বুধবার, ২৪ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা
লুৎফর রহমান

ছিলেন লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস মেয়র

ছিলেন লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস মেয়র

যুক্তরাজ্যে লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত লুৎফর রহমান। তাও আবার দুবার! প্রথমবার ২০১০ সালে এবং দ্বিতীয়বার ২০১৪ সালে নির্বাহী মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। মেয়র নির্বাচনের আগ পর্যন্ত লুৎফর রহমান একই অঞ্চলের পৌর পরিষদের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

বাংলাদেশের সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার সিকন্দরপুর গ্রামে লুৎফর রহমানের জন্ম। অল্প বয়সে লুৎফর রহমানের বাবা সপরিবারে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। জীবিকা আর আবাসনের তাগিদে লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। স্কুলের পাঠ চুকিয়ে লুৎফর রহমান লন্ডনের সিটি ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগে আইন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। পরবর্তীকালে আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে আইন পেশায় মনোনিবেশ করেন। একজন সলিসিটর এবং পারিবারিক আইন বিষয়ে কাজ করে থাকেন। তরুণ বয়সেই লুৎফর রহমান স্থানীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক সমাজকর্মে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৮৫ সালে লুৎফর রহমান স্পাইটালফিল্ডের প্রগ্রেসিভ ইয়ুথ অর্গানাইজেশনের সদস্য ও পরে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯০ সালে তিনি কিন স্টুডেন্টস সাপ্লিমেন্টারি স্কুলের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেন। এছাড়াও তিনি কমিউনিটি অ্যালায়েন্স ফর পুলিস অ্যাকাউন্টিবিলিটি নামক প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সম্পাদক ও টাওয়ার হ্যামলেটস ল’ সেন্টার নামক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি বার্টস ও দ্য লন্ডন এনএইচএস ট্রাস্টের একজন অনির্বাহী পরিচালক।

লুৎফর রহমান ২০০২ সালে লন্ডন পৌর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে পা রাখেন। পরবর্তীকালে স্পাইটালফিল্ড-বাংলাটাউন অঞ্চল থেকে লেবার সমর্থিত কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হন। একই আসন থেকে তিনি ২০০৬ সালের নির্বাচনেও অংশ নেন এবং দ্বিতীয়বারের মতো কাউন্সিলর হন। কাউন্সিলর হওয়ার পাশাপাশি তিনি টাওয়ার হ্যামলেটস পৌর কর্তৃপক্ষে শিক্ষা বিষয়ক দলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের জন্য লেবার পার্টির মনোনয়ন বাছাই শুরু হলে কাউন্সিলর লুৎফর রহমান তাতে অংশ নেন। কিন্তু স্থানীয় প্রতিনিধিদের ভোটে তিনি সামান্য ব্যবধানে স্থানীয় অপর লেবার নেত্রী রুশনারা আলীর কাছে হেরে যান। পরবর্তীতে রুশনারা আলী ২০১০ সালের সাধারণ নির্বাচনে লেবার প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে বিজয়ী হন ও প্রথম বাংলাদেশি বংশো™ভূত ব্রিটিশ এমপি নির্বাচিত হন। অবশ্য পরের বছরই লুৎফুর রহমান বাংলাদেশি বংশো™ভূত ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ হিসেবে নতুন ইতিহাস রচনা করেন। লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাচনে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রথম মেয়র হন। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে লুৎফর রহমান স্থানীয় লেবার প্রতিনিধিদের ভোটে টাওয়ার হ্যামলেটসের একই বছরে অনুষ্ঠিতব্য সরাসরি ভোটের মেয়র নির্বাচনের জন্য মনোনীত হন। পরবর্তীতে এই মনোনয়নটি বিতর্কিত হয়ে পড়ে এবং একাধিক বার তা বাতিলের উপক্রম হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে লুৎফর রহমান আদালতের শরণাপন্ন হন এবং আদালতের রায়ে তার মনোনয়ন বহাল থাকে। লুৎফর রহমান প্রতিনিধি ভোটে স্থানীয় অপর লেবার প্রার্থীদের পরাজিত করে মনোনয়ন নিশ্চিত করেন এবং লন্ডনের আঞ্চলিক লেবার কর্তৃপক্ষের পরিচালক কেন ক্লার্ক লুৎফর রহমানকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন। তবে নানা টানাপড়েন আর রাজনৈতিক জটিলতা কাটিয়ে- ২৮ অক্টোবর, ২০১০ তারিখে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে লুৎফর রহমান প্রদত্ত ভোটের ৫১ শতাংশ ভোট লাভ করে বিপুল বিজয় অর্জন করেন।  নির্বাচনের মধ্য দিয়ে লুৎফর রহমান শুধু টাওয়ার হ্যামলেটসের সরাসরি ভোটের প্রথম মেয়রই নন, তিনি ব্রিটেনের ইতিহাসের প্রথম মুসলিম নির্বাহী মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন। মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর লুৎফর রহমান নির্বাচিত দলীয় কাউন্সিলরদের উদ্দেশে তার ক্যাবিনেটে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। পাঁচজন লেবার দলীয় কাউন্সিলর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে লুৎফরের সঙ্গে যোগ দেন। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত এক পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, লুৎফর রহমান স্থানীয় পৌর নেতা হিসেবে তার পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দক্ষভাবে মেয়রের দায়িত্ব পালন করছিলেন। মেয়র হিসেবে লুৎফর রহমান কনজারভেটিভ সরকারের ব্যয়কর্তন প্রক্রিয়াকে প্রতিহত করার লক্ষ্য নিয়ে স্থানীয় লেবার এমপিদের সঙ্গে একযোগে কাজ করছেন বলেও পর্যবেক্ষণে দেখা গিয়েছে। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাহী মেয়র নির্বাচিত হন বাংলাদেশি বংশো™ূ¢ত লুৎফর রহমান। তবে সেবারের নির্বাচন বিতর্কিত হয় এবং সে মেয়াদে তিনি মেয়র হিসেবে বেশি দিন থাকতে পারেননি। ২০১৫ সালে লুৎফর রহমানকে ইলেকশন কোর্টের রায়ে টাউন হল ছাড়তে হয়েছিল। ৫ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল নির্বাচন থেকে। সলিসিটর পেশাতেও তাকে নিষিদ্ধ করা হয়। ইলেকশন কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলেরও সুযোগ পাননি লুৎফর রহমান। যদিও ভোট জালিয়াতি ও কাউন্সিলের অর্থ অপব্যবহারের অভিযোগ তদন্তের মধ্যেই লল্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটের মেয়র বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত লুৎফর রহমান বলেছেন, বিতর্কিত হয়ে তিনি গর্বিত। এদিকে তদন্তে লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে অপরাধের কোনো প্রমাণ খুঁজে পায়নি যুক্তরাজ্যের পুলিশ। মামলার রায়ের পর ২০১৫ সাল থেকে লুৎফর রহমান অনেকটা নীরব ছিলেন। প্রকাশ্যে না আসায় রাজনীতিতে তাকে নিয়ে ছিল না কোনো আলোচনা। তবে এখন তিনি বিভিন্নভাবে আবারও আলোচনায় চলে এসেছেন। তার সমালোচকদের মধ্যেও এখন সাবেক এই নির্বাহী মেয়রকে নিয়ে চলছে আলোচনা। যারা এতদিন নেতিবাচক আলোচনায় ছিলেন তাদের সুরও এখন অনেকটা নামছে। লোকমুখে কথিত আছে, আবারও রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হচ্ছেন সাবেক মেয়র লুৎফর রহমান। আসছে ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যে লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র নির্বাচনে তিনি আবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

সর্বশেষ খবর