রবিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

সাধারণ মানুষের দোর গোড়ায় যেতে চাই

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের অবশ্যই রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে। চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতিও সম্মান এবং সহানুভূতি পোষণ করতে হবে

সাধারণ মানুষের দোর গোড়ায় যেতে চাই

ডা. এ এম শামীম

ব্যবস্থাপনা পরিচালক ল্যাবএইড গ্রুপ

ল্যাবএইড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ এম শামীম বলেছেন, আমি যখন এমবিবিএস পাস করলাম তখন দেখলাম সেবার জন্য রোগীকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে হতো। এক জায়গায় ডাক্তার দেখানো, টেস্ট, হাসপাতাল, ফার্মেসি বিভিন্ন জায়গায়। এ জন্য রোগী নিয়ে স্বজনদের ভোগান্তির শেষ ছিল না। তখন এক ছাতার নিচে সব স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করলাম। সব স্বাস্থ্যসেবা এবং দক্ষ চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীর সমন্বয়ে ল্যাবএইডের যাত্রা শুরু হলো। এখন দেশে-বিদেশে এই মডেল অনুসরণ করে সেবা দেওয়া হচ্ছে। ৩২ বছর ধরে দেশের মানুষকে সেবা দিচ্ছে এ প্রতিষ্ঠান। সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।

ল্যাবএইডের যাত্রা শুরুর স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, প্রথম দিকে আর্থিক বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। আমি ব্যবসায়িক পরিবারের সন্তান না। বাবা সরকারি চাকরি করতেন। ব্যাংকে গেলাম ঋণের জন্য, সেখান থেকেও খালি হাতে ফিরতে হলো। ১৯৮৪ সালে বাবা অবসরে গেলে তাঁর প্রভিডেন্ট ফান্ডের ৮৫ হাজার টাকা আমাকে দিয়েছিলেন। ওই টাকা দিয়ে আমার যাত্রা শুরু। তবে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী, চারপাশের মানুষের সহযোগিতা সবসময় পেয়েছি। ঢাকায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পর দেখলাম অন্য জায়গাতেও রোগী অনেক, তাদের প্রয়োজন আছে। তখন ময়মনসিংহ, রাজশাহী, চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। যেখানে শূন্যতা দেখি, আমি সেখানে এগিয়ে যাই। ১৯৯৭ সালে মায়ের বুকের ব্যথা নিয়ে ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলাম। এনজিওগ্রাম করানো, পাঁচজন মানুষের থাকা খাওয়া সব মিলিয়ে ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছিল। বাংলাদেশ থেকে অনেক রোগী সেখানে চিকিৎসার জন্য যেত। এরপর ফিরে এসে কার্ডিয়াক হাসপাতাল করি। এখন কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই ২০ হাজার টাকায় এনজিওগ্রাম করতে পারছেন দেশের রোগীরা।

কভিড-১৯ মহামারিকালে বেসরকারি হাসপাতালের ভূমিকা সম্পর্কে ডা. এ এম শামীম বলেন, মার্চ-জুন পর্যন্ত আমাদের করোনা টেস্ট করাতে দেওয়া হয়নি। আমরা এ ব্যাপারে খুব সোচ্চার ছিলাম। জুলাইতে আমরা টেস্ট শুরু করলাম, এরপর রোগী ভর্তি শুরু করলাম। প্রতিদিন ১ হাজার টেস্ট করেছি, প্রতিদিন ৪০ জন রোগী ভর্তি থাকত। এই মহামারিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করেছে। এ কারণে আমাদের দেশে মৃত্যুহার প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে অনেক কম ছিল।

বেসরকারি হাসপাতালে সেবার মান নিয়ন্ত্রণ জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে প্রায় ১০ হাজার হাসপাতাল আছে। এক হাসপাতাল দিয়ে সারা দেশের তুলনা চলে না। ভারতে ন্যাশনাল অ্যাক্রিডেশন বোর্ড ফর হসপিটাল অ্যান্ড হেলথ কেয়ার (এনএবিএইচ) পদ্ধতি চালু করেছে। বেসরকারি হাসপাতাল চালুর দুই বছরের মধ্যে এনবিএইচের অনুমোদন নিতে হয়। দুই বছর পর পর অডিট হয়। এই অনুমোদন নিতে হাসপাতালগুলোকে চিকিৎসার মান সংক্রান্ত অনেক শর্ত পূরণ করতে হয়। আমাদের দেশে অতিদ্রুত এটি চালু করতে হবে। নয়তো হাসপাতাল, চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের বদনাম চলতে থাকবে। পুলিশি তৎপরতা দিয়ে কখনো সমাধান হবে না। স্বাস্থ্য অধিদফতরের আওতায় এই অডিট পদ্ধতি চালু করলে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে অভিযোগ থাকবে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের আরও মানবিক হতে হবে। রোগী এবং স্বজনদের সঙ্গে অবশ্যই ভালো ব্যবহার করতে হবে। রোগী দেখার সময় আরও সময় দিতে হবে। ল্যাবএইড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ এম শামীম বলেন, আমাদের চিকিৎসকরা প্রতি বছর দেশের বাইরে প্রশিক্ষণ নিতে যান। উন্নত প্রযুক্তির পাশাপাশি প্রশিক্ষিত জনবল পাওয়ায় সেবার মান বাড়ছে। বিদেশে যে চিকিৎসা হচ্ছে তার ৯০ ভাগ প্রযুক্তিগত সহযোগিতা আমরা করতে পারছি। তবে দেশে কিডনি এবং লিভার ট্রান্সপ্লান্ট নিয়ে জটিলতা আছে। আমরা এ সেবা দিতে আগ্রহী। দক্ষ চিকিৎসক, উন্নত প্রযুক্তি সবই আছে। কিন্তু কে কিডনি দিল, কে লিভার দিল এ নিয়ে ২০১৪ সালে অনেক সমালোচনা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পুলিশি ঝামেলায় পড়তে হয়। আইনি জটিলতার কারণে রোগীরা সেবা নিতে পারছে না, অন্য দেশে যাচ্ছে রোগীরা। রোগীদের চিকিৎসায় এখনো আর্থিক অসহায়ত্ব দেখি। এ জন্য হেলথ ইন্স্যুরেন্স চালু করা জরুরি।

সর্বশেষ খবর