বুধবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ভাইকিংসের বিদায়

মেজবাহ্-উল-হক

ভাইকিংসের বিদায়

শেষ পর্যন্ত হাসি ফুটল ঢাকা ডাইনামাইটস ক্রিকেটারদের। উইকেট পাওয়ার পর মোশাররফকে ঘিরে সতীর্থদের উল্লাস -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ক্রিকেটে ‘একনায়কতান্ত্রিক’ বাণী, আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিয়ে মন্তব্য করা যাবে না! সে সিদ্ধান্ত যত দৃষ্টিকট‚ দেখাক না কেন তা নিয়ে কিছু বলতে পারবেন না কোনো ক্রিকেটার! ক্রিকেটে ‘আম্পায়ার যেন সম্রাট’, যা বলবেন তাই আইন! কিন্তু সম্রাট যখন ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হন, তখন রাজ্যে যে কতটা অশান্তি বিরাজ করে তা কি তিনি বোঝেন? আম্পায়ারের একটা সিদ্ধান্তই পাল্টে দেয় ম্যাচের ফল! বিপিএলের তৃতীয় আসর থেকে বিদায় ঘণ্টা বাজার পর তা হারে হারেই টের পাচ্ছে চিটাগং ভাইকিংস।

‘কাগুজে-কলমে’ ভয়ঙ্কর হলেও চিটাগং ভাইকিংস হয়ে পড়েছিল তামিমনির্ভর! কাল সেই তামিম যখন আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের বলি হয়ে সাজঘরে ফিরেন, তখন বালুর বাঁধের মতো ভেঙে পড়লো চিটাগংয়ের ব্যাটিং লাইন। ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচে ঢাকা ডাইনামাইটসের দেওয়া ১২২ রানের সহজ টার্গেটে পৌঁছাতে না পারে বন্দরনগরীর দলটি হেরে যায় ৪৫ রানে। পরিষ্কার করে বললে, আম্পায়ারের একটা সিদ্ধান্তই যেন কাল ‘ঢাকা ডাইনামাইটস ও চিটাগং ভাইকিংস’ ম্যাচের গতিপথ নির্ধারণ করে দেয়!

গতকাল মাঠে তামিম ইকবালের শরীরী ভাষা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল আউটের সিদ্ধান্তটি তিনি মেনে নিতে পারেননি। কাটার মাস্টার মুস্তাফিজের করা অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন ড্যাসিং ওপেনার। কিন্তু বাউন্স বুঝতে না পারায় বল গিয়ে আঘাত করে ভাইকিংস অধিনায়কের প্যাডে। বোলারের কাছ থেকে হালকা আবেদন উঠতে না উঠতেই আঙ্গুল উঠালেন আম্পায়ার। দেখে মনে হলো যেন আম্পায়ার মাসুদুর রহমান মুকুল শুধু আউটের সংকেতটা দেওয়ার জন্যই অপেক্ষমাণ ছিলেন। আম্পয়ারের এমন সিদ্ধান্তে ভীষণ হতাশ তামিম। তারপরেও মন্তব্য করেননি। এমনকি আম্পায়ারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডাতেও জড়াননি। কয়েক দিন আগে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মানতে না পেরে তর্ক করে রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান নিষিদ্ধ হয়েছিলেন এক ম্যাচ। কাল আউটের পর আক্ষেপ নিয়ে তামিম বলেন, ‘আমি কি বলবো- সবাই দেখেছেন। আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু বললেই তো সাসপেন্ড হয়ে যাব। তখন দেখা যাবে, শেষের ম্যাচটাও আর খেলতে পারবো না।’

৯ ম্যাচে ২৯৮ রান করে সবার ওপরে তামিম। ভাইকিংস বাদ পড়ায় শীর্ষ চারের লড়াইয়ে দেখা যাবে না তাকে। এ নিয়ে কষ্ট থাকলেও হতাশ দলীয় ব্যর্থতায়। কালকের ম্যাচে তাদের হাতের মুঠোতেই ছিল। শফিউল ইসলাম সুহাস ও মোহাম্মদ আমিরের দাপুটে বোলিংয়ে ঢাকাকে মাত্র ১২১ রানে গুটিয়ে জয়ের পথে হাঁটছিল ভাইকিংস। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ৭৬ রানে গুটিয়ে হারল ৪৫ রানে। আমির মাত্র ১৮ রানে ৩ উইকেট এবং শফিউল ২১ রানে নেন ৩ উইকেট। বোলারদের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট তামিম হতাশ ব্যাটসম্যানদের নিয়ে, ‘আমি আর দিলশান ছাড়া তো আর কেউ রানই করতে পারেনি। বড় কোনো পার্টনারশিপও নেই। ক্রিকেট দলীয় পারফরম্যান্সের খেলা। স্থানীয় ক্রিকেটাররা ভালো করতে না পারলে জয় পাওয়া খুব কঠিন।’ উইকেট নিয়েও অসন্তুষ্ট ড্যাসিং ওপেনার, ‘এশিয়া কাপ ও টি-২০ বিশ্বকাপের আগে এটি ছিল ক্রিকেটারদের আÍবিশ্বাস বাড়ানোর টুর্নামেন্ট। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। এমন উইকেট আগে কখনো দেখিনি। প্রথম দুই-তিন ম্যাচে উইকেট ভালো ছিল। উইকেট ভালো হলে রান আসত।’

চিটাগাং ভাইকিংস বিপিএল থেকে সবার আগে ছিটকে পড়লেও দলটির ফ্র্যাঞ্চাইজির আচরণে ভীষণ খুশি তামিম। তিনি বলেন, ‘আমাদের যা প্রাপ্য ছিল তার চেয়েও একশগুণ বেশি পেয়েছি ওনারদের কাছ থেকে। কিন্তু ওনারা যা চেয়েছিলেন আমরা তো তা দিতে পারিনি। তারপরেও আমাদেরকে অনেক বেশি সম্মান দিয়েছেন। একাদশ গঠনে কোনো হস্তক্ষেপ করেননি। আমাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন। তাই আমি পরের আসরেও ভাইকিংসের হয়েই খেলতে চাইবো।’

ঢাকা ইনিংস : ১২১/৮, ২০ ওভার, চিটাগাং ইনিংস : ৭৬/১০, ১৬.৫ ওভার

ফল : ঢাকা ৪৫ রানে জয়ী

রংপুর ইনিংস : ১৫৩/৬, ২০ ওভার, কুমিল্লা ইনিংস : ১৩২/১০, ১৯.৫ ওভার

ফল : রংপুর ২১ রানে জয়ী

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর