মঙ্গলবার, ২৩ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

কর্ণফুলী টানেল পাল্টে দেবে অর্থনৈতিক চিত্র

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

কর্ণফুলী টানেল পাল্টে দেবে অর্থনৈতিক চিত্র

কর্ণফুলীর নদীর তীর ও আশপাশ এলাকাজুড়েই চলছে টানেল নির্মাণের বিরামহীন কর্মযজ্ঞ। বিশাল এ কর্মযজ্ঞ থেকে বাদ যায়নি নদীর তলদেশও। দেশি ও বিদেশি হাজারও শ্রমিকের সমন্বিত প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিকেই এগোচ্ছে। কাজের এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হবে উপমহাদেশের প্রথম নদী তলদেশের টালেন। এ টানেল দিয়ে বছরে প্রায় ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারবে।

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ হলে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউনে’ পরিণত হবে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। নদীর তলদেশে দুই টিউব বিশিষ্ট এ টানেলের সঙ্গে যুক্ত হবে কক্সবাজার-মিরসরাই মেরিন ড্রাইভ। যা এক সময় সম্প্রসারিত হবে মিয়ানমার হয়ে চীনের কুনমিং সিটি পর্যন্ত। এ টানেলকে ঘিরে চলবে বিশাল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। ফলে টানেল পাল্টে দেবে চট্টগ্রাম তথা দেশের অর্থনৈতিক চিত্র। দ্রুততার সঙ্গে কাজ শেষ করছে প্রায় এক হাজার শ্রমিক রাত-দিন কাজ করছে। কর্ণফুলী টানেলের দৈর্ঘ্য হবে তিন কিলোমিটারের চেয়ে কিছু বেশি। চট্টগ্রাম নগরীর নেভাল একাডেমির পয়েন্ট দিয়ে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে প্রবেশ করে তা কর্ণফুলী নদীর ওপারে ফার্টিলাইজার কোম্পানি (কাফকো) এবং চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) মাঝামাঝি স্থান দিয়ে বের হবে। নদীর তলদেশে যার গভীরতা হবে ৩৯ ফুট (১২ মিটার) থেকে ১১৮ ফুট (৩৬ মিটার)। টানেলে দুটি টিউব বসানো হচ্ছে। এরই মধ্যেই একটি টিউব খনন কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে ওই টিউব সড়ক নির্মাণ ও যান চলাচল করার উপযোগী করা হচ্ছে। দ্বিতীয় টিউব খননের কাজও চলছে দ্রুততার সঙ্গে। টানেল নির্মাণের কাজ শেষ হলে একটি দিয়ে গাড়ি শহরপ্রান্ত থেকে প্রবেশ করবে, আরেক টিউব দিয়ে ওপার  থেকে শহরের দিকে আসবে। প্রতিটি টিউব চওড়ায় ৩৫ ফুট এবং উচ্চতায় হবে প্রায় ১৬ ফুট। প্রতিটা টিউবে বসানো হবে দুটি স্কেল। বর্তমান টানেল নির্মাণকে ঘিরে চলছে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার শ্রমিকের চলছে বিরামহীন কর্মযজ্ঞ। যার মধ্যে দেশি শ্রমিক রয়েছে প্রায় ৭০০ এবং বিদেশি শ্রমিক রয়েছে ২৪৫ জন। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দাবি, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা বিবেচনায় কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ শুরু হয়েছে। যা টানেলের সঙ্গেই যুক্ত হবে। নগরীর আউটার রিং রোড কাজ করবে টানেলের এপ্রোচ সড়ক হিসেবে। টানেল সড়কের সঙ্গে যুক্ত হবে মিরসরাই ইকোনমি জোন, আনোয়ারার চীনা ইকোনমিক জোন, বে-টার্মিনাল, মহেশখালীর এলএনজি টার্মিনাল। কর্ণফুলী টানেল হয়ে মেরিন ড্রাইভ যাবে কক্সবাজারের টেকনাফ পর্যপ্ত। পরবর্তিতে তা মিয়ানমার হয়ে প্রসারিত হবে চীনের কুনমিং সিটি পর্যন্ত। কর্ণফুলী টানেলের এক প্রান্তে রয়েছে চট্টগ্রাম নগরী, বিমান ও সমুদ্র বন্দর। অপর প্রান্তে আনোয়ারার ভারী শিল্প এলাকা। বিভক্ত দুই অংশকে একই সুতোয় যুক্ত করতে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার টানেল নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৫ সালের নভেম্বরে অনুমোদন পায়। বাংলাদেশ সরকার ও  চাইনিজ এক্সিম ব্যাংক এ প্রকল্পের যৌথ অর্থায়ন করছে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। আগামী ২০২২ সালের মধ্যে এ টানেলটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি পুরোদমে চালু হলে প্রতিবছর প্রায় ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রকল্পটি পুরোদমে চালু হলে পাল্টে যাবে চট্টগ্রাম তথা দেশের অর্থনীতি। বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে শিল্পকারখানা ও পর্যটন শিল্পের।

সর্বশেষ খবর