মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

লোপেজের রোষানলে পড়েছিলেন

জাহিদ হোসেন এমিলি

ক্রীড়া প্রতিবেদক

লোপেজের রোষানলে পড়েছিলেন

সালাউদ্দিন, সালাম মুর্শেদী, আসলাম, আলফাজদের অবসরে বাংলাদেশের স্ট্রাইকিং পজিশন শূন্য হয়েছিল অনেকদিন। তাদের অনুপস্থিতিতে স্ট্রাইকার খেলেননি এমন নয়, তবে ভালোমানের কোনো স্ট্রাইকারের সার্ভিস পাচ্ছিল না জাতীয় ফুটবল দল। কারও উপরে ভরসা করতে পাচ্ছিলেন না ফুটবলপ্রেমী, কোচ ও টিম ম্যানেজমেন্ট। অবশেষে ২০০৫ সালে মিয়ানমারে এক তরুণের অভিষেকে হাফ ছেড়ে বাঁচে ফুটবলপ্রেমীসহ গোটা দেশ। জাহিদ হাসান এমিলি সেদিনকার সেই তরুণ আজ দেশের এক নম্বর স্ট্রাইকার। মিয়ানমারের টুর্নামেন্টে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে গোল করে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন উজ্জ্বল ভবিষ্যতের। সেই যে যাত্রা শুরু, ১০ বছর সেই একই ধারায় খেলছেন, খেলাচ্ছেন সতীর্থদের এবং সর্বোপরি গোটা দেশকে উৎসব, উচ্ছ্বাসে মাতাতে গোল করে চলেছেন মেশিনের মতো।

বাংলাদেশের ফুটবলারদের মধ্যে এমিলিই একমাত্র স্ট্রাইকার, অভিষেকে রয়েছে যার গোল করার বিরল রেকর্ড। ইনসাইড-আউটসাইড ডজ, ড্রিবলিং, শুটিং অ্যাকুরেসি এবং হেড- একজন স্ট্রাইকারের সবগুলো গুণে গুণান্বিত এমিলি। অথচ ফ্যাবিও লোপেজের রোষানলে পড়ে খেলতে পারেননি বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮ সালের বাছাইপর্বে কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। তিন ম্যাচে প্রতিপক্ষের উপর চাপ প্রয়োগ করতে পারেনি কোনো স্ট্রাইকার। প্রতিটি ম্যাচেই অভাব বোধ হয়েছে এমিলির। লোপেজ তাকে না খেলানোর পরিষ্কার ব্যাখ্যা দেননি কখনো। তবে অফ ফর্ম ও ফিটনেসের কথা বলেছিলেন বারবার। অথচ শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন চট্টগ্রাম আবাহনীর পক্ষে দুর্দান্ত খেলেন এমিলি। তিন ম্যাচ খেলতে  না পারাটাকে দেশসেরা স্ট্রাইকার জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া ভাবছেন না, ‘আমি তিন ম্যাচ খেলতে না পাড়াকে বাদ পড়া বলে মনে করি না। লোপেজ ক্রেডিট দেখাতেই আমাকে ও জাহিদকে বাদ দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন সে নেই। লোপেজ আমাদের বাদ দেওয়ার সময় বলেছিলেন ফিটনেস ও অফ ফর্মের কথা। অথচ আমরা এক সপ্তাহে পাঁচটি ম্যাচ খেলেছি এবং গোল করেছি। ফুটবলপ্রেমীরাই বলতে পারবেন আমাদের ফর্ম কেমন ছিল।’

১০ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে অনেক কোচের সান্নিধ্য পেয়েছেন এমিলি। অনেক কিছু শিখেছেন। কিন্তু মারুফুল হককে পেয়ে যারপর নাই খুশি। মারুফের নিয়োগ বাংলাদেশ ফুটবলের জন্য ভালো ইতিবাচক মানছেন দেশসেরা স্ট্রাইকার, ‘মারুফ ভাইকে কোচ নিয়োগ দেওয়ায় জাতীয় দলের জন্য অনেক ভালো হয়েছে। আমাদের সবার সম্পর্কে তার ভালো ধারণা রয়েছে। আমরাও তার সম্পর্কে জানি। দুই পক্ষের এই রসায়ন সাফ ফুটবলে আমাদের ভালো খেলার রসদ জোগাবে।’ বাংলাদেশ সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ২০০৩ সালে। এরপর প্রতিবারই শিরোপা স্বপ্ন নিয়ে খেলতে নেমে দেশে ফিরে ব্যর্থতার বোঝা কাঁধে নিয়ে। এবারও স্বপ্ন শিরোপা জয়ের। তবে সেটা বাস্তবায়নে ডিঙাতে হবে আফগানিস্তান ও মালদ্বীপের কঠিন হার্ডল। তারপরও এমিলি স্বপ্ন দেখছেন শিরোপা জয়ের, ‘আগে বারবার বলতাম শিরোপা জেতাই আমাদের টার্গেট। এবারও বলছি। তবে আমি একটু অন্যভাবে বলতে চাই, মারুফ ভাইয়ের কোচিংয়ে আমরা সেরাটা উজার করে দিতে প্রস্তুত। আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে যা যা করার দরকার, সেটা করতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করব না। প্রতিপক্ষ যেই হউক, আমাদের একটাই টার্গেট শিরোপা। মারুফ ভাইয়ের কোচিংয়ে সেটা সম্ভব বলেই আমি মনে করি।’

আগামী মাসে ভারতের কেরালায় শুরু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। বাংলাদেশ খেলবে ‘বি’ গ্রুপে। ২৪ ডিসেম্বর এমিলিদের প্রথম প্রতিপক্ষ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আফগানিস্তান। ২৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ম্যাচের প্রতিপক্ষ মালদ্বীপ এবং ২৮ ডিসেম্বর গ্রুপের শেষ ম্যাচ ভুটানের বিপক্ষে। গ্রুপের সেরা দুই দল খেলবে সেমিতে।

সর্বশেষ খবর