শনিবার, ২৩ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

বন্ধুত্বের তিন যুগ

বন্ধুত্বের তিন যুগ

দুজনই সমান জনপ্রিয়। বাংলাদেশের নৃত্যাঙ্গনে তাদের এখনো দৃপ্ত পদচারণা। ১৯৮৫ সাল থেকে যে বন্ধুত্বের শুরু তা আজও অটুট রয়েছে। দেশীয় নৃত্যের সঙ্গে আন্তর্জাতিক নৃত্যের সেতুবন্ধনে যাদের রয়েছে অসামান্য ভূমিকা। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে দেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্জন করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি। নৃত্যাঙ্গনের এই দুই শিল্পী হলেন শিবলী মহম্মদ ও শামীম আরা নীপা। দুজনই নৃত্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘নৃত্যাঞ্চল’-এর প্রতিষ্ঠাতা। বাংলাদেশ প্রতিদিনের শোবিজ বিভাগের আড্ডা আয়োজনে অতিথি হয়ে এসেছিলেন তারা। তাদের সঙ্গে প্রাণবন্ত সেই আড্ডা তুলে ধরেছেন পান্থ আফজাল ছবি : রাফিয়া আহমেদ

 

মার্চের গনগনে দুপুর। ভেবেছিলাম, যেহেতু তারা নৃত্যের মানুষ তাই আড্ডায় হাজির হবেন নৃত্যের সাজ-পোশাকে! তবে সেটা হয়নি। চিরতরুণ ছিপছিপে গড়নের শিবলী পরেছেন ব্ল্যাক জিন্সের সঙ্গে মানানসই ব্লু রঙের পলো টি-শার্ট। পায়ে কালো সু আর চোখে শোভা কালো চশমা। তার প্রিয় রং কালো বলেই বাইরে বের হলে বেশির ভাগ ক্যাজুয়াল পোশাকে নিজেকে এভাবেই উপস্থাপন করতে পছন্দ করেন। অন্যদিকে নীপাকে খুঁজে পাওয়া গেল অপ্সরীর সাজে। সাদার সঙ্গে হালকা আকাশি লং ফ্রকের ওপর ডানদিকে চাপিয়ে দিয়েছেন সাদা ওড়না! খুব বেশি অলঙ্কারে নিজেকে না সাজালেও সাদামাঠা পোশাকে তার অনন্যতা চোখে পড়ার মতোই। পোশাক পরিধানের দিক দিয়ে বরাবরই কিছুটা ব্যতিক্রম এ দুজন বোঝা যায়। স্টাইল আর ফ্যাশনে তাদের কাছে যেন আজকের তারুণ্যও হার মানতে বাধ্য। বেশি কথা না বাড়িয়ে ঝটপট দুজনের কিছু মুহূর্ত ফ্রেমবন্দী করতে লেগে গেলেন শোবিজ বিভাগের ফটোগ্রাফার। ফটোসেশন শেষ হতেই তাদের আমন্ত্রণ জানানো হলো অফিসকক্ষে। শোবিজ আড্ডায় দুজনে কথার ঝাঁপি খুলে বসলেন। শুরুটা শিবলী মহম্মদই করলেন। বললেন, ‘নীপার সঙ্গে আমার পরিচয় আশির দশকে। আমি তখন পারফর্মিং আর্ট একাডেমিতে জয়েন করি। তখন নীপাকে আমি চিনতাম। সেখানে ও তখন নতুন, আমিও। ওর সঙ্গে আমার হাই-হ্যালো হতো। আমি যখন ইন্ডিয়াতে পড়তে গেলাম সে সময়টা বলব নীপার ক্যারিয়ারের জন্য ছিল ক্রুসিয়াল টাইম। সে সময় বাংলাদেশে নীপার অনেক পরিচিতি বাড়ল। তাকে সবাই তখন চিনত। আমি যখন ছুটিতে বাংলাদেশে এলাম, তখন দেখতাম টেলিভিশনের সামনে বসে সবাই নীপার নাচ দেখত। তার ‘হীরামন’ অনুষ্ঠানে পারফর্ম দেখত। সে তো তখন নাটকও করত। তার নাটক দেখত অনেকেই। সে সময় নীপার অনেক ক্রেজ ছিল! এরপর ইন্ডিয়া থেকে আমি পুরোপুরি কোর্স শেষ করে বাংলাদেশে এলাম, সেটা আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে; ১৯৮৫ সালে। তখন কিন্তু নীপা অলমোস্ট সুপারস্টার! নীপা ওই সময় নাচের একজন সঙ্গী খুঁজছিলেন। মানে একজন নায়ক খুঁজছিলেন! মনমতো তখন সে ড্যান্স পার্টনার পাচ্ছিল না। এরপর নীপা আমাকে ডাকল। আমার নাচ সে দেখল, জানল। এরপর নীপা আমার বাসায় এলো। একসঙ্গে নাচ তুলতে শুরু করলাম। সেটা ছিল রবিশঙ্করের ‘তারা না’।’ ‘এর আগে একটা মজার ঘটনা আছে’-নীপা ঝট করে শিবলীর কথার মাঝেই বলে উঠলেন- ‘ওই সময়টা আমার সঙ্গে নাচ করার মতো অনেকেই ছিল, তবে তারা ছিল একটা স্লো। আমি কিন্তু সব সময় একটু অ্যাডভান্স থাকার চেষ্টা করতাম। সে সময় সবাই একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে ছিল।

তবে শিবলীর মধ্যে ওই সময় প্রচণ্ড স্পিড আমি খুঁজে পেয়েছিলাম। মাত্র শিখে এসেছিল, তাই একটা ফ্রেসনেস ছিল। এর আগেও আমি বোধহয় তাকে কোথাও নাচ করতে দেখেছি। তখন সার্ক কান্ট্রি নিয়ে ‘সাত-ভাই চম্পা’ হচ্ছিল। আমার প্রচণ্ড ইচ্ছা ছিল শিবলীকে নায়কের চরিত্রটায় কাস্ট করার। আমি এরপর মুস্তাফা মনোয়ারকে বললাম, একটা ছেলে আসছে, খুব ভালো। তো ওকে আমরা আমাদের সঙ্গে নিয়ে নেই! উনি তো ওনার মতো করে কাজ করেন, উনি অনেকক্ষণ চিন্তা করে বললেন, এটিতে তো নায়কের তেমন কোনো কাজ নেই। একটা নেগেটিভ ক্যারেক্টার আছে সেটি অনেক সুইট, ঘোড়া থাকবে তার সঙ্গে। ওকে নেগেটিভ চরিত্রটাই দিয়ে দাও। ওনার কথায় আমার খুবই মন খারাপ হয়ে গেল। আনলাম নায়ক বানাতে, সে এখন তাকে খলনায়ক বানাতে চাচ্ছে! আবার একটু লজ্জাও পাইলাম শিবলী কী ভাববে ভেবে।’ শিবলী যেন কথাগুলো শুনে মজাই পেল। আকাশ কাঁপিয়ে হাসতে লাগল। হাসি থামিয়ে কিছুটা টিপ্পনী কেটে বললেন, আসলেই, আনলে নায়ক বানাতে, হয়ে গেলাম ভিলেন! একটু মন খারাপই হয়ে গিয়েছিল তখন। হা হা হা...’ ‘এহ...ওভাবে তো তোমাকে বলি নাই যে, তোমাকে নায়কই বানাব! তবে সেই জায়গা থেকে মনে হয় যে, আমি কিছুটা হলেও ফ্লপ ছিলাম। শিবলীকে তো সে সময় নায়ক বানাতে পারিনি! তবে যাই বলো না কেন, তোমার আর আমার জুটির পেছনে কিন্তু মুস্তাফা মনোয়ারের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য।’ নীপাও মজাটাকে লুফে নিয়ে উত্তরটা দিলেন। নীপা ছোটবেলা থেকে পারিবারিকভাবে নাচ শিখতেন অনেকটা অনানুষ্ঠানিকভাবে। এরপর নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসে একটি অনুষ্ঠান করলে অনেক উৎসাহ পান সবার কাছ থেকে। আর এরপর থেকে তার মূল নাচের চর্চা শুরু। পরে বিভিন্ন বিদেশি শিক্ষকের কাছ থেকে নাচের তালিম নেওয়া থেকে শুরু করে বিদেশে গিয়েও নাচ শিখে এসেছেন। নীপা বলেন, ১৯৮০-এর দশকে যখন টেলিভিশনসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানে নাচ করেছি, তখন চেষ্টা ছিল গতানুগতিক নাচের ধরন থেকে বের হয়ে আসা।’ আনন্দ-বেদনার শৈশব স্মৃতি নিয়ে আজও শিহরিত হন শিবলী মহম্মদ। অকপটে স্বীকার করেন, ‘স্নাতক পড়াকালেই আমি বুঝে ফেলি যে নাচ আমার রক্তে মিশে আছে।’ আপনি তো ব্যালে ও জাজ নৃত্যের উপরেও তালিম নিয়েছেন... ‘নাচের ওপর তালিম নিতে আমি এক সময় লন্ডন ব্যালেট থিয়েটারে ব্যালেট, ট্যাপ ও জ্যাজ নৃত্যে প্রশিক্ষণ নেই। এতে করে আমি আধুনিক নৃত্যের সঙ্গে কত্থকের মেলবন্ধন ঘটাতে শিখি।’ বললেন শিবলী। আপনাদের বন্ধুত্বে বয়স তো প্রায় ৩৪ বছর? সায় দিলেন শিবলী। বললেন, ‘হ্যাঁ, বলা যায়। আর নীপার সঙ্গে এই বন্ধুত্বটা সারা জীবনই অটুট থাকবে।’ এরপর শিবলী বন্ধুত্ব নিয়ে তার মতবাদ তুলে ধরলেন, ‘দুটি মানুষের মধ্যে বন্ধুত্ব কিন্তু বলে-কয়ে হয় না। একটা মানুষকে তো জানতে হয়, চিনতে হয়-তাই না? অটোমেটিক্যালি বন্ধুত্বটা হয়ে যায় আর কি! আর অবশ্যই নৈতিক চরিত্রে মিল থাকতে হয়। তাই তো নীপার সঙ্গে আমার রসায়নটা এত ভালো।’ নৃত্যে পেশাদারিত্ব নিয়ে নীপাকে প্রশ্ন করলে তার জবাবটা ছিল ইতিবাচক। তবে এই মাধ্যমে যে অনেক প্রতিবন্ধকতাও আছে তা তার কথায় বোঝা গেল। তিনি অনেকটা আক্ষেপের সুরেই বললেন, ‘অনেক ভালো নৃত্যশিল্পী তৈরি হলেও একটি জায়গায় কমতি আছে, সেটা হলো টিভি চ্যানেলগুলোতে। সেখানকার অনুষ্ঠানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নন-ড্যান্সারদের পারফর্ম করতে দেখা যায়। বিটিভি যদিও এইক্ষেত্রে একটু পজেটিভ। তবে টিভি চ্যানেলগুলো সব নন-ড্যান্সারদের নিয়ে বেশি পারফর্ম করায়। নাচ আসলে শরীরের ভাষা দিয়ে প্রকাশ করতে হয়। তবে, নৃত্যশিল্পীরা মঞ্চে ভালো করলেও টিভিতে তেমন সুযোগ কোথায়?’ অন্যদিকে পুরুষের নাচকে তো এখনো অনেকেই ইতিবাচকভাবে নিচ্ছে না? এই বিষয়টি মানতে নারাজ শিবলী ও নীপা। ‘এখনো পুরুষের নাচ শেখাটাকে সবাই ইতিবাচক হিসেবে দেখে না। কারণ পুরুষের নাচ আমাদের দেশে সমাদৃত নয়। আমি শিবলী কিন্তু পেরেছি। আমি গর্বিত যে আমি গুরু বিরজু মহারাজের ছাত্র।’ এই শিল্প নিয়ে এমন এক্সপেরিমেন্ট কতখানি যৌক্তিক, সেটার উত্তর নীপা দিলেন সুন্দরভাবে। ‘কি আর বলব। এখন তো তারকাদের সামনে রেখে  কোনোভাবেই একটা নৃত্যানুষ্ঠান করা হয়। আর তাদের পেছনে নাচে একদল পেশাদার নৃত্যশিল্পী। এটা কতটা যৌক্তিক? আর আমার কাছে বরাবরই নাচের ফিউশন বিষয়টা রীতিমতো দৃষ্টিকটু। দেখে দেখে তো সব হয় না, বুঝে-শুনে তারপর করতে হয়। কিন্তু এসব ফিউশন নাচে তা মানা হয় না। পরিশ্রম, সাধনা করতে হবে। আবার নাচের কিন্তু নির্দিষ্ট পোশাক ও সাজ রয়েছে। এগুলো কি যথাযথভাবে মানা হয়? এসব কিছু কিন্তু শুদ্ধ নাচের পরিপন্থী।’ ভালো নৃত্যশিল্পী কেন তৈরি হচ্ছে না? এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘এর অন্যতম কারণ এখন মিডিয়া চায় চেনামুখ যারা তাদের দিয়েই অনুষ্ঠান করাতে। নাচের সঠিক তালিম নেওয়া ছাড়াই তারা অনুষ্ঠান করে।’ দুজনের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত দেশের অন্যতম নৃত্য শেখার স্কুল ‘নৃত্যাঞ্চল’। এটি নিয়ে স্বপ্ন কী? উত্তরে শিবলী বললেন, ‘এটি আমাদের দুজনের স্বপ্নের দল, সন্তানের মতো। আমি আর নীপা দুটি স্থানে ভাড়ায় এই স্কুলটি চালাই। যেটি আমাদের জন্য খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই আমাদের নিজস্ব একখণ্ড জমি খুবই দরকার। কোনো ধনাঢ্য ব্যক্তি আমাদের পাশে দাঁড়ালে স্বপ্নটি পূরণ হতে পারে। প্রতিষ্ঠা করতে চাই একটি আন্তর্জাতিক মানের ড্যান্স স্কুল।’ আমাদের দেশে নৃত্যশিল্পীর সংখ্যা কিন্তু কম নয়। তবু কেন এদেশে নৃত্যের অনুষ্ঠান কম হয়? এবার নীপা প্রশ্নটির উত্তর দিতে নড়েচড়ে বসলেন। ‘নিজস্ব উদ্যোগে সংগঠনের দ্বারা নৃত্যের অনুষ্ঠান করা কষ্টসাধ্য। স্পন্সরের অভাবে নৃত্যের অনুষ্ঠান কম হয়। সব জায়গায় নৃত্যের অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয় না। প্রোপার মঞ্চ ছাড়া নাচ হয় না। আমাদের দেশে শিল্পকলা ছাড়া নাচের জন্য তেমন কোনো মঞ্চ নেই। অন্যদিকে টিভিতে তো নিজস্ব একটা ভাবধারা থাকে, এর বাইরে কিছু করা যায় না। তারপরেও অনেক জায়গায় নাচের অনুষ্ঠান হচ্ছে।’ নৃত্যশিল্পে অসামান্য অবদানের জন্য সম্মানজনক একুশে পদক পাওয়া নীপার কাছ থেকে জানা গেল, তাদের দুজনের প্রায় ১৫টির বেশি নিজস্ব ড্যান্স রয়েছে। নাচ শেখানোর পাশাপাশি ছাত্রীদের নিয়ে নিয়মিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন তারা। দেশীয় নৃত্যদল হিসেবে ভারতে অনুষ্ঠিত থিয়েটার অলিম্পিকে নৃত্যাঞ্চল অংশগ্রহণ করে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করে। শিবলী আড্ডায় আড্ডায় জানালেন, ‘নৃত্যাঞ্চল নিয়ে আসছে নতুন নৃত্যনাট্য মীরা। আর নৃত্যনাট্য দিয়ে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ফের মঞ্চে আসছেন এদেশের প্রথিতযশা নৃত্যশিল্পী কাজল ইব্রাহীম। নৃত্যনাট্যটির পরিচালক ভারতের নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার সুকল্যাণ ভট্টাচার্য। শামীম আরা নীপা একটানা বলে চললেন, ‘আমরা দেখেছি যে নাচের কোনো ডকুমেন্টেশন নেই। আমরা শুধু কিংবদন্তি শিল্পীদের কথা শুনি। তাদের একটা নাচও আমাদের কাছে রেকর্ড নেই, যা দেখে আমরা তাদের নাচ বুঝতে পারি। এই প্রযোজনা দিয়ে আমরা আসলে তেমন একটি ডকুমেন্টেশন করছি। প্রযোজনায় মীরার চরিত্রে কাজল ইব্রাহীম, সুকল্যাণ ভট্টাচার্যকে কৃষ্ণের রূপে, আকবরের চরিত্রে শিবলী আর  রাধার চরিত্রে আমি রয়েছি। এটি ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় দেখা যাবে।’ নৃত্যনাট্য বাদী বান্দার রূপকথা তো এক অনবদ্য সৃষ্টি... কথা শেষ হওয়ার আগেই শিবলীর উত্তর, আরব্য রজনীর বিখ্যাত উপাখ্যান আলী বাবা চল্লিশ চোর নিয়ে নৃত্যনাট্য ‘বাদী বান্দার রূপকথা। পরিচালনা করেছেন কলকাতার সুকল্যাণ ভট্টাচার্য। শিল্পকলা একাডেমিতে অনেক শো করেছি। থ্রি ডাইমেনশনের এই নৃত্যনাট্যে কেন্দ্রীয় চরিত্র মর্জিনা করেছে নীপা আর আমি আলীবাবার চরিত্র করেছি। কলকাতায়ও কিছু শো করেছি। নৃত্যনাট্যটি যৌথভাবে আয়োজনে রয়েছে সৃষ্টি কালচারাল সেন্টার ও আমাদের প্রতিষ্ঠান নৃত্যাঞ্চল।’ ‘রাই কৃষ্ণ পদাবলী’ নামে আমরা দুজনে একটি নৃত্যনাট্যও করেছি।’ কথায় কথায় জানা গেল, শিবলী ভালো গানও গাইতে পারেন। ‘ছোটবেলা থেকে গান করলেও মূলত শখের বশেই গান করি।’ একটু লাজুক হেসে একবাক্যে বললেন তিনি। দেশীয় চলচ্চিত্রের গানে যেমন-তেমন কোরিওগ্রাফি দিয়ে গান তৈরি করা হয়। চলচ্চিত্রের গানে শুদ্ধ নৃত্য কতটা প্রাসঙ্গিক? ‘অবশ্যই এই ব্যাপারটা বরাবরই অবহেলিত। চলচ্চিত্রের গানে নৃত্য থেকে উঠে আসা শিল্পীদের মূল্যায়ন নেই। তাদের ব্যবহার করছে না। আমি তো কিছু অনুষ্ঠানে সত্যজিৎ রায়ের ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’, সঞ্জয়লীলা বানসালির ‘বাজিরাও মাস্তানি’ ও ‘দেবদাস’ ছবিতে বিরজু মহারাজের নাচগুলোকে নতুনভাবে উপস্থাপন করছি। চলচ্চিত্রে নৃত্যকে যথাযথভাবে ব্যবহার করা উচিত। কোনো নির্মাতা-প্রডিউসার শাস্ত্রীয় নৃত্যকে চলচ্চিত্রে ব্যবহারের কথা ভাবেও না। কেউ রাজি হলে তো আমি জান-প্রাণ দিয়ে কাজটি করে দিতাম।’ এদিকে দীর্ঘ সময়ের আড্ডায় দুজনের মধ্যে অ™ভুত কিছু মিল ও অমিল খুঁজে পাওয়া গেল। শিবলীর প্রিয় রং কালো, নীপার সাদা ও অফ-হোয়াইট। নীপার ফ্যাসিনেশন বেশি পোশাকে আর শিবলীর চশমা, টি-শার্ট, ঘড়ি, সু কালেকশনে। আর শিবলীর নিকট নীপার কাজের প্রতি ডিভোশনটা বেশি ভালো লাগে। উপরন্তু রূপসী আর এনার্জিটিক বলেও নীপাকে অভিহিত করেন। তবে নীপার নিকট শিবলীর ভালো-খারাপ দুটোই সমান গুরুত্বের। নীপার মতে, শিবলী অনেক বেশি মিশুক ও মানবিক। আর আমরা দুজনেই একে অন্যের অস্বিত্ব। জানা গেল, তারা দুজনেরই প্রচণ্ড ভ্রমণপ্রিয় ও খেতে পছন্দ করেন। তবে সব কথাকে ছাপিয়ে এই আড্ডার  ইতি টানতে হলো।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর