রবিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বিক্রয়োত্তর সেবাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করি

নাঈমুর রহমান :- হেড অব বিজনেস প্ল্যানিং, উত্তরা মটরস লিমিটেড

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিক্রয়োত্তর সেবাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করি

দেশে মোটরসাইকেল উৎপাদনের অন্যতম প্রতিষ্ঠান উত্তরা মটরস। দেশীয় বাজারে চাহিদার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির পণ্য প্রধান সারিতে রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন সিসির একাধিক ব্র্যান্ডের  মোটরসাইকেল রয়েছে। সম্প্রতি করোনা মহামারীর প্রভাব শেষে নিজেদের বাণিজ্য ধরে রাখতে নানা পরিকল্পনা নিয়েছে। দেশের মোটরসাইকেল বাজারের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানটির হেড অব বিজনেস প্ল্যানিং নাঈমুর রহমান।

করোনা মহামারীর মধ্যে মোটরসাইকেল বিক্রির প্রভাব কেমন পড়েছে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নাঈমুর রহমান বলেন, বিগত কয়েক বছরে আমরা মোটরসাইকেল শিল্পে বিপুল বিনিয়োগ করেছি, যাতে করে স্বল্পমূল্যে ভালোমানের মোটরসাইকেল ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করতে পারি। ২০২০ সালের মার্চ-এপ্রিল থেকে দেশে প্রথম দফায় করোনার সংক্রমণ শুরু হলে এ খাতে বিপর্যয় নেমে আসে। করোনার প্রথম ধাক্কায় মোটরসাইকেল বিক্রয় প্রায় ৫০ শতাংশ হ্রাস পায়। গত অর্থবছরে যখন একটু একটু করে মোটরসাইকেলের বাজার বৃদ্ধি পেতে শুরু করল তখনই শুরু হলো আবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। এতে  মোটরসাইকেল বিক্রয় আরও হ্রাস পায়। কভিড-১৯ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসায় তুলনামূলকভাবে বিক্রয় বৃদ্ধি পেয়েছে। অধিকাংশ শিল্প প্রতিষ্ঠানই করোনাকালীন প্রথম আঘাত এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। তবে সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তার বাস্তবায়ন হলে মোটরসাইকেল বাজার তার গতি ফিরে পাবে। এ ছাড়াও কাঁচামাল, ডলার রেটের ওঠানামাসহ নানা কারণে মোটরসাইকেলের দাম বাড়তে পারে। দেশে মোটরসাইকেলের বাজারের আকার কেমন এ বিষয়ে তিনি বলেন, অন্যান্য যে কোনো দেশের মতো বাংলাদেশেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে মহামারী করোনার প্রভাবে মোটরসাইকেলের বিক্রয় হ্রাস পেয়েছিল। কিন্তু ২০২০-২১ অর্থবছর এবং চলতি অর্থবছরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও দ্রুত গন্তব্যস্থানে পৌঁছানোর জন্য মোটরসাইকেলের চাহিদা কিছুটা বেড়েছে। গত অর্থবছরে মোটরসাইকেলের আনুমানিক বাজার ছিল প্রায় ৫ লাখ। ক্রমবর্ধমান চাহিদার ফলে চলতি অর্থবছরে মোটরসাইকেলের বাজার সাড়ে ৫ লাখের বেশি হতে পারে। গত বছর উত্তরা মটরস ২ লাখের অধিক মোটরসাইকেল বিক্রয় করেছে এবং আমাদের প্রবৃদ্ধির হার ২০ শতাংশের ওপরে। বর্তমানে আমাদের মার্কেট শেয়ার ৪৫ শতাংশ এরও বেশি।

বাংলাদেশে কবে থেকে মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরু ও তাদের উৎপাদন সক্ষমতা নিয়ে বলেন, বাজাজ অটো লিমিটেডের কৌশল ও প্রযুক্তি এবং বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক সহায়তায় উত্তরা মটরস ২০১৮ সালে বাংলাদেশে একটি মোটরসাইকেল উৎপাদন ও সংযোজন কারখানা স্থাপন করেছে। যেখানে প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ আধুনিক ও মানসম্মত মোটরসাইকেল উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে। অতি শিগগিরই এর উৎপাদন ক্ষমতা সাড়ে ৩ লাখ উন্নীত করার জন্য ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমাদের দেশে এখনো এ সেক্টরে ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ কারখানা অপ্রতুল। অবকাঠামোগত সুবিধাসহ ভেন্ডরদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে এবং যৌথ বিনিয়োগের সুযোগ দিতে হবে। তবেই এ খাত আরও সমৃদ্ধ হবে।

উত্তরা মটরসের বাজারজাত করা ব্র্যান্ডের বিশেষত্ব কী এমন প্রশ্নে নাঈমুর রহমান বলেন, বাজাজ আধুনিক প্রযুক্তির ও মানসম্মত ডিটিএস ইঞ্জিনসংবলিত মোটরসাইকেল যা বাংলাদেশের ক্রেতাদের প্রথম পছন্দের মোটরসাইকেল। বাজাজ অটো লিমিটেড সর্বদাই সেরা মানের মোটরসাইকেল উৎপাদন ও সরবরাহের মাধ্যমে বাংলাদেশি ক্রেতাদের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে। যার ফলে প্রতি বছরই দেশের বাজারে বাজাজ মোটরসাইকেলের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বাজাজ ব্র্যান্ডের ইকুইটি খুবই শক্তিশালী। কারণ আমরা ১৯৮০ সাল থেকে বাজাজ মোটরসাইকেল বিপণন করে আসছি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিক্রয়োত্তর সেবা নিশ্চিত ও সম্প্রসারণে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখার পাশাপাশি বিক্রয়োত্তর সেবাকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণভাবে বিবেচনা করি। আমরা আমাদের সুবিশাল সার্ভিস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত নিন্ডিদ্রভাবে সেবা প্রদান করছি। ক্রেতার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে আমরা শুধু সেবা প্রদানের জন্য সার্ভিস ডিলার এবং খুচরা যন্ত্রাংশ সহজলভ্য করার জন্য স্পেয়ার পার্টস ডিলার নিয়োগসহ স্থানীয় ওয়ার্কশপ/মেকানিকদের বিনামূল্যে ও প্রয়োজনীয় বিশেষ টুলস প্রদানসহ আরও অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আমরা অ্যাপভিত্তিক সেবা চালু করেছি। এ ছাড়াও অনলাইনে মোটরসাইকেল বুকিং এবং হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা ইতিমধ্যে নেওয়া হয়েছে, যার দরুন গ্রাহকরা এখন ঘরে বসেই তাদের কাক্সিক্ষত বাজাজ মোটরসাইকেল ক্রয় করতে ও বিক্রয়োত্তর পরিষেবা গ্রহণ করতে পারে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গ্রাহকদের দোরগোড়ায় মোটরসাইকেলটি পৌঁছে দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। তার মধ্যে গুগলে আমাদের প্রত্যেকটি শোরুমের নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর ছাড়াও প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তুকে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ফলে গ্রহকরা এক ক্লিকেই আমাদের ডিলারগণকে সহজেই খুঁজে পাবেন। এ ছাড়াও সর্বস্তরের জনগণের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে বাজাজ মোটরসাইকেল কীভাবে পৌঁছে দেওয়া যায় সে ব্যাপারে প্রতিনিয়ত আমরা কাজ করে যাচ্ছি। উত্তরা মটরস লিমিটেডের পক্ষ থেকে আমরা বাংলাদেশ সরকার এবং সহায়ক বিভাগকে অটোমোবাইল শিল্পের সার্বিক উন্নয়নে সব ধরনের সহায়তার জন্য বিশেষ ধন্যবাদ জানাতে চাই।

সর্বশেষ খবর