রবিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সারা দেশে বাইক রাইডার তৈরিতে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ইয়ামাহা

সুব্রত রঞ্জন দাস :- নির্বাহী পরিচালক, এসিআই মটরস লিমিটেড

নিজস্ব প্রতিবেদক

সারা দেশে বাইক রাইডার তৈরিতে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ইয়ামাহা

দেশীয় মোটরসাইকেল বাজারে তারুণ্যের ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল। ইয়ামাহার একাধিক সিসি ও ডিজাইনের মোটরসাইকেল রয়েছে বাজারে। এসিআই মটরস গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে বাজারজাত করছে ইয়ামাহা। গত দুই বছর করোনার সময় অন্যান্য পণ্যের মতো তুলনামূলক কম সংকটে ছিল মোটরসাইকেলের বাজার। তবে শোরুম বন্ধ থাকায় বিপণনে জটিলতা ছিল। এ কারণে মোটরসাইকেল বাণিজ্যেও প্রভাব পড়েছে। বর্তমানে করোনাকালীন সংকট কাটিয়ে নতুন করে বাজার পরিস্থিতি ও সংকট, সম্ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের মুখোমুখি হয়েছিলেন এসিআই মটরসের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস।

করোনা সংকট কাটিয়ে বর্তমান ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের কার্যক্রম নিয়ে সুব্রত রঞ্জন দাস বলেন, দেশের মোটরবাইক চালকদের প্রতি এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। এর প্রধান কারণ দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী অনেক বিষয় রয়েছে। তবে বাইক চালকরা সিগন্যাল মানেন না, হেলমেট ব্যবহার করেন না, ফুটপাথে উঠে যান। আমরা এসব বিষয় নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করেছি। হেলমেট ব্যবহারের ওপর আমরা সারা দেশে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালিয়েছি। এজন্য রাজধানীতে এখন হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালক খুব বেশি দেখা যায় না। আমরা সারা দেশে বাইকারদের সচেতনতা নিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেছি। বিশেষ করে নারী বাইকারদের ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেছি। প্রাথমিকভাবে বরিশাল, পিরোজপুরসহ ৫টি জেলায় কার্যক্রম শুরু হয়েছে।  মোটর বাইকার হিসেবে বাংলাদেশে ছেলেরাই বেশি। মেয়েদের সংখ্যা সে তুলনায় কম। সে কারণে আমরা নারী বাইকারদের প্রশিক্ষণে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। চলাচলের বাহন হিসেবে কর্মজীবী নারীর জন্য মোটরসাইকেল অনেক বেশি ঝুঁকিমুক্ত নিরাপদ বাহন। যদিও সড়ক ডিসিপ্লিন ঘাটতির জন্য এটাকে অনিরাপদ মনে করা হয়। সড়কের নিরাপত্তা, ডিসিপ্লিন ফেরানোর দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের। সড়ক আরও ডিসিপ্লিনড হলে, ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নত হলে বাইকের মতো নিরাপদ বাহন নেই। ট্রাফিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা হবে। এ ছাড়া ফেসবুকে আমরা সেইফটি সচেতনতামূলক প্রচারণা সব সময় করে থাকি। আমাদের ৪২টি রাইডার ক্লাব আছে, ফেসবুকে এখন ফলোয়ার সংখ্যা ১ লাখেরও বেশি। তাদের সঙ্গে আমরা নানা রকম সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকি। শীতবস্ত্র বিতরণ, ত্রাণ দেওয়াসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করি। 

তিনি আরও বলেন, সড়কের নিরাপত্তা বা নিয়মকানুন ঘাটতির একটি বড় সমস্যা ড্রাইভিং। সরকারের উদ্যোগে দেশে কোনো ড্রাইভিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট নেই। সরকার সহযোগিতা করলে আমরা দেশের ৬৪ জেলায় ট্রেনিং ইনস্টিটিউট করব। তাতে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে।

এসিআই মটরসের নির্বাহী পরিচালক বলেন, আমরা শুরু করেছি খুব বেশি দিন হয়নি। আমাদের যা প্রত্যাশা ছিল, তার চেয়ে ব্যবসা ভালো হয়েছে। মোটরসাইকেল বিক্রিতে ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জনসহ গত বছর আমরা ৮১টি ‘থ্রি-এস’ (সেলস, সার্ভিস, স্পেয়ার) সেন্টার বা কেন্দ্র চালু করেছি। এসব কেন্দ্র থেকে মোটরসাইকেল কেনার পাশাপাশি গ্রাহকরা বিক্রয়োত্তর সেবা নিতে ও যন্ত্রাংশ কিনতে পারবেন। ক্রেতার প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে দ্রুত সেবার বিস্তার ঘটানো হয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ইয়ামাহার সাতটি মডেলের মোটরসাইকেল রয়েছে। এর মধ্যে ১৫০ সিসি ইঞ্জিন ক্ষমতার ৫টি ও ১২৫ সিসির ১টি। ইয়ামাহার মোটরসাইকেলের সবচেয়ে বড় তিনটি বৈশিষ্ট্য হলো বিশ্বাসযোগ্যতা, আরাম ও ভারসাম্য। আমরাই প্রথম এ দেশে ফুয়েল ইনজেকশন প্রযুক্তির মোটরসাইকেল নিয়ে এসেছি। সামনের বছরের শুরুর দিকেই আমরা ১৫৫ সিসির আরওয়ান ফাইভ ভার্সন ৪ বাজারে আসবে। যা এই সেগমেন্টের মধ্যে সবচেয়ে উচ্চ প্রযুক্তির। আর আমাদের আরওয়ান ফাইভ এ বছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি বিক্রি করেছি। পুরো গ্রোথ হয়েছে ১৯ শতাংশ। ইয়ামাহার গ্রোথ হয়েছে ৬৭ শতাংশ।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ইতিমধ্যে সব ধরনের ব্র্যান্ড রয়েছে। তাই বাংলাদেশ থেকে মোটরসাইলের রপ্তানি করার বিষয়টি অতটা মুনাফানির্ভর নয়। তাই দেশের বাজার চিন্তা করে বিপণন করতে হবে। অটো মোবাইল শিল্পে প্রচুর লোকের কাজ হবে। ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ প্রতিষ্ঠান করার ক্ষেত্রে সরকারের এগিয়ে আসা উচিত। মোটরবাইক শিল্পে ৫০০ লোক কাজ করে যে বেতন পায় গার্মেন্ট শিল্পে সেটা ৩ হাজার শ্রমিকের সমান। তাই এখানে প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি। আমাদের দেশের পলিসি স্থিতিশীলতা কম। এটা একটা বড় সমস্যা হিসেবে কাজ করে। তিনি আরও বলেন, মানুষ ইয়ামাহা পছন্দ করে মানের কারণে। সম্পূর্ণ তৈরি মোটরসাইকেল আমদানিতে সব মিলিয়ে ১৫২ শতাংশ কর দিতে হয়। এটা পুনর্বিবেচনা করা উচিত। মোটরসাইকেল উৎপাদকদের সুরক্ষা দিতে আমদানির ক্ষেত্রে উচ্চহারে শুল্ক আরোপ যৌক্তিক নয়। ভারত মোটরসাইকেল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও সেখানে মোটরসাইকেল আমদানিতে শুল্ক ১১০ শতাংশ। একইভাবে বাংলাদেশে স্কুটার আমদানিতেও শুল্কহার অনেক বেশি, এটা কমিয়ে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ করা উচিত। নারীদের স্বচ্ছন্দে চলাফেরার জন্য স্কুটারের আমদানি শুল্ক অবশ্যই কমানো উচিত। 

সুব্রত রঞ্জন দাস বলেন, বাংলাদেশে মোটরসাইকেল রেজিট্রেশন ফি, শুল্ক ও দাম অনেক বেশি। ইয়ামাহা মোটরসাইকেল উচ্চ প্রযুক্তি।  মোটরসাইকেলের জন্য সবার আগে প্রয়োজন ভারসাম্য, নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশবান্ধব হওয়া। ইয়ামাহা এই তিনটি গুণই রক্ষা করে। আমাদের  মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা অনেক বেশি। ডিজাইন, রং, স্টাইলের দিক থেকেও আমরা সেরা। ইয়ামাহা লোয়েস্ট ভাইব্রেটিং করে। আমরা দেশের গ্রাহকদের কাছে সার্ভে করিয়েছি। তাদের ৯০ শতাংশই ইয়ামাহা মোটরসাইকেলের ডিজাইন পছন্দ করেছেন। আমরা দাম কমানোর উদ্যোগ নিয়েছি। অনেক কম দামে  মোটরসাইকেল কিনতে পারবে গ্রাহকরা। প্রিমিয়াম মোটরসাইকেল সিগমেন্টে আমরা আমাদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে চাই। এ জন্য সর্বোচ্চ মানের পণ্য ও সেবা গ্রাহককে দিতে চাই। দেশের আর্থিক প্রবৃদ্ধির পরিকল্পনায় মোটরসাইকেল নিয়ে আসতে চাই। গ্রাহকসেবার জন্য দরজায় গিয়ে সেবা দিতে চাই। আমরা দেশের সর্ববৃহৎ সার্ভিস সেন্টার করেছি। এখানে মাত্র আধা ঘণ্টায় একটি মোটরসাইকেল সার্ভিস করা যাবে।

গ্রাহকদের আরও বেশি চাহিদা পূরণ করবে। ইভ্যালিতে ইয়ামাহা  মোটরসাইকেল নিয়ে গ্রাহক প্রতারণার বিষয়ে তিনি বলেন, তারা আমাদের কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই মোটরবাইক বিক্রি করেছে। আমরা এ কারণে তাদের উকিল নোটিস দিয়েছিলাম। নানা জায়গায় প্রচারণা চালিয়েছি। গ্রাহকদের বলেছি এসবের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগ নেই। তারা যেভাবে মার্কেটিং করেছে সেটা কোনোভাবে সঠিক ছিল না। আমরা আমাদের জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করেছি।

সর্বশেষ খবর