শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

মুগ্ধতা ছড়ানো স্টেডিয়াম

ক্রীড়া প্রতিবেদক, কেরালা থেকে

মুগ্ধতা ছড়ানো স্টেডিয়াম

কেরালার বিখ্যাত মাঠ চন্দ্রশেখর নাইয়্যার স্টেডিয়াম। লোকের মুখে মুখে কেবল এরই নাম। কেরালার প্রথম পুলিশ সুপারের নামের এ স্টেডিয়ামটা সত্যিই অসাধারণ। আন্তর্জাতিক ফুটবল ও ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজনের ফিফা এবং আইসিসির অনুমোদন পেয়েছে স্টেডিয়ামটা। তারপরও কেরালার মূল আকর্ষণ এ স্টেডিয়াম নয়। ভারতীয় ক্রীড়াজগতে ‘মাইলফলক’ স্থাপন করেছে কেরালার শহরতলি কারিয়াভাত্তামের নতুন স্টেডিয়াম ত্রিভানদ্রাম ইন্টারন্যাশনাল। স্থানীয়রা একে গ্রিনফিল্ড স্টেডিয়ামে নামে বেশি চেনেন।

গ্রিনফিল্ড স্টেডিয়ামের সবুজ জমিনের দিকে নজর দিলে এর নামকরণের যথার্থতা বোঝা যায়। এমন গ্রিনফিল্ড সত্যিই কম রয়েছে ফুটবল দুনিয়ায়। সবুজ মখমলের কার্পেটে ঢাকা একখণ্ড ভূমি যেন! গ্রিনফিল্ড স্টেডিয়ামের বিশেষত্ব অবশ্য অন্যখানে। প্রায় ৩৭ একর জমির ওপর কংক্রিটের এ প্রাসাদ নতুন যুগের ইঙ্গিতবাহী। ভারতে প্রথমবারের মতো ডিবিওটি (ডিজাইন, বিল্ড, অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার) কোড মেনে তৈরি হলো কোনো স্টেডিয়াম। এই কোড বলে, সবচেয়ে কম খরচে সবচেয়ে বেশি লাভ অর্জনই মানবজীবনে কল্যাণ নিয়ে আসতে পারে। যদিও গ্রিনফিল্ড নির্মাণে খরচ হয়েছে ২৪০ কোটি রুপি। তারপরও স্টেডিয়ামের উপযোগিতার তুলনায় এটা কমই! কেবল আন্তর্জাতিক ফুটবলই নয়, ক্রিকেটসহ অন্যান্য ইনডোর গেমসও এখানে আয়োজনের আন্তর্জাতিক মানের ব্যবস্থা রয়েছে। টেবিল টেনিস, বাস্কেটবল, ব্যাডমিন্টন কোর্ট কী নেই এখানে! অলিম্পিক সাইজের নজরকাড়া সুইমিংপুলও রয়েছে। এ ছাড়াও আছে আন্তর্জাতিক মানের কনভেনশন সেন্টার। সবমিলিয়ে কংক্রিট নির্মিত গ্রিনফিল্ড স্টেডিয়াম এক ভিন্ন জগত্ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক অলিম্পিক ভিলেজের মতোই। যোগ্যতার প্রমাণ দিতেই গ্রিনফিল্ড স্টেডিয়াম ভারতের ৩৫তম ন্যাশনাল গেমস আয়োজন করে।

তবে কেরালার অন্যতম আকর্ষণ এ গ্রিনফিল্ড স্টেডিয়ামও তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কাছে কিছুই নয়। বিশ্বখ্যাত কোভালাম সমুদ্রসৈকত এখানেই। অবশ্য প্রাকৃতিক কিংবা অপ্রাকৃতিক সৌন্দর্যের চেয়েও বেশি কিছু আছে এখানে। সারা ভারতে এখানে অপরাধের হার সবচেয়ে কম। এর কিছু নমুনাও পাওয়া গেল। যে অটোরিকশা চালক আমাদের স্টেডিয়াম অবধি নিয়ে এলেন, তিনি রাস্তায় তিনবার গাড়ি থামালেন। তার সম্ভবত জরুরি কল ছিল। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কথা শেষ করে আবারও গাড়ি ছাড়লেন। এমনটা ঢাকার কোথায় চোখে পড়বে! এত বিরাট শহর, অথচ যানজট নেই কোথাও। গাড়ি যে একেবারে কম, তা বলা যাবে না। এখানে সারা দিন ঘুরলেও কারও প্রতিদিন শ্যাম্পু করার প্রয়োজন হবে না। চুল থাকবে ঝরঝরে। ধুলোবালি যে একেবারেই নেই! অথচ ডিসেম্বরের শীতেও এখানে গ্রীষ্মের গরম!

কিন্তু এত চমত্কার সব স্টেডিয়াম নিয়েও এখানকার মানুষরা নির্বিকার। পুরো ত্রিভানদ্রাম শহর ঘুরলেও কোথা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ লেখা বিলবোর্ড পাওয়া যাবে না। কেরালাবাসী বিলবোর্ড পছন্দ করে না, বিষয়টা তেমন নয়। রাস্তার পাশে প্রচুর পরিমাণে পোস্টার আর বিলবোর্ড রয়েছে। এর সবই, মামুথি আর বিজয়ের (দক্ষিণ ভারতের জনপ্রিয় নায়ক) নতুন কি মুভি বের হলো তা নিয়ে। আর স্টেডিয়ামের গ্যালারি! ৫০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন গ্যালারি খা খা করছিল। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সবচেয়ে খারাপ দুদলের ম্যাচেও বোধ করি এর চেয়ে ঢের বেশি দর্শক সমাগম হয়। দর্শক উপস্থিতি দেখে পাশ থেকে কোনো এক সাংবাদিক বলে উঠলেন, আজ তো প্রেসবক্সেই দর্শক বেশি! ‘চাঁদে কলঙ্ক’ বহুল প্রচলিত বাক্যটাকেই যেন প্রমাণ করল গ্রিনফিল্ড স্টেডিয়ামের প্রেসবক্স।

সর্বশেষ খবর