বুধবার, ৯ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় ড্যাপ বাস্তবায়নে বাসযোগ্য হবে ঢাকা

মো. আনিছুর রহমান মিঞা, চেয়ারম্যান, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)

হাসান ইমন

ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় ড্যাপ বাস্তবায়নে বাসযোগ্য হবে ঢাকা

বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) বাস্তবায়ন তাৎক্ষণিক কোনো বিষয় নয়, এটা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন হবে। আমরা প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর ড্যাপ বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে সভা করব। কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সে পরিকল্পনা করব। সে পরিকল্পনার আওতায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বাস্তবায়নের প্ল্যান করা হবে। রাজউক, সিটি করপোরেশনসহ সব সংস্থা বাস্তবায়নে থাকবে। যার মধ্যে যে বিষয়টা পরে সে সংস্থা সেটা বাস্তবায়ন করবে। প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণ করে হলেও বাস্তবায়ন করবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ২০৩৫ সালে বাসযোগ্য হবে ঢাকা। আর উন্নত বাংলাদেশের সব আইকন বাস্তবায়নে ২০৪১ সালে আমরা উন্নত বাংলাদেশে পৌঁছব।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা মঙ্গলবার বাংলাদেশ প্রতিদিনের মুখোমুখি হয়ে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, পৃথিবীর সব দেশই তাদের রাজধানীকে সাজাতে চায়। আমরাও ঢাকাকে বাসযোগ্য শহর হিসেবে সাজাতে চাই। সেই লক্ষ্যেই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), সিটি করপোরেশনসহ সব সেবাদাতা সংস্থা কাজ করছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাজউক। বর্তমানে রাজউকের আওতাধীন এলাকা রয়েছে ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার। যার মধ্যে সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, কেরানীগঞ্জসহ ঢাকার মূল অংশ। যাকে নিয়ে রাজউক বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) প্রণয়ন করেছে। এই পরিকল্পনা রাজউক, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন বাস্তবায়ন করবে। এই পরিকল্পনা হঠাৎ করে বাস্তবায়ন হবে না। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৩৫ সালে বাসযোগ্য শহর হবে ঢাকা।

তিনি বলেন, ঢাকার মূল অংশে জনঘনত্ব অনেক বেশি। ড্যাপের পরিকল্পনা অনুযায়ী, রাজউকের যে আবাসন প্রকল্পগুলো হয়েছে (উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প, ঝিলমিল আবাসিক এলাকা ও পূর্বাচল) এখনো তেমন বসতি গড়ে উঠেনি। যেহেতু পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা সেখানে মাঠ, পার্ক, লেকসহ আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী সব রাখা হয়েছে। এছাড়া ঢাকার চারপাশে বেসরকারি আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে। এসব এলাকায় বসতি গড়ে উঠলে ঢাকার মূল অংশের কিছু নাগরিক ওইসব এলাকায় চলে যাবে। জনঘনত্ব অনেক কমে যাবে। বাসযোগ্য হয়ে উঠবে স্বপ্নের নগরী ঢাকা। 

মো. আনিছুর রহমান বলেন, ঢাকার মূল অংশে অর্থাৎ যেসব এলাকায় জনঘনত্ব অনুযায়ী স্কুল, মাঠ ও পার্ক সংকট রয়েছে। সেসব এলাকায় ড্যাপে স্থান চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। এসব এলাকায় সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য সংস্থা জমি অধিগ্রহণ করে স্কুল, মাঠ ও পার্ক করতে পারে। একই সঙ্গে রাজউক ব্লকভিত্তিক উন্নয়নে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। পুরান ঢাকার পাঁচটি এলাকা নিয়ে আপাতত পরিকল্পনা করেছে। এসব এলাকায় যারা জমির মালিক তাদের মোটিভেশনের মাধ্যমে তাদের জায়গাগুলো একত্রীকরণ করে কিছু অংশে বহুতল আবাসিক ভবন করা হবে। আর অবশিষ্ট অংশে বাচ্চাসহ সব বয়সীর খেলাধুলাসহ বিনোদনের জন্য ব্যবস্থা রাখা হবে। এর বাইরে পুরান ঢাকা নিয়েও পরিকল্পনা রয়েছে।

রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ড্যাপে নিম্নআয়ের মানুষের জন্য রাজউক আওতাধীন এলাকায় ৫৮টি স্থান আবাসনের জন্য চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। এসব আবাসনে যারা বাসা-বাড়িতে কাজ করে, দিনমজুর, রিকশাচালকসহ যাদের আয় নাজুক তাদের জন্য রাখা হয়েছে। তাদের জন্য ৫০০ স্কয়ার ফিটের দুটি রুম, সঙ্গে ওয়াশ রুম, বিদ্যুৎ এবং পানিসহ সব সুবিধা থাকে তাহলে থাকার নিশ্চয়তা হলো। মানুষের যখন বসবাসের নিশ্চয়তা থাকে তখন সে ভালো করবে এবং তার কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করা যাবে। এছাড়া কোনো ডেভেলপার কোম্পানি সাশ্রয়ী আবাসনের ব্যবস্থা করে তার জন্য বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, রাজধানীকে গতিশীল করার জন্য ড্যাপে সুন্দর পরিকল্পনা রয়েছে। সড়ক, নৌ, রেলসহ সব ধরনের যাতায়াতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এর মধ্যে মেট্রোরেলের স্টেশনকেন্দ্রিক ট্রানজিট অরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট (টিওডি) ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এর জন্য মেট্রোরেলের ১৬ স্টেশন চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব স্টেশনকেন্দ্রিক ব্যাংক, বীমা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, শপিংমলসহ সব ধরনের সুবিধা রাখা হয়েছে। ট্রেন থেকে নেমে হেঁটেই গন্তব্যস্থলে যেতে পারবে। যানজট হবে না এবং মানুষের সময়ও অপচয় হবে না। তবে ইতিমধ্যে দুটির স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। একটি উত্তরা অন্যটি গাবতলী। উত্তরাটি রাজউক বাস্তবায়ন করবে, অন্যটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বাস্তবায়ন করবে।

রাজউক চেয়ারম্যান আরও বলেন, তুরাগ পাড়ে জলাশয় এলাকায় আবাসন তৈরি হবে। এটা ভেনিস শহরের মতো। জলাশয় ভরাট করে নয়, দ্বীপ তৈরি, আবাসন তৈরি করা হবে। মানুষ জলযান দিয়ে যাতায়াত করবে। এই প্রকল্পে ৭০ শতাংশে জলাশয় আর বাকি ৩০ শতাংশ থাকবে আবাসন। এই প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী আরও একটু যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বলেছেন। আর শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করতে নারায়ণগঞ্জ থেকে আফতাবনগর হয়ে মাদানী এভিনিউ, বসুন্ধরা, স্বদেশ আবাসনের ভিতর দিয়ে গাজীপুর শ্রীপুরে যাবে। এই প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, মানুষের ঢাকামুখী স্রোত কমাতে কাজ করছে সরকার। ইতিমধ্যে সরকার আশ্রয়হীন প্রকল্পের মাধ্যমে নিম্নআয় ও ভূমিহীন মানুষের সরকার আড়াই লাখ ঘর করে দিয়েছে। এর মধ্যে এক পরিবারে যদি চারজন করে থাকে তাহলে ১০ লাখ মানুষ আবাসনের আওতায় এলো। এটা এক ধরনের আবাসন যা কল্যাণ রাষ্ট্রের থাকে। আর একটা মানুষের যদি মাথা গোঁজার ঠাঁই থাকে তাহলে মানুষ ওই কেন্দ্রিক কাজের জায়গা খুঁজে নেয়। তাহলে সে আর ঢাকামুখী হবে না।

সর্বশেষ খবর