শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বার বার নিষিদ্ধ কেন সাকিব

মেজবাহ্-উল-হক

দৌড়ে দৌড়ে এক নম্বর গেট গিয়ে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ঢুকছিলেন এক দর্শক। হাতে লেখা একটা প্ল্যাকার্ড। তাতে বড় করে লেখা- ‘রংপুর রাইডার্সের প্রাণ, সাকিব আল হাসান’। একই প্ল্যাকার্ডে নিচের দিকে ছোট করে লেখা, ‘মিস ইউ সাকিব!’

ম্যাচে সাকিব আল হাসানের অভাবটা বোঝা গেল আরও ভালোভাবে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই পারেনি কাল রংপুর রাইডার্স। ৯ উইকেটে বড় ব্যবধানে হার। সাকিব আল হাসান যে শুধু একজন খেলোয়াড়ই নন, তিনি রংপুর রাইডার্সের মেন্টর! বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার মাঠে যেমন দুর্দান্ত পারফর্ম করেন, তেমনি মাঠের বাইরেও দলকে দারুণভাবে প্রমোট করেন। এবারের আসরে রংপুর রাইডার্সই একমাত্র দল যাদের উপদেষ্টা থেকে শুরু করে টিম ম্যানেজার কেউই ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নন। বিপিএলের অন্য দলগুলো যেখানে জাতীয় দলের সাবেক তারকা ক্রিকেটারদের পরামর্শক হিসেবে রেখেছে সেখানে রাইডার্স ব্যতিক্রম। টিম ম্যানেজমেন্টে পেশাদারিত্বের অভাব চোখে পড়লেও সাকিব যেন একাই সব সামাল নিচ্ছেন তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে।

কালকের ম্যাচের আগে চার ম্যাচে তিন জয় ছিল রংপুরের। শেষ দুই ম্যাচে তো বলতে গেলে একাই দলকে জিতিয়ে দিয়েছেন সাকিব। কিন্তু কালকের ম্যাচে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার খেলতে না পারায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের বিরুদ্ধে যেন অসহায় আত্মসমর্পণ করল উত্তরাঞ্চলের দলটি। সাকিব খেলতে পারেননি, কারণ আগের ম্যাচে আম্পায়ারের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করায় তিনি নিষিদ্ধ হয়েছিলেন এক ম্যাচের জন্য।

অবশ্য শাস্তি কিংবা নিষিদ্ধ হওয়ার ঘটনা সাকিবের জন্য নতুন কিছু নয়। গত বছরের জুলাইয়েও ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। তার আগে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজেও তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ ছিলেন। তবে সাকিবের জন্য ছয় ম্যাচের নিষেধাজ্ঞার শাস্তিটা ছিল তার ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় শাস্তি। তখন সাকিবকে মৌখিকভাবে সাবধানও করে দেওয়া হয়েছিল, ভবিষ্যতে একই আচরণ করলে আজীবন নিষিদ্ধ করা হতে পারে। বছর কাটতে না কাটতে সেই সাকিব আবারও নিষিদ্ধ হলেন! কেন সাকিবই বার বার নিষিদ্ধ হচ্ছেন? বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার অপরাধ করছেন শাস্তিও ভোগ করছেন। কিন্তু যারা তাকে অপরাধ করতে প্ররোচিত করছে কিংবা তাকে অসৌজন্য আচরণ প্রদর্শন করতে বাধ্য করাচ্ছে তারা কেন বার বার ঘটনার অন্তরালে থেকে যাচ্ছে? সাকিব এখন নিছক একজন ক্রিকেটার নন, বাংলাদেশের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর! বিশ্বে অনেক মানুষ আছেন যারা বাংলাদেশকে চেনেন সাকিবের জন্যই। সব শেষের ঘটনাটি ছিল বৃহস্পতিবার সিলেট সুপার স্টারসের বিপক্ষে ম্যাচে। রাইডার্সের ১৩তম ওভারে লঙ্কান বোলার পেরেরার শেষ ডেলিভারিতে বল ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমের গ্লাভস ছুঁয়ে উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ মিথুনের হাতে চলে যায়। আউট ভেবে রংপুর রাইডার্সের ফিল্ডাররা উদ্যাপনও করেন। কিন্তু আম্পায়ার তানভীর আহমেদ জানান মুশফিক নটআউট। পরে আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়ে নিষিদ্ধ হন সাকিব।

যদিও ওই ম্যাচে জিতেছিল রংপুর রাইডার্সই। তবে ১৫ রানে নতুন জীবন ফিরে পাওয়া মুশফিক শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করেছেন। মাঠে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। তাই তর্কে জড়ানোর কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু আম্পায়ারের ওই একটা ভুলের কারণে হেরেও যেতে পারত সাকিবের দল। কাল সাকিবের ‘নিষিদ্ধ’ সম্পর্কে জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেন, ‘এটা সাকিবের জন্য হতাশার, তার দলের জন্যও খারাপ। তবে ওই ম্যাচে আম্পায়ারের এক সিদ্ধান্তের কারণে হেরেও যেতে পারত তার দল। এমন অবস্থায় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তাই হয়তো উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল সাকিব। তবে প্রতিটি টুর্নামেন্টের একটা নিয়ম আছে, তা সবাইকে অনুসরণ করতে হবে। আইন মানতে হবে।’

কেন বার বার সাকিবকেই শাস্তির কবলে পড়তে হচ্ছে? এ প্রশ্নে মাশরাফি বলেন, ‘সাকিব কিন্তু আসলে এমন না। এটা সবাই জানে। তাই বার বার শাস্তি পাওয়ার কারণে প্রশ্ন উঠছে। আমি যত দূর জানি, সাকিব এমনটা করতে চায় না। ওই সময় আমি থাকলেও কেমন করতাম জানি না! এ ঘটনাটা সাকিবের জন্য দুর্ভাগ্য, তার দলের জন্যও দুর্ভাগ্যজনক।’ মাশরাফির বক্তব্যের পর প্রশ্ন উঠতেই পারে, সত্যিই কি সাকিবকে অপরাধ করতে প্ররোচিত করা হচ্ছে? যদি তাই হয়, তাহলে বিসিবি কী করছে? আর কেউ প্ররোচিত করলেই বা তার ফাঁদে পা দিচ্ছেন কেন সাকিব? বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে শুধু উঠতি ক্রিকেটাররা নন, অনুসরণ করেন তার কোটি কোটি ভক্তও। বার বার নিষিদ্ধ হয়ে তাদের কী বারতা দিচ্ছেন সাকিব!

 

রংপুর রাইডার্স : ৮২/১০, ২০ ওভার (মিঠুন ২৮। কুলাসেকেরা ৪/১২)

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস : ৮৪/১, ১১.৫ ওভার (স্যামুয়েল্স ৪২*)

ফল : কুমিল্লা ৯ উইকেটে জয়ী

 

ঢাকা ডাইনামাইটস : ১৬৬/৬, ২০ ওভার (সাঙ্গাকারা ৭৫, নাসির ৩৩)

সিলেট সুপার স্টারস: ১৩২/১০, ১৯.৫ ওভার (নুরুল হাসান ৩৫*, মোশাররফ ৩/১৫)

ফল : ঢাকা ডাইনামাইটস ৩৪ রানে জয়ী

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর