শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৫ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

মুক্তিযুদ্ধে বিলাত প্রবাসী ছাত্রদের ভূমিকা

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন

মুক্তিযুদ্ধে বিলাত প্রবাসী ছাত্রদের ভূমিকা

মহান মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাজ্যের প্রবাসীরা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব জনমত সৃষ্টিতে বিশাল অবদান রেখেছে। প্রবাসী বাঙালি সংগঠকদের মধ্যে যুক্তরাজ্যে অধ্যয়নরত ছাত্ররা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ইয়াহিয়া খান যখন পাকিস্তানের নির্বাচিত সংসদ ভেঙে দেওয়ার ষড়যন্ত্র শুরু করে, তখন থেকেই লন্ডনে বাঙালি ছাত্রসমাজ পাকিস্তানের অভিসন্ধির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। শুরুটা হয়েছিল পাকিস্তান হাউসে অবস্থিত পাকিস্তান স্টুডেন্ট হোস্টেল থেকে। হোস্টেলের বেইজমেন্টের মিটিং কক্ষে পাকিস্তান স্টুডেন্ট ফেডারেশনের এক সভায় পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতা সম্পর্কে এক সভায় প্রকৃতপক্ষে বেঙ্গল স্টুডেন্ট অ্যাকশন কমিটি গঠনের পটভূমি সৃষ্টি হয়। পাকিস্তান স্টুডেন্ট ফেডারেশনের তৎকালীন বাঙালি সভাপতি একরামুল হকের সভাপতিত্বে ছাত্র ফেডারেশনের সভায় পাকিস্তান সরকারের কাছে একটি মেমোরেন্ডাম প্রদানের ইস্যুকে নিয়ে পাকিস্তানি ও বাঙালি ছাত্রদের মধ্যে মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়। মেমোরেন্ডামের ভাষা ছিল পাকিস্তান সরকারের কাছে একটি আপসমূলক আবেদন। বাঙালি ছাত্ররা তার প্রতিবাদে কঠোর ভাষায় সরকারকে হুঁশিয়ার করার পক্ষে মতামত প্রকাশ করে।

আমি সে সভায় উপস্থিত ছিলাম। ১৯৬৯ সালের ছাত্র গণআন্দোলনের সম্মুখভাগের একজন ছাত্রকর্মী (মুহসীন হলের ছাত্র সংসদের ভিপি ও ছাত্রলীগের নেতা) হিসেবে আমি পূর্ববঙ্গের আন্দোলনের উদ্দেশ্য, কৌশল ও ধারা সম্পর্কে অভিজ্ঞতার আলোকে পাকিস্তান সরকারের কাছে মেমোরেন্ডাম প্রদানকে ‘কামার বাড়িতে কোরআন পড়ার শামিল’ বলে সভায় বক্তব্যে দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছি। সভার এক পর্যায়ে পাকিস্তানি ও বাঙালি ছাত্রদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। সে সভায় বাঙালি ছাত্রদের পক্ষে সরব ভূমিকা রাখেন মোহাম্মদ হোসেন মঞ্জু, সুলতান মাহমুদ শরীফ, ওয়ালী আশরাফ প্রমুখ ছাত্র নেতৃবৃন্দ। এ সভা শেষে বাঙালি ছাত্ররা নিজস্ব সংগঠন ‘বেঙ্গল স্টুডেন্টস অ্যাকশন কমিটি’ গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

৭ মার্চ ঢাকার ঐতিহাসিক জনসভার দিনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণার লক্ষ্যে লন্ডনের হাইডপার্ক স্পিকার্স কর্নারে এক ছাত্র গণসমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশ থেকে শোভাযাত্রা সহকারে পাকিস্তানের দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। এদিন সন্ধ্যার পর পাকিস্তান স্টুডেন্ট হোস্টেলে বাঙালি ছাত্রদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন মোহাম্মদ হোসেন মঞ্জু। সভায় সর্বসম্মতভাবে ‘বেঙ্গল স্টুডেন্ট অ্যাকশন কমিটি’ নামে সংগ্রাম কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয় এবং ১১ জন ছাত্রনেতাকে কমিটির সদস্য নির্বাচিত করা হয়। যারা এ কমিটিতে নেতা নির্বাচিত হন তারা হলেন- মোহাম্মদ হোসেন মঞ্জু, খন্দকার মোশাররফ হোসেন (লেখক), নজরুল ইসলাম, এটিএম ওয়ালী আশরাফ, সুলতান মাহমুদ শরীফ, শফিউদ্দিন মাহমুদ বুলবুল, সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, জিয়াউদ্দিন মাহমুদ, লুৎফর রহমান শাহজাহান, আখতার ইমাম ও কামরুল ইসলাম। উল্লেখিত নেতৃবৃন্দের মধ্যে আমাকে ছাড়া প্রায় সবাই ‘বার-এট-ল’ লাভের জন্য শিক্ষার্থী ছিলেন।

আমি যুক্তরাজ্যে ইম্পেরিয়াল কলেজ অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে পিএইচডি প্রোগ্রামে গবেষণারত ছিলাম। লন্ডনে আমাদের পরিচয় ছাত্র হলেও সবাই নিজ দেশে বিভিন্ন পেশায় প্রবেশ করে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য বিলাতের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর ‘বেঙ্গল স্টুডেন্ট অ্যাকশন কমিটি’র নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ স্টুডেন্টস অ্যাকশন কমিটি ইন ইউকে’ বা ‘যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ রাখা হয়। কমিটিকে সম্প্রসারিত করে ২১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয় এবং তিনজনকে আহ্বায়কের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। আহ্বায়করা ছিলেন, যথাক্রমে মোহাম্মদ হোসেন মঞ্জু (প্রথম), খন্দকার মোশাররফ হোসেন (দ্বিতীয়) এবং নজরুল ইসলাম (তৃতীয়)। স্বাধীনতা ঘোষণার পর ১২ এপ্রিল (১৯৭১ খ্রি.) তারিখে মোহাম্মদ হোসেন মঞ্জু ও সুলতান মাহমুদ শরীফ সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য কলকাতা গমন করেন। তারপর আমাকেই আহ্বায়কের সব দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অপর আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম ৩৫ নম্বর হোবর্নের গ্যামেজেজ বিল্ডিংয়ে তার নিজস্ব অফিসকে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অফিস স্থাপনের জন্য বিনা ভাড়ায় ছেড়ে দেন।

২৫ মার্চের গণহত্যার ঘটনার সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশনের সভায় যোগদানের জন্য জেনেভায় অবস্থান করছিলেন। মর্মান্তিক ও জঘন্য হত্যাযজ্ঞের খবর পেয়ে তিনি সভা পরিত্যাগ করে লন্ডনে চলে আসেন। তিনি লন্ডনে পৌঁছার খবর পেয়ে ছাত্র সংগ্রামের পক্ষ থেকে আমি, শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক (পরবর্তীতে বিচারপতি ও বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) এবং রাজিউল হাসান রঞ্জু বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেছি। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমরা তাকে অনুরোধ করি (আবু সাঈদ চৌধুরীর বই ‘প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলি’ পাতা-১১)।

লন্ডন আগমনের কয়েকদিনের মধ্যে সুলতান মাহমুদ শরীফ, মোহাম্মদ হোসেন মঞ্জু ও এটিএম ওয়ালী আশরাফ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে একই অনুরোধ করেন। তিনি আমাদের অনুরোধে সায় দিয়ে বিষয়টি কৌশলগত কারণে কিছুদিন গোপন রাখার পরামর্শ দেন। ১০ এপ্রিল বিচারপতি চৌধুরী বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। এর কয়েকদিনের মধ্যে বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে প্রবাসে বিশ্বের প্রতিনিধি পদে নিয়োগ প্রদান করে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টির জন্য বিচারপতি চৌধুরীর মতো একজন ব্যক্তিত্ব ওই সময় খুবই অপরিহার্য ছিল। বিচারপতি চৌধুরীও মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণ সময়কালে বিদেশে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। তার স্বীকৃতি হিসেবেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১২ জানুয়ারি (১৯৭২ খ্রি.) বিচারপতি চৌধুরী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হন।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বজনমত সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন মহলের কাছে আবেদন ও মেমোরেন্ডাম প্রদান করা শুরু হয়। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্যরা ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সুধীজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে যুদ্ধের যথার্থতা প্রমাণ করার আপ্রাণ চেষ্টা করে। প্রথমদিকে মুক্তিযুদ্ধকে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন আখ্যা দিয়ে অনেকেই আমাদের বক্তব্য শুনতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে। কিন্তু পাকিস্তানের মানচিত্র দেখিয়ে পূর্ববঙ্গের ভৌগোলিক অবস্থান দেখানোর পর অনেকে আমাদের কথা শোনার আগ্রহ দেখায়।

মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে ব্রিটিশ এমপি, দূতাবাসের প্রধান, সাংবাদিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে অসংখ্য আবেদন ও মেমোরেন্ডাম প্রদান করা হয়। উল্লেখিত আবেদন ও মেমোরেন্ডাম নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে লবিং ও আলোচনা করা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সদস্যদের বিশেষ দায়িত্ব ছিল। বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পূর্ণ সময়ে বিভিন্ন ইস্যু ও বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের সাফল্য সংবলিত বিভিন্ন তথ্যের বিবরণী দিয়ে ‘ফ্যাক্ট সিট (Fact Sheet)’ প্রকাশ ও বিতরণ করে। ২৮ মার্চ (১৯৭১ খ্রি.) প্রথম ফ্যাক্ট সিট (Fact Sheet-1) এবং সর্বশেষ ফ্যাক্ট সিট ৩ ডিসেম্বর (১৯৭১ খ্রি.) প্রকাশিত হয়। উল্লেখিত সময়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ২০টি ফ্যাক্ট সিট প্রকাশ করে। ফ্যাক্ট সিটে প্রকাশিত তথ্য বিবিসি বাংলা এবং বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তথ্য সূত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ব্রিটিশ এমপি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে বিতরণের জন্য (১) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনের ঘোষণা “Peoples Republic of Bangladesh”; (২) Conflict in East Pakistan : Background and prospect”; (৩) “The murders of a people’’; (৪) “ Why Bangladesh” এবং (৫) “Six months of Liberation Struggle” নামে পাঁচটি পুস্তিকা প্রকাশ করে।

বাংলাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও বর্বরোচিত আচরণকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার উদ্দেশে যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের বাসভবনের সামনে ২৮ মার্চ (১৯৭১ খ্রি.) অনশন ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও আফরোজ আফগান চৌধুরী অনশন ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করে। ৩১ মার্চ (১৯৭১ খ্রি.) ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লেবার দলীয় এমপি পিটার শোর ফলের রস পান করিয়ে অনশন ভঙ্গ করান। উল্লেখিত চার দিন লন্ডনের হাজার হাজার বাঙালি অনশনরতদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করার জন্য ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে সমবেত হয়ে প্রতিবাদে শামিল হয়। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসনকে সমর্থন দিয়ে আসছিল। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে মার্কিন দূতাবাসের সামনে অনশন ধর্মঘটের আয়োজন করা হয়। অনশনে অংশগ্রহণ করেন, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্য আবদুল হাই এবং রিজিয়া চৌধুরী। বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের ঘটনার প্রতি মার্কিন প্রশাসনসহ বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণের লক্ষ্যে ১৫ আগস্ট (১৯৭১ খ্রি.) লন্ডনস্থ মার্কিন দূতাবাসের সামনে এক ব্যতিক্রমধর্মী প্রতীকী প্রতিবাদ ‘হত্যা অভিনয়’ মঞ্চস্থ করা হয়। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে এবং ‘অ্যাকশন বাংলাদেশের’ সহযোগিতায় এ ‘পথ নাটক’ প্রদর্শন করা হয়। দূতাবাসের সামনে পায়েচলা রাস্তায় শাড়ি পরিহিত মহিলাসহ কয়েকজন বাঙালি হেঁটে যাওয়ার সময়ে তিনটি গাড়িবোঝাই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পোশাক পরিহিত সৈন্য নির্বিচারে তাদের গুলি করে মেরেছে। প্রতীকী লাশগুলো রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। লন্ডন থেকে প্রকাশিত মর্নিং স্টার পত্রিকায় ছবিসহ এ খবর প্রকাশিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধ আনুষ্ঠানিক শুরুর আগ থেকেই ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্ব জনমত সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের পাশাপাশি জনসমাবেশ, মিছিল ও বিক্ষোভ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ঢাকায় গণহত্যার প্রতিবাদে ২৭ মার্চ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে লন্ডনস্থ পাকিস্তান দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য ছাত্র গণসমাবেশের আয়োজন করে। এক পর্যায়ে সমাবেশ থেকে ছুটে গিয়ে কয়েকজন সাহসী বাঙালি পাকিস্তানের দূতাবাসে ঢুকে তাদের জাতীয় পতাকাতে অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে মো. ইসহাক ও সিরাজুল হককে লন্ডন পুলিশ গ্রেফতার করে। সমবেত বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের খবরে এতটাই বিক্ষুব্ধ ছিল যে, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ জঙ্গিরূপ ধারণ করেছিল। ৪ এপ্রিল (১৯৭১ খ্রি.) রবিবার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে হাইডপার্ক স্পিকার্স কর্নারে এক বিশাল ছাত্র গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা ঘোষণার পর হাইডপার্কের প্রথম সমাবেশে ছাত্রদের চেয়ে অনেক বেশি বিভিন্ন পেশার বাঙালিরা সমবেত হয়েছিলেন। মোহাম্মদ হোসেন মঞ্জুর সভাপতিত্বে এ সমাবেশে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে আমি ও এটিএম ওয়ালী আশরাফ, মহিলা সমিতির পক্ষে জেবুন্নেসা বখত, ডাক্তার সমিতির এমএইচ জোয়ার্দার ও লন্ডন আওয়ামী লীগের পক্ষে সুলতান মাহমুদ শরীফসহ অন্য নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

৪ এপ্রিলের সমাবেশ ও মিছিল ছিল ঐতিহাসিক। পরের দিন মিছিলের দৃশ্য লন্ডনের পত্র-পত্রিকায় ফলাওভাবে প্রকাশিত হয়। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতিশীল এমপি ব্রুস ডগলাসম্যানের নেতৃত্বে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ১৬০ জন সদস্য পার্লামেন্টে ‘পূর্ববঙ্গ’ পরিস্থিতি আলোচনার জন্য প্রস্তাব পেশ করে। ১৩ মে সন্ধ্যায় অধিবেশনে এ প্রস্তাব উত্থাপন হওয়ার তারিখ নির্ধারিত থাকায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও মহিলা সমিতির যৌথ উদ্যোগে পার্লামেন্ট ভবনের চতুর্পার্শ্বে মোমবাতি (Candle Light) জ্বালিয়ে বেষ্টনী স্থাপনের মাধ্যমে একটি ব্যতিক্রমধর্মী অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। মোমবাতি বেষ্টনী প্রোগ্রামটি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সব সদস্য ও লন্ডনবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং পরের দিন সংবাদটি লন্ডনের কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৪ মে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আলোচনা অব্যাহত থাকে। ওইদিন বেলা ১১টা থেকে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আয়োজনে পুনরায় অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচিতে শত শত বাঙালি অংশগ্রহণ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক বিজয় বলে অভিহিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এ ধরনের অসংখ্য সমাবেশ, শোভাযাত্রা, বিক্ষোভ ও লবিংয়ের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে জনমত সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।

ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তার নিজস্ব কাজের গন্ডির বাইরেও বাংলাদেশ সমর্থনকারী বিভিন্ন ব্রিটিশ ও অন্যান্য পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে বেশ কয়েকটি সংগঠন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন। তার মধ্যে ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’ ; ‘বাংলাদেশ গণসংস্কৃতি সংসদ’ এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন (ULU) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের নাম উল্লেখযোগ্য। পাক্ষিক ‘পিস নিউজ’ পত্রিকা অফিসে আমাদের উদ্যোগে আগ্রহী ব্রিটিশ নাগরিকদের সমন্বয়ে ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’ নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সভায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে আমি ও সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, পত্রিকার সম্পাদক রজার মুডি ও ব্রিটিশ উদ্যোগী যুবনেতা (ইয়ং লিবারেল) পল কনেট, মিস ম্যারিয়েটা প্রকোপ এবং ব্রিটিশ এমপি মাইকেল বার্নসসহ বেশ কয়েকজন ব্রিটিশ নাগরিক অংশগ্রহণ করে। ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’র সভাপতি হিসেবে পল কনেট এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ম্যারিয়াটা প্রকোপকে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। ১ জুলাই (১৯৭১ খ্রি.) ট্রাফেলগার স্কোয়ার থেকে ‘অপারেশন ওমেগা’ নামে একটি টিমকে            খাদ্য ও ওষুধ সামগ্রীসহ বাংলাদেশে প্রেরণ এবং ১ আগস্ট ট্রাফালগার স্কোয়ারে বিশাল সমাবেশ আয়োজন, ৩০ জুন দি টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত পূর্ণপাতা বিজ্ঞাপন প্রকাশ ছিল, ‘অ্যাকশন বাংলাদেশের’ অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে অন্যতম। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও মহিলা সমিতির কিছু উৎসাহী নেতা এবং কর্মীকে সংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। লন্ডনের টেভিস্টক প্যালেসের ৫৯ নম্বর সেমুর হাউসে মিসেস মুন্নী শাহজাহানের বাসভবনে ‘বাংলাদেশ গণসংস্কৃতি সংসদ’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংস্থা গঠন করা হয়। বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এনামুল হককে (উচ্চতর শিক্ষারত) সভাপতি ও মিসেস মুন্নী রহমান শাহজাহানকে সাধারণ সম্পাদিকা নির্বাচিত করে ১৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে গণসংস্কৃতি সংসদ তাদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মধ্যে ‘অস্ত্র হাতে তুলে নাও’ শীর্ষক নৃত্যনাট্য সমগ্র ব্রিটেনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়া লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদে বাংলাদেশ ইস্যুকে জাগ্রত রাখার উদ্দেশ্যে ছাত্র সংসদের সভাপতি ফিলিপ ব্লার্কের সহযোগিতায় আমি ‘বাংলাদেশ চ্যাপ্টার’ গঠন করি। প্রথমে এই সংগঠনের সভাপতি হিসেবে আমি এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নুরুল আবছার দায়িত্ব গ্রহণ করি।

পূর্ববঙ্গে গণহত্যার কারণে সৃষ্ট পাকিস্তানের বিরূপ ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে এপ্রিল মাসে পাকিস্তান ক্রিকেট টিমকে ব্রিটেনে প্রেরণ করে। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ পাকিস্তানের পরিকল্পনাকে প্রশ্নবিদ্ধ এবং পাকিস্তানিদের হাত রক্তে রঞ্জিত থাকার বিষয়ে বিশ্বকে জানান দেওয়ার জন্য পাকিস্তান ক্রিকেট টিমের সফরের প্রতিবাদ ও যথাসম্ভব প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৮ এপ্রিল (১৯৭১ খ্রি.) যুক্তরাজ্যস্থ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভায় আমার (লেখক) সভাপতিত্বে নিম্নবর্ণিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। (১) ২৪ এপ্রিল বিকাল ৪টায় হিথরো বিমানবন্দরে ক্রিকেট টিমের অবতরণের সময়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন; (২) ক্রিকেট খেলার জন্য নির্ধারিত মাঠের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন; (৩) ২৮ এপ্রিল পাকিস্তান ক্রিকেট টিমকে ইংলিশ স্পিকিং ইউনিয়নের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে প্রতিহত করা এবং (৪) পাকিস্তান ক্রিকেট সফরকে প্রতিবাদের জন্য ‘ইয়ং লিবারেল’সহ বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন। এ সিদ্ধান্ত ২৩ এপ্রিল চার্লস ডিকলসে প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে মিডিয়াকে জানানো হয়। কর্মসূচি মোতাবেক ২৪ এপ্রিল হিথরো বিমানবন্দরে শত শত বাঙালি ছাত্র-জনতা সমবেত হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ক্রিকেট খেলোয়াড়দের পেছনের গেট দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনায় পাকিস্তান এয়ারলাইন্সের বিমানবন্দরস্থ ডেস্ক ভাঙচুর করা হয়। ১ মে তারিখে পাকিস্তানের ক্রিকেট সফরের সমালোচনা করে ‘দি গার্ডিয়ান’ পত্রিকায় সম্পাদকীয় নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। ৬ মে বার্মিংহামের নিকটবর্তী ‘এজবাস্টন’ ক্রিকেট গ্রাউন্ডে এবং ৮ মে লন্ডনের উত্তরে অবস্থিত নর্থহামটন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের চতুর্পার্শ্বে খেলা অনুষ্ঠানের দিনে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এর আগে ২৮ এপ্রিল ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও স্টিয়ারিং কমিটির উদ্যোগে লন্ডনের ‘মেফেয়ার’ এলাকায় অবস্থিত ইংলিশ স্পিকিং ইউনিয়নের হেড কোয়ার্টারে সফররত পাকিস্তান ক্রিকেট টিমের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রবেশে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী বাধা প্রদান করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ এবং বেশকিছু বাঙালি বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতার করে।

ইউরোপে মুক্তিযুুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ও সম্মেলনে লবিং, প্রচারপত্র এবং বুকলেট বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মকান্ড  পরিচালনার জন্য প্রতিনিধি প্রেরণ করে। ৩০ আগস্ট থেকে অনুষ্ঠিত ‘বিজ্ঞান ও বিশ্বশান্তি’ সম্মেলনে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের প্রতিনিধি হিসেবে মোহাম্মদ হোসেন মঞ্জুকে এবং বুদাপেস্টে অনুষ্ঠিত ‘বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে’ এটিএম ওয়ালী আশরাফকে বাংলাদেশের পক্ষে লবিং ও প্রচার চালানোর জন্য প্রেরণ করা হয়। ১ সেপ্টেম্বর (১৯৭১ খ্রি.) থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সম্মেলনে ৭০টি দেশের পার্লামেন্ট সদস্যদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচারণা চালানোর জন্য ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের একটি প্রতিনিধি দল প্রেরণ করা হয়। প্রতিনিধি দলে আমি (লেখক), মোহাম্মদ হোসেন মঞ্জু, একে নজরুল ইসলাম এবং এএইচ প্রামাণিক প্যারিস গমন করি। এ ছাড়া হল্যান্ডের ‘ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ কর্তৃক আয়োজিত এক প্রেস কনফারেন্সে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে আমি ও নজরুল ইসলাম এবং বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর প্রতিনিধি হিসেবে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্য ও ‘জনমত’ পত্রিকার সম্পাদক এটিএম ওয়ালী আশরাফ অংশগ্রহণ করি। এ সফরে আমরা হল্যান্ড ও বেলজিয়াম সফর করে বিভিন্ন সভায় যোগদান করি। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচারকে আরও জোরদার করার লক্ষ্যে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ৩০ অক্টোবর (১৯৭১ খ্রি.) লন্ডনের হেনরি থর্নটন স্কুলে যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে একটি ‘জাতীয় ছাত্র সম্মেলনের’ আয়োজন করা হয়। ইউরোপ ও ব্রিটেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র প্রতিনিধিরা সম্মেলনে যোগদান করেন। এ উপলক্ষে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ‘Six months of Liberation Struggle নামে একটি স্মারকপত্র প্রকাশ করে। সম্মেলনে বিচারপতি চৌধুরী, ব্রিটিশ এমপি পিটার শোর, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন (ULU) এর সভাপতি ফিলিপ ক্লার্ক, ফ্রান্স জাতীয় ছাত্র ফেডারেশনের প্রতিনিধি ফ্যানসিওস সেইনট্রন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের বিভিন্ন কর্মকান্ডের পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ করা এ স্বল্প পরিসরে সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি ও স্টিয়ারিং কমিটির প্রধান বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী তাঁর রচিত ‘প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলি’ বইয়ের ১৪৬ নম্বর পাতায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অবদানের প্রশংসা করে লিখেছেন- “গ্রেট ব্রিটেনের বাংলাদেশ স্টুডেন্টস অ্যাকশন কমিটির অফিস ছিল ১২০ নম্বর হোবর্নের গ্যামেজেজ ভবনের ৩৫ নম্বর কক্ষে। আমাদের সংগ্রাম শুরু হওয়ার মুহূর্ত থেকেই এ সমিতির বিভিন্ন দৃপ্ত কর্মকান্ডের কথা আগেই উল্লেখ করেছি। এই সমিতির প্রাণকেন্দ্র ছিলেন নজরুল ইসলাম। তার অধ্যবসায় ও পরিশ্রম আমাকে মুগ্ধ করেছে। সমিতির আহ্বায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেনও ছিলেন একজন অতি কর্মচঞ্চল মানুষ। এরা এবং এদের সহকর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন আন্দোলনের কাজে।” স্বাধীনতার পর বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির আসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর ২০ ফাল্গুন, ১৩৭৮ বাংলা সালে আমাকে (লেখক) দেওয়া রাষ্ট্রপতির প্যাডে এক পত্রে (ক্রমিক নম্বর- ৬৬৮) তিনি লিখেছেন, “আমাদের দেশের বিগত সংকটের সময় গ্রেট ব্রিটেনের বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্যগণ মাতৃভূমির প্রতি যে মহান আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন, তা চিরদিন বাংলাদেশের মানুষ কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ রাখবেন। প্রবাসী বাঙালিদের মুক্তি সংগ্রামে আপনি যে অমূল্য সহযোগিতা করেছেন, তা আমার কাছে চিরস্মরণীয়।”

 

লেখক : সাবেক মন্ত্রী এবং সাবেক অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ভূ-তত্ত্ব বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সর্বশেষ খবর