শনিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

দেশ মাতালো চট্টগ্রাম আবাহনী

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

দেশ মাতালো চট্টগ্রাম আবাহনী

চট্টগ্রাম আবাহনীর স্বপ্নের শিরোপা জয়ের শেষ গোলটি করেন হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস। ওই গোলের পর তাকে ঘিরে সতীর্থদের উচ্ছাস। কাল ফাইনাল দেখতে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে অতীত রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ সংখ্যক দর্শকের সমাগম ঘটেছিল -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ক্রিকেট ঘিরে চট্টলাবাসীর উৎসবের শেষ ছিল না। বিশ্বকাপ ছাড়া ক্রিকেটের অসংখ্য আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হচ্ছে এখানে। সেই তুলনায় ফুটবল বড্ড ম্লান। আন্তর্জাতিক ম্যাচের কোনো দেখাই মিল ছিল না। অথচ ঢাকার পর চট্টগ্রাম ফুটবল লিগের কদর ছিল বেশি। এই জেলা থেকে অসংখ্য ফুটবলার বের হয়েছেন। যাদের তারকা খ্যাতিও কম নয়। বর্তমানে জাতীয় দলের অধিনায়ক মামুনুল ইসলামও চট্টগ্রামের ছেলে। ফুটবলে দেশসেরা আসর পেশাদার লিগে চট্টগ্রাম আবাহনী অংশ নিলেও দুর্বল দল থাকায় ফলাফল সুখকর নয়। এই চট্টগ্রাম আবাহনীই ক্রীড়াঙ্গনে নতুন ইতিহাস রচনা করল। নিজেদের প্রথম টুর্নামেন্টে স্বপ্নের ট্রফি ঘরে তুলেছে চট্টগ্রাম আবাহনী। গতকাল ফাইনালে পিছিয়ে থেকেও তারা ইস্টবেঙ্গলকে ৩-১ গোলে পরাজিত করে। ম্যাচের ১১ মিনিটে অভিনব বাক গোল করলে পুরো গ্যালারি নীরব হয়ে যায়। প্রথমার্ধ্বে ইনজুরি টাইমে চমৎকার গোল করে সমতা ফেরান এলিটা কিংসলে। দ্বিতীয়ার্ধ্বে চট্টগ্রাম আবাহনী উজ্জীবিত হয়ে খেলতে থাকে। ৫৩ মিনিটে এলিটা প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠালে দর্শকরা উৎসবে মাতোয়ারা হয়ে যান। ৩ মিনিট পরই হেমন্তের গোল। আর এ গোলেই স্বাগতিকদের স্বপ্নের শিরোপা নিশ্চিত হয়ে যায়। বাংলাদেশের প্রথম ক্লাব হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের আয়োজন করল চট্টগ্রাম আবাহনী। ঢাকা আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাতা প্রখ্যাত সংগঠক শহীদ শেখ কামালের স্মৃতি ধরে রাখতে দেশের তিন ও বিদেশের পাঁচ ক্লাব নিয়ে শেখ কামাল ক্লাব কাপের আয়োজন করে রীতিমতো আলোড়ন তুলেছে। ইচ্ছা ও আন্তরিকতা থাকলে সব অসম্ভবকে সম্ভবে রূপান্তরিত করা যায় তা প্রমাণ রাখল চট্টগ্রাম। আগস্টে পরিকল্পনা নিয়ে অক্টোবরেই তারা এত বড় টুর্নামেন্ট করে ফেলল। এটা বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে নতুন ইতিহাসও বলা যায়।

 

নিজেদের টুর্নামেন্টে চট্টগ্রাম আবাহনী ফাইনালে ওঠাতে চট্টগ্রামবাসীর উৎসব ছিল চোখে পড়ার মতো। ফুটবল ক্যারিয়ারে ক্লাবটি এবারই প্রথম কোনো টুর্নামেন্টে ফাইনালে উঠল। তাও আবার আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপে। এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে গতকাল ফাইনালে তারা মুখোমুখি হয় ভারত খ্যাত ইস্টবেঙ্গলের বিপক্ষে। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ ঘিরে শুধু চট্টগ্রাম নয়, দেশজুড়ে উত্তাপের সৃষ্টি হয়। আগে ক্রিকেট ঘিরে উৎসবের আমেজ তৈরি হলেও গতকাল চট্টগ্রামে একটাই আলোচনা ছিল শেখ কামাল ক্লাব কাপ ফাইনাল। সকাল থেকে বৃষ্টি হলেও এ উৎসবের ভাটা পড়েনি। সবারই অপেক্ষা ছিল কখন স্বপ্নের ম্যাচ মাঠে গড়াবে। সত্যি বলতে কি টুর্নামেন্টে দুই যোগ্য দলই ফাইনালে ওঠে। চট্টগ্রাম আবাহনীর এ রূপ থাকত না, যদি শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের খেলোয়াড়রা যোগ না দিতেন। টুর্নামেন্টে আমন্ত্রণ না জানানোর পরও দেশের স্বার্থে শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র তাদের ১২ জন খেলোয়াড়কে চট্টগ্রাম আবাহনীতে খেলার অনুমতি দেয়। এ জন্য শেখ রাসেল কর্তৃপক্ষ প্রশংসিতও হচ্ছেন। অন্যদিকে ইস্টবেঙ্গলও পূর্ণ শক্তি নিয়ে চট্টগ্রামে আসেনি। তাদের বেশ কজন ফুটবলার ইন্ডিয়ান সুপার লিগ খেলতে ব্যস্ত রয়েছেন। এরপরও উদ্বোধনী ম্যাচে শেখ রাসেল ২-১, করাচি ইলেকট্রিক ৩-১ ও ঢাকা আবাহনীর সঙ্গে গোল শূন্য ড্র করে ‘বি’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ চারে জায়গা করে নেয়। চট্টগ্রাম আবাহনীর কাছে প্রথম ম্যাচ হেরে কিছুটা বিপাকে পড়ে যায় স্বাগতিকরা।

কিন্তু পরের ম্যাচ থেকে এমিলিরা অন্য রূপ ধারণ করেন। ঢাকা আবাহনীকে ১-০, করাচি ইলেকট্রিকের বিপক্ষে জাহিদের হ্যাটট্রিকে ৪-২ গোলে জয়ী হয়। গ্রুপ রানার্সআপ হলেও সেমিফাইনালে চট্টগ্রাম আবাহনী ছিল অপ্রতিরোধ্য। যে আফগানিস্তানের বাজান দলকে টুর্নামেন্টে টপ ফেবারিট ধরা হয়েছিল, তাদের স্বাগতিকরা দাঁড়াতেই দেয়নি। ৩-১ গোলে বাজানকে বিধ্বস্ত করে ফাইনালে উঠে যায়। অন্যদিকে কলকাতা ইস্টবেঙ্গলও সেমিতে ঢাকা মোহামেডানকে পাত্তাই দেয়নি। ১৯ বছর পর দুই দলের লড়াইয়ে ৩-০ গোলে জিতে ভারত খ্যাত দলটি ফাইনালে চলে যায়। কিন্তু ফাইনালে ইস্টবেঙ্গল আর পেরে উঠতে পারল না। আন্তর্জাতিক ট্রফি জিতে পুরো দেশকে উৎসবে মাতালো চট্টগ্রাম আবাহনী।

 

সর্বশেষ খবর