছিল। তত দিনে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি জানিয়েছে বিশ্বের ১২০টি রাষ্ট্র। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু-সময় পর্যন্ত বিশ্বের মাত্র দুটি দেশ, চীন আর সৌদি আরব ছাড়া, পৃথিবীর প্রায় সব দেশই আমাদের স্বীকৃতি জানিয়েছিল। কিন্তু তার জীবদ্দশায় সেই দুই দেশেরই উচ্চতম পর্যায়ের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু সম্পর্ক স্থাপনে সক্ষম হয়েছিলেন। অনানুষ্ঠানিকভাবে সেই দুই দেশের সঙ্গে আমাদের স্থাপিত হয়েছিল যথেষ্ট যোগাযোগ।

আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুবিশাল কর্মকান্ডের একটি দিকেরই পর্যালোচনা করার প্রয়াস নিচ্ছি। তা হলো, নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসেবে পররাষ্ট্র-সম্পর্ক পরিচালনায় তার চমকপ্রদ ভূমিকা নাতিদীর্ঘকাল হলেও বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য লাভের সুযোগ আমার হয়েছে। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠায় তাকে দেখেছি অনন্যসাধারণ এক স্থপতির ভূমিকায়।

একজন কারারুদ্ধ রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল ভুট্টোর কবল থেকে বিনাশর্তে মুক্তিলাভ। ১৯৭১ সালে নয় মাস কারাবাসকালে বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন তার বিচারের প্রহসন-মৃত্যুদ । পাকিস্তানের মিয়াওয়ালি জেলে অবস্থানকালে তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন, সেখানে তার কবর খোঁড়ার আয়োজন। বহু বছর কারাবাসের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শেখ মুজিব জেলে বসেই স্থাপন করেছিলেন জেলের ডিআইজি শেখ আবদুর রশিদের সঙ্গে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক। এলো ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। আমাদের বিজয় দিবস। বাংলাদেশে পরাজিত জেনারেল নিয়াজির বাড়িও মিয়াওয়ালিতে। সেখানেই কারাগারে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানের পরাজয়ের কোনো হিংসাত্মক প্রতিক্রিয়া যদি মিয়াওয়ালি জেলে ঘটে, সেই ভয়েই শেখ রশিদ বঙ্গবন্ধুকে স্থানান্তরিত করলেন তার বাসস্থানে। অন্তরীণ অবস্থাতেই। তার কিছুদিন পরই পাকিস্তানে তখ্ত পাল্টাল, ইয়াহিয়াকে সরিয়ে ক্ষমতার আসনে বসলেন জুলফিকার আলী ভুট্টো। তারই আদেশে বঙ্গবন্ধু অন্তরীণ অবস্থায়ই স্থানান্তরিত হলেন রাওয়ালপিন্ডির অদূরে সিহালা অতিথি ভবনে। সেখানেই ২৭ ডিসেম্বর হলো মুজিব-ভুট্টোর সাক্ষাৎকার। দুজন তখন দুটি দেশের রাষ্ট্রনায়ক। কিন্তু একজন অন্তরীণ অন্যজনের হাতে। সিহালা অতিথি ভবনে ছিল বেতারযন্ত্র। রেডিওতে বঙ্গবন্ধু শুনতে পেয়েছেন ৯৩ হাজার পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দীর কথা। বুঝতে পেরেছেন ভুট্টোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় তার অবস্থান দুর্বল নয় মোটেও। কারণ, বন্দী হলেও তিনি আসলে বিজয়ী। বঙ্গবন্ধু তাই ভুট্টোর কাছে করলেন তার মুক্তির দাবি। ভুট্টোর উত্তর, আর কিছুদিন আমাকে সময় দিন। এদিকে বঙ্গবন্ধুর আশঙ্কা, পাকিস্তানের সেই সময়কার অনিশ্চিত পঙ্কিল রাজনীতিতে যে কোনো মুহূর্তে অপ্রত্যাশিত এবং অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটে যেতে পারে। সে দেশে আবার যদি হয় সামরিক অভ্যুত্থান? যদি গণেশ যায় উল্টে! তাই শুভস্য শীঘ্রম্। বঙ্গবন্ধু তখন বুঝতে পেরেছেন যে, ভুট্টো তাকে মুক্তিদানে বাধ্য। কারণ, পরাজিত ভুট্টোর অনেক কিছুই চাওয়ার রয়েছে বঙ্গবন্ধুর কাছে। কিন্তু তাকে লাভ করতে হবে বিনাশর্তে মুক্তি। ৭ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে ভুট্টো বঙ্গবন্ধুকে জানালেন নিকটবর্তী রাষ্ট্রপতির অতিথিশালায় নৈশভোজের আমন্ত্রণ। সেখানেই ভুট্টো বঙ্গবন্ধুকে বললেন যে, তিনি তাকে মুক্তিদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু তার পরদিনই পাকিস্তান সফরে আসছেন ইরানের শাহ। তিনি নাকি বঙ্গবন্ধুর দর্শনাগ্রহী। বঙ্গবন্ধু তাই আরও দুই-একটি দিন কেন থেকে যান না। বঙ্গবন্ধুর আশঙ্কা, ভুট্টো আর ইরানের শাহ এই দুই বন্ধু মিলে হয়তোবা করবেন তার ওপর নানারকম মুক্তিশর্ত আরোপের প্রচেষ্টা। এই সুযোগ তাই ভুট্টোকে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। ‘না ভুট্টো, আমাকে যেতেই হবে। আমার জনগণ আমার অপেক্ষায় রয়েছে। আমার আর থাকার উপায় নাই।’ নিরুপায় ভুট্টো তাই একাই পাড়লেন কনফেডারেশনের কথা। পাকিস্তান আর বাংলাদেশ মিলে কেন একটি কনফেডারেশন করা সম্ভব নয়। যার রাষ্ট্রপতি হবেন বঙ্গবন্ধু, ভুট্টোর জিজ্ঞাসা। ভুট্টোর অভিপ্রায় কনফেডারেশনের প্রতিশ্রুতি আদায়। মুজিবের ইচ্ছা, কথা বলে ভুট্টোর খপ্পর থেকে যথাসম্ভব শিগগির কেটে পড়া। কারণ, অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টিতে পারদর্শী ভুট্টো। রাজনীতিতে কাউকে এবং কিছুতেই বিশ্বাস নেই। বঙ্গবন্ধু দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন, ‘আমাকে প্রথম দেখা করতে হবে আমার জনগণের সঙ্গে... আমার প্রয়োজন সময়ের... আমি আপনাকে দেশে ফিরেই জানাব।’

কোনো নিশ্চিত উত্তর প্রদানের আগে তার জনগণের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর কথা বলার প্রয়োজনীয়তার যুক্তি খন্ডানো সম্ভব হলো না ভুট্টোর। হাতখরচ হিসেবে পঞ্চাশ হাজার ডলার তিনি দিতে চাইলেন বঙ্গবন্ধুকে। কপর্দকহীন শেখ মুজিব সেই ফাঁদে পা দেওয়ার পাত্র নন। সবিনয়ে বঙ্গবন্ধু তা প্রত্যাখ্যান করলেন।

বললেন, ‘ধন্যবাদ, এই অর্থ আপনি আমার যাত্রাখরচ হিসেবেই রেখে দিন।’

পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্তিলাভের মুহূর্ত থেকেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের গৌরবজনক আসন প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন সচেষ্ট। ৮ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে রাওয়ালপিন্ডি থেকে লন্ডনে পদার্পণের পর থেকে ১০ জানুয়ারি ঢাকায় তাঁর জনসভায় ভাষণদান পর্যন্ত সময়ের ব্যবধান ছিল মাত্র ৫০ ঘণ্টার কিছু বেশি। সেই আবেগপূর্ণ সময়টির মধ্যেও এক আশ্চর্য সাবলীলতায় তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির কাঠামোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে সক্ষম হয়েছিলেন। যুদ্ধে পাকিস্তান ছিল আমাদের শক্র। কিন্তু তিনি যথার্থভাবেই অনুধাবন করেছিলেন যে, বাংলাদেশের সদ্য কারামুক্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর কর্তব্য পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশ কী ধরনের সম্পর্ক রাখতে ইচ্ছুক তা স্পষ্ট ভাষায়, কালক্ষয় না করেই, প্রকাশ করা। ৮ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে লন্ডন পৌঁছার অব্যবহিত পরই সাংবাদিকদের কাছে এক বিবৃতিতে তিনি বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানের নতুন রাষ্ট্রপতি মি. ভুট্টোর সঙ্গে আমার আলোচনায় মি. ভুট্টো আমার কাছে আর বাংলাদেশের জনসাধারণের কাছে এই আবেদন করেছেন যে, আমরা যেন বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে তাদের কোনো প্রকার সম্পর্ক বজায় রাখার সম্ভাবনা বিবেচনা করি। আমি মি. ভুট্টোকে বলেছি, আমার দেশবাসীর কাছে প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত এ বিষয়ে আমি কিছু বলব না।’

১০ জানুয়ারি প্রত্যুষে ঢাকার পথে দিল্লিতে পদার্পণের পর পাকিস্তানের প্রতি সুস্পষ্ট ইঙ্গিতে তিনি বলেছিলেন, তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করছেন, ‘কারও প্রতি কোনো বিদ্বেষের মনোভাব নিয়ে নয়।’ সেই অপরাহ্ণেই ঢাকার জনসভায় বঙ্গবন্ধু দ্ব্যর্থহীন ভাষায় দিলেন ভুট্টো প্রস্তাবিত বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের মধ্যে কনফেডারেশনের জবাব। পাকিস্তানের উদ্দেশে তিনি এ-ও বললেন, ‘আমি তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো ঘৃণার ভাব পোষণ করি না। তোমাদের স্বাধীনতা তোমাদের রইল। আমাদের স্বাধীনতায় থাকতে দাও।’ ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালের বঙ্গবন্ধুর দিল্লি পৌঁছার সেই স্মরণীয় প্রভাতে মুজিব আর ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে হয়েছিল পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। তিনি ঢাকার রেসকোর্সের সেই সভায় ঘোষণা করেছিলেন, ‘তার (ইন্দিরা গান্ধী) সঙ্গে আমি দিল্লিতে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ করেছি। আমি যখনই চাইব, ভারত বাংলাদেশ থেকে তার সৈন্যবাহিনী ফিরিয়ে নেবে।’ তার দুই মাসের মধ্যেই ১২ মার্চ ১৯৭২ সালে ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ থেকে শেষ ভারতীয় সৈন্যের বিদায় ছিল সমতার ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

৮ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে লন্ডনে পৌঁছেই সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বিবৃতিতে বিশ্ববাসীর কাছে বঙ্গবন্ধু জানান দুটি আবেদন। ‘বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করুন’ আর ‘আমার ক্ষুধার্ত কোটি প্রাণের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসুন।’

ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অ্যাডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে তাঁর সেদিন হয়েছিল ঘণ্টাব্যাপী সাক্ষাৎ। তিনি সেই সাক্ষাতে বাংলাদেশকে যথাসম্ভব শিগগির স্বীকৃতি ও সাহায্য প্রদানের জন্য ইংল্যান্ডের প্রতি আবেদন জানিয়েছিলেন। হোটেলে সেদিন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন ইংল্যান্ডের তদানীন্তন বিরোধী দলের নেতা হ্যারল্ড উইলসন। পরবর্তী সময়ে দেখেছি যে, তার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর গড়ে উঠেছিল প্রগাঢ় বন্ধুত্ব। কমনওয়েলথ সেক্রেটারি জেনারেল আরনল্ড স্মিথও তাঁর সঙ্গে সেদিনই দেখা করেছিলেন। তাঁর কাছে বঙ্গবন্ধু ব্যক্ত করেছিলেন কমনওয়েলথে যোগদানে বাংলাদেশের অভিপ্রায়। এপ্রিল ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ করেছিল কমনওয়েলথের সদস্যপদ লাভ। [পুনর্মুদ্রণ]

 

লেখক : প্রয়াত রাষ্ট্রদূত।

সর্বশেষ খবর