মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

জিম্বাবুয়ে বলেই ছয়ে ওঠার স্বপ্ন

ক্রীড়া প্রতিবেদক

জিম্বাবুয়ে বলেই ছয়ে ওঠার স্বপ্ন

তিন ওয়ানডে ও দুই টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে গতকাল বিকালে ঢাকায় পা রাখে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দল -রোহেত রাজীব

বছর খানেক আগেও পথহারা পথিক ছিলেন মাশরাফিরা! ‘জয়’ শব্দটি অভিধানের পাতা থেকে মুছেই গিয়েছিল। ধারে কিংবা ভারে, প্রতিপক্ষ যেমনই হউক, হারের তেতো স্বাদ নিতে যেন মাঠে নামতেন মাশরাফি, সাকিব, মুশফিকরা। অবশ্য হারের সেই ধাক্কা সামলাতে চেষ্টার কমতি ছিল না বাংলাদেশ ক্রিকেটের। কিন্তু কোনোভাবেই কোনো কিছুই হচ্ছিল না। এমন ত্রাহি মধূসুদন অবস্থা যখন দেশের ক্রিকেটের, তখন ‘আশির্বাদ’ হয়ে আসে জিম্বাবুয়ে। আফ্রিকান প্রতিনিধিদের বিপক্ষে ওই সিরিজ দিয়ে ঘুরে দাঁড়ান মাশরাফিরা। হারের বৃত্ত ভেঙে টাইগাররা হাঁটতে শুরু করে সাফল্যের মসৃণ পথে। সেই শুরু। এখন শুধুই সাফল্য। ঘুরে দাঁড়ানোর আত্মবিশ্বাস নিয়ে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল, এরপর ঘরের মাটিতে দুই সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান ও ভারত এবং সর্বশেষ পরাশক্তি দক্ষিণ আফ্রিকাকে আকাশ থেকে মাটিতে নামিয়ে দেয় বাংলাদেশ। আকাশে উড়তে থাকা বাংলাদেশ এখন অপেক্ষায় সামনে এগুনোর। আর তখনই এক বছরের ব্যবধানে ফের এসেছে জিম্বাবুয়ে। তাতে স্বপ্নের পরিসর দীর্ঘ হয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। এবার স্বপ্ন র‌্যাঙ্কিংয়ে আরও এগিয়ে যাওয়ার। জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করলেই বাজিমাত! পূরণ হবে স্বপ্ন। ইংল্যান্ডকে পেছনে ফেলে ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের ৭ থেকে বাংলাদেশ উঠে আসবে ৬ নম্বরে! প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে বলেই এমন স্বপ্ন দেখা। 

 

 

ভারত-পাকিস্তান যেমন প্রবল প্রতিপক্ষ পরস্পরের। তেমনি বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়েও প্রবল প্রতিপক্ষ একে অপরের। অবশ্য এখন লড়াই অনেকটাই একপেশে। গত ৭-৮ বছর ধরে বলে কয়েই হারাচ্ছে জিম্বাবুয়েকে। দুই দল সর্বশেষ মুখোমুখি হয়েছিল গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে। দুই দল খেলেছিল টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ। দুই বিভাগেই মাশরাফিরা বিধ্বস্ত করেছিলেন জিম্বাবুয়েকে। ব্রেন্ডন টেলর, এল্টন চিগুম্বুরা, হ্যামিল্টন মাসাকাদজাদের বিপক্ষে এমন এক সময়ে ব্যাট-বলের লড়াইয়ে মেতেছিল, যখন আফগানিস্তান ও হংকংয়ের বিপক্ষে হারের লজ্জাও ছিল সঙ্গী। নতুন করে দায়িত্ব পেয়ে মাশরাফি এমনভাবে দলকে নিয়ে লড়াই করেন, যাতে একপেশে হয়ে পড়ে ওয়ানডে সিরিজ। ৫-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে। এবার জিম্বাবুয়ে এসেছে অস্ট্রেলিয়ার প্রক্সি দিতে। নিরাপত্তাহীনতার অজুহাতে হঠাৎ সফর স্থগিত করে অস্ট্রেলিয়া। ফলে সময়টি ফাঁকা পড়ে থাকে। এ জন্যই জিম্বাবুয়েকে এনে মাশরাফি, সাকিবদের চাঙ্গা রাখছে বিসিবি। সফরে তিনটি ওয়ানডে খেলবেন এল্টন চিগুম্বুরারা। গতকাল চিগুম্বুরার নেতৃত্বে দলটি ঢাকায় এসে পৌঁছায়। ৭, ৯ ও ১১ নভেম্বর তিনটি ওয়ানডে খেলবে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে। একই ভেন্যুতে ১৩ ও ১৫ নভেম্বর দুটি টি-২০ ম্যাচ।

জিম্বাবুয়ে আসছে আফগানিস্তানের কাছে ওয়ানডে সিরিজ হেরে। মানসিকভাবে বিপর্যস্তু জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ আইসিসির ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে উঠে যাবে ৬-এ। ৯৬ পয়েন্ট নিয়ে এখন ৭ নম্বরে অবস্থান বাংলাদেশ। ১০২ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে ইংল্যান্ড। যদি হোয়াইটওয়াশ করতে পারে চিগুম্বুরাদের, তাহলে ইংলিশদের পেছনে ফেলে বাংলাদেশের জায়গা হবে ৬ নম্বরে। যা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ। অবশ্য এখন যে অবস্থানে রয়েছে, সেটাও ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

জিম্বাবুয়ে সিরিজকে সামনে রেখে ১৮ সদস্যের প্রাথমিক স্কোয়াড ঘোষণা করে বিসিবি। প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে সুযোগ পান পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বি। চূড়ান্ত দলে থাকছেন, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আগেরবারের মতো এবারও স্পিন দিয়ে বধ করার পরিকল্পনা টিম ম্যানেজমেন্টের। তাই সাকিবের সঙ্গে আরেক বাঁ হাতি স্পিনার আরাফাত সানি রয়েছেন। থাকছেন লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেন। অফ স্পিনার দুজন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও নাসির হোসেন। লেগ স্পিনটা ভালোভাবে চালিয়ে নিতে পারেন সাব্বির রহমান। পেস অ্যাটাকে থাকছেন অধিনায়ক মাশরাফি ও আল-আমিন এবং রাব্বি। ডেঙ্গু থেকে সুস্থ হয়ে এখন অনুশীলন করছেন মাশরাফি। তবে তার খেলার সম্ভাবনা ঝুলে রয়েছে সুতোর উপর। বাকি সব ঠিক রয়েছে।

দুই দল এখন পর্যন্ত ৬৪টি ওয়ানডে খেলেছে। তাতে ৩৬ জয় বাংলাদেশের এবং জিম্বাবুয়ের ২৮। এবার ব্যবধান বাড়ার সম্ভাবনাই বেশি।

সর্বশেষ খবর