সোমবার, ২২ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

বিশ্বসেরা ১০ বিজ্ঞানীর তালিকায় বাংলাদেশি তনিমা

বিশ্বসেরা ১০ বিজ্ঞানীর তালিকায় বাংলাদেশি তনিমা

বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশিদের জয়জয়কার চলছেই। এবার এ তালিকায় যোগ হলেন তনিমা তাসনিম অনন্যা। তাঁর জন্ম বাংলাদেশের নরসিংদী জেলায়। বাবার চাকরির সুবাদে তাঁর শৈশব কেটেছে রাজধানী ঢাকায়। মা গৃহিণী। কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে গবেষণার জন্য বিশ্বের সেরা ১০ বিজ্ঞানীর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশি এ তরুণী। তনিমা তাসনিম নামের এ বিস্ময়কর তরুণী বর্তমানে ডার্টমাউথ কলেজের সঙ্গে যুক্ত আছেন। কৃষ্ণগহ্বরগুলো কীভাবে বেড়ে ওঠে এবং পরিবেশে কী প্রভাব রাখে তার পূর্ণাঙ্গ চিত্র এঁকে দেখিয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক সায়েন্স নিউজ নামের একটি গণমাধ্যম সম্প্রতি তনিমা তাসনিমের এ সফলতার কথা জানায়। গত ৩০ সেপ্টেম্বর ‘এসএন টেন : সায়েন্টিস্ট টু ওয়াচ’ নামের একটি তালিকা প্রকাশ করে তারা। যেখানে তাসনিমের কাজকে ‘অসাধারণ গবেষণা’ বলে অভিহিত করা হয়। এ নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো এমন বিজ্ঞানীর তালিকা প্রকাশ করল সায়েন্স নিউজ। ছোটবেলা থেকেই পরিবারের মাধ্যমে মহাকাশের প্রতি আগ্রহ জন্ম নেয় তাসনিমের। ওই আগ্রহ থেকেই পরে এ বিষয়ে পড়াশোনা করেন। ২০১৯ সালে পিএইচডিও সম্পন্ন করেন তাসনিম। এর আগে নাসা ও সার্নে ইন্টার্নশিপ করেছেন। এ ছাড়া ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়েও কিছুদিন পড়াশোনা করেছেন তিনি। সায়েন্স নিউজ মূলত বিজ্ঞান, ওষুধ ও প্রযুক্তির হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ করা নিয়ে কাজ করে। ছয় বছর আগ থেকে তরুণ ও ক্যারিয়ারের মাঝামাঝি থাকা বিজ্ঞানীদের একটি তালিকা প্রস্তুত করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। এ তালিকায় ৪০ বছর বা তাঁর কম বয়সী বিজ্ঞানীরা স্থান পেয়ে থাকেন। এবার সে তালিকায়ই বাংলাদেশি তনিমা তাসনিম অনন্যা জায়গা করে নিলেন। তনিমা তাসনিম অনন্যার ছোটবেলায় মায়ের সঙ্গে অধিকাংশ সময় কাটত রান্নাঘরে। তখন পাঁচ বছর বয়সী তনিমাকে গল্পের ছলে মঙ্গলগ্রহে মহাকাশযান অবতরণ সম্পর্কে বলেছিলেন তাঁর মা। মায়ের মুখে শোনা গল্পে মহাকাশ নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন অনন্যা। জ্যোতির্বিদ্যায় পড়াশোনার চিন্তা ভর করে তাঁর মাথায়। ঠিক দুই যুগ পর রহস্যে ঘেরা ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরের বেড়ে ওঠা এবং পরিবেশের ওপর এর প্রভাব নিয়ে পূর্ণাঙ্গ চিত্র এঁকে বাজিমাত করলেন তনিমা। ২৯ বছর বয়সী অনন্যা এখন সম্ভাবনাময় জ্যোতির্পদার্থবিদ। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক সায়েন্স নিউজ তনিমা তাসনিম অনন্যার এ সাফল্যে তালিকার শুরুতেই তাঁকে স্থান দিয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জনপ্রিয় গণমাধ্যমটি। যেখানে অনন্যার কাজকে ‘অসাধারণ গবেষণা’ বলে উল্লেখ করা হয়। চলতি বছর এ তালিকায় স্থান পাওয়া প্রত্যেকেই ৪০ বা এর চেয়েও কম বয়সী। তাঁরা প্রত্যেকেই নোবেল বিজয়ীদের দ্বারা মনোনীত হয়েছেন। সায়েন্স নিউজের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি অনন্যা সবচেয়ে ভারী কৃষ্ণগহ্বর আঁকতে সক্ষম হয়েছেন। সচিত্র গবেষণায় তিনি দেখিয়েছেন, মহাবিশ্বে কোথায় কীভাবে কৃষ্ণগহ্বর বেড়ে উঠছে এবং কীভাবে তারা পরিবেশকে প্রভাবিত করছে। তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে এটি সম্পন্ন করেছেন।

অনন্যা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ছোটবেলা থেকে আগ্রহের কারণে মহাকাশবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তবে বাংলাদেশে এ বিষয়ে তেমন পড়াশোনার সুযোগ না থাকায় তিনি বিদেশে যেতে আগ্রহের কথা পরিবারকে জানান। প্রথমে কোনোভাবেই বিদেশে পড়তে যেতে দিতে রাজি ছিল না তাঁর পরিবার। তবে অনন্যার আগ্রহের কাছে হার মেনেছেন তাঁর বাবা-মা। ২০০৬ সালে অনন্যার বয়স যখন ১৫ ছুঁইছুঁই, তখনই ইন্টারন্যাশনাল জেনারেল সার্টিফিকেট অব সেকেন্ডারি এডুকেশন কোর্স শুরু করেন তিনি। লক্ষ্য ছিল ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জন করে বিদেশে পাড়ি জমানোর। সে মিশনেও বাজিমাত করে এখন দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন অনন্যা।

সর্বশেষ খবর