রবিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

মানসম্মত চিকিৎসা নিশ্চিতে আমরা বদ্ধপরিকর

২০০৮ সালে হাসপাতালটি দেশের প্রথম আন্তর্জাতিক মানের সনদ লাভ করে। তারপর থেকে এই হাসপাতাল এখন পর্যন্ত একমাত্র আন্তর্জাতিক সনদপ্রাপ্ত হাসপাতাল হিসেবে নিরলসভাবে রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করে যাচ্ছে

মানসম্মত চিকিৎসা নিশ্চিতে আমরা বদ্ধপরিকর

ডা. আরিফ মাহমুদ

হেড অব মেডিকেল সার্ভিসেস এভারকেয়ার হসপিটাল

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা এভারকেয়ার হসপিটালের হেড অব মেডিকেল সার্ভিসেস ডা. আরিফ মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর উন্নত এবং আধুনিক চিকিৎসার জন্য বহু রোগী বিদেশ যেয়ে থাকে এবং এতে প্রতি বছর প্রায় ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে চলে যায়। এই পরিস্থিতিতে দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নের জন্য উদ্যোক্তারা দেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। দেশের জনগণকে নিরাপদ চিকিৎসা দিতে ঢাকার বসুন্ধরায় ২০০৫ সালের এপ্রিলে আমাদের হাসপাতাল যাত্রা শুরু করে। মানসম্মত উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিতে আমরা বদ্ধপরিকর।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে চিকিৎসাসেবা মান নিয়ন্ত্রণ পরিমাপের জন্য কোনো সংস্থা এখনো গড়ে ওঠেনি। কিন্তু পাশের দেশ ভারত, মালয়েশিয়া এবং অন্যান্য দেশের নিজস্ব অ্যাকরিডিটেশন সংস্থা আছে। এ জন্য প্রথমেই এই হাসপাতালের উদ্যোক্তারা সেবার মানের নিশ্চয়তা প্রদানে আন্তর্জাতিক মান নিয়ন্ত্রণ জেসিআই অ্যাকরিডিটেশনের জন্য আবেদন করে। এরপর ২০০৮ সালে হাসপাতালটি দেশের প্রথম আন্তর্জাতিক মানের সনদ লাভ করে। তারপর থেকে এই হাসপাতাল এখন পর্যন্ত একমাত্র আন্তর্জাতিক সনদপ্রাপ্ত হাসপাতাল হিসেবে নিরলসভাবে রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করে যাচ্ছে।

এই হাসপাতালে রোগীরা কী ধরনের সেবা পেয়ে থাকে জানতে চাইলে ডা. আরিফ মাহমুদ বলেন, আমাদের আউটপেশেন্ট ডিপার্টমেন্ট, ইমারজেন্সি, অপারেশন থিয়েটার ও ইনপেশেন্ট সেবাসমূহ রয়েছে। ক্যান্সার কেয়ার, ডায়ালাইসিস, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, অর্থোপেডিক, মা ও শিশু, ফিজিওথেরাপির দীর্ঘমেয়াদি সেবা এবং অন্যান্য সেবাসমূহ আমরা দিয়ে থাকি। আমাদের পৃথক নন-কভিড আইসিইউ, ওয়ার্ডের সঙ্গে ক্রিটিক্যাল কেয়ার সেবাসমূহ চালু রয়েছে। রোগীদের  উন্নত ও মানসম্মত চিকিৎসার জন্য উল্লেখযোগ্য হলো -ফার্টিলিটি সেন্টার, জয়েন্ট কেয়ার এবং ওয়েলনেস সেন্টার, নিউরো সায়েন্স (নিউরোলজি, নিউরো সার্জারি, নিউরো আইসিইউ, নিউরো রিহ্যাব), কিডনি ডায়ালাইসিস ও ট্রান্সপ্লান্ট, হার্টের জটিল রোগের আধুনিক চিকিৎসা (বাইপাস, এনজিওপ্লাস্টি, এনজিওগ্রাম, ট্যাভার, পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি)। ক্যান্সারের আধুনিক চিকিৎসা, বিএমটি (অটোলোগাস ও অ্যালোজেনিক ট্রান্সপ্লান্ট) ছাড়াও ২৪ ঘণ্টার জরুরি বিভাগ, ডায়াগনস্টিক ল্যাব, ব্লাডব্যাংকসহ অন্যান্য সুবিধা আছে আমাদের হাসপাতালে।

তিনি আরও বলেন, দেশের স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা নির্ধারিত মাত্রা থেকে অনেক কম। তাই মানসম্পন্ন সেবা দিতে প্রয়োজনীয় জনবলের ঘাটতি আছে। এ জন্য হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। দেশের স্বাস্থ্য খাতে সরকারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে কিছু বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এই সমস্যা দূর করে রোগীদের আস্থা অর্জনের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

করোনা মহামারি মোকাবিলায় বেসরকারি খাতের ভূমিকা বিষয়ে ঢাকা এভারকেয়ার হসপিটালের হেড অব মেডিকেল সার্ভিসেস বলেন, করোনা মোকাবিলায় প্রথম দিকে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ একটু হিমশিম খেলেও পরবর্তীতে সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করে যাচ্ছে। সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালগুলো কভিড চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। এভারকেয়ার হাসপাতালে ওপিডি এবং ইমারজেন্সিতে কভিড ও নন-কভিড রোগীদের পৃথকীকরণের (ট্রায়াজ সিস্টেম) জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভর্তি রোগীদের ক্রিটিক্যাল এবং নন-ক্রিটিক্যালদের জন্য হাসপাতালকে তিন ভাগ (জোনিং) করে চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। উপসর্গবিহীন কভিড রোগীদের জন্য হোমকেয়ার প্যাকেজ চালু করা হয়।

এই হাসপাতালে প্রতি বছর বহির্বিভাগে গড়ে ৩ লাখের বেশি রোগী দেখা হয়। ভর্তি থাকে ১৬ হাজারের বেশি রোগী। এ ছাড়া বছরে ৬ হাজার ৫০০ ধরনের সার্জারি করা হয়ে থাকে। সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা আমাদের হাসপাতালে প্রায় ৪০০ চিকিৎসক, ৬০০ নার্স, ৫০০ স্বাস্থ্যকর্মী রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। দেশের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে বেসরকারি হাসপাতালের ভূমিকা মূল্যায়ন করে ডা. আরিফ মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এত মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা সরকারের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। স্বাস্থ্য খাতে প্রায়  ৬০ ভাগ সেবা দিয়ে থাকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। চিকিৎসার পাশাপাশি মেডিকেল শিক্ষায়ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভূমিকা রাখছে। হৃদরোগ চিকিৎসা নিয়ে বাংলাদেশ এখন গর্ব করে। এখন যে কোনো ধরনের হার্টের চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। এ ছাড়া কিডনি প্রতিস্থাপন, বোন ম্যারো প্রতিস্থাপন, বোন ও জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট, ক্যান্সারের চিকিৎসা, নিউরো সার্জারির মতো জটিল রোগের চিকিৎসা, এমআরআই, সিটিস্ক্যান, পেট/স্ক্যান ক্রিটিক্যাল কেয়ার ম্যানেজমেন্টের সমান পারদর্শিতার ছাপ রেখে চলেছেন এ দেশের মেধাবী চিকিৎসক এবং চিকিৎসাসংক্রান্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো।

সর্বশেষ খবর