শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ ০: ৪ আফগানিস্তান

আফগান গতিতে বিধ্বস্ত মামুনুলরা

কেরালা থেকে রাশেদুর রহমান

আফগান গতিতে বিধ্বস্ত মামুনুলরা

কেরালার গ্রিনফিল্ড স্টেডিয়ামে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে কাল বল দখলের লড়াইয়ে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের ফুটবলাররা — ছবি সৌজন্য

লাল-সবুজের লড়াই শেষ! বাংলাদেশের ফুটবলাররা আফগানদের অভিনন্দন জানিয়ে মাঠ ছাড়ছেন। ঠিক এ সময় আফগানিস্তানের ক্রোয়েশিয়ান কোচ পিটার সেগরত মাঠের সীমানায় দাঁড়িয়ে দুই আফগান তরুণীর সঙ্গে হাসিমুখে ছবি তুলতে ব্যস্ত। পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় বাংলাদেশের কোচ মারুফুল হক বিজয়ী কোচের হাসিমুখ দেখেও নিলেন। মলিন মারুফুল কী ভাবছিলেন তখন মাথা নিচু করে হাঁটতে হাঁটতে? ওদিকে অধিনায়ক মামুনুলও মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ কী যেন ভাবলেন। তবে দলপতিসুলভ দৃঢ়তায় নিজের দুর্বলতা লুকিয়ে সতীর্থদের পিঠ চাপড়ে সান্ত্বনা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তিনি। বিপরীত শিবিরে তখন মোটামুটি উত্সব চলছে। ভিক্টরি ল্যাপে অংশ নিয়েছে পুরো আফগান প্লাটুন। বাংলাদেশকে ৪-০ গোলে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা দারুণ সূচনা করেছে। সেমিফাইনালের পথে একধাপ এগিয়েই গেল আফগানরা এক ম্যাচ খেলেই! ফুটবলে এবারই প্রথম বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় পেল আফগানিস্তান।

এ যেন জার্মান দলের প্রতিচ্ছবি! লম্বা পাসে এমন দূরন্ত সব আক্রমণ ফুটবল ভক্তরা জার্মানির কাছ থেকেই দেখে থাকে সাধারণত। আফগানরা হঠাত্ করে ওরকম জার্মান প্রিয় হলো কবে থেকে! হবেই বা না কেন। পিটার সেগরতের দলটায় জার্মান লিগে খেলে এমন ফুটবলারের ছড়াছড়ি। প্রথম একাদশে সাতজন ফুটবলার ছিলেন যারা জার্মানির বিভিন্ন ক্লাবে খেলছেন! ফুটবলের জার্মান পাটটা তারা ভালোমতোই রপ্ত করেছেন। কাউন্টার আক্রমণে গেলে আফগানদের রুখবার সাধ্য কোথায় নাসির-ইয়াসিনদের। লম্বা পাস অনেক সময় তারা বুঝেই উঠতে পারেননি। মিডফিল্ডে আফগানদের ছিল পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ। আক্রমণভাগেও তাদের তত্পরতা চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে আফগান অধিনায়ক ফয়সাল শায়েস্তাহ দুর্দান্ত খেলেছেন। ক্রাউড থেকে কিভাবে বল ওপেন ফিল্ডে নিয়ে যেতে হয় তা শিষ্যদের ভালোই শিখিয়েছেন পিটার। আর জুবায়ের আমিরি ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। জার্মান ক্লাব হিসান ড্রেইকে খেলেন আমিরি। তার দুর্দান্ত এসিস্টেই প্রথম দুটি গোল পেয়েছে আফগানিস্তান। প্রথম গোল করেন মসীহ সাইগনি (৩০)। দ্বিতীয়টা এর ঠিক দুই মিনিট পর করেন আফগান দলপতি ফয়সাল শায়েস্তাহ। দুটোতেই এসিস্ট করেন আমিরি। ৪০ মিনিটে নিজেই একটা গোল করেন তিনি। বাংলাদেশ ৩-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যায়। তবে খেলার চেহারা ভিন্নও হতে পারতো। ম্যাচের অষ্টম মিনিটেই আফগান গোলরক্ষককে একা পেয়েছিলেন সাখাওয়াত হোসেন রনি। কিন্তু প্লেসিং করতে পারেননি এই তরুণ। অভিজ্ঞতার অভাব আরও একবার বড় হয়ে ধরা পরল। অবশ্য দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ কিছুটা নির্ভার হয়ে খেলার চেষ্টা করেছে। মামুনুল-হেমন্ত-জাহিদরা গোলের সুযোগ তৈরিতে কসুর করেননি। তবে আফগানদের বজ  আঁটুনি ছিন্ন করে বাংলাদেশের আক্রমণভাগ সফল হতে পারেনি। আফগানরা বাংলাদেশের গোলবারে শেষ সফল আঘাত হানে ম্যাচের ৬৯ মিনিটে। খাইবার আমানির শট প্রথমবার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন শহিদুল। তবে দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় ঠিকই গোল করেন আমানি। বাংলাদেশের পুরো ম্যাচে সবচেয়ে বড় যে সমস্যা আবারও প্রকট হয়ে দেখা দিলো, বল রিসিভিং। পাসিংয়ে এখন অনেকটাই সফল হচ্ছে বাংলাদেশ। তবে বল রিসিভিংয়ে এখনো অনেক পিছিয়ে। আফগানদের মতো ইউরোপীয় ধাঁচের ফুটবল খেলতে অভ্যস্ত এমন দলের কাছে মামুনুলরা যে এখনো শিশুই, গতকালের ম্যাচ হয়তো এটাই প্রমাণ করল। গত দুই আসরে গ্রুপ পর্ব খেলেই বাংলাদেশ বিদায় নিয়েছিল। গতকাল প্রথম ম্যাচ হেরে সেই শঙ্কাটা জেগে উঠল। আগামীকাল গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে মালদ্বীপের বিপক্ষে। সেমির আশা জাগিয়ে রাখতে এ ম্যাচে জয় ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। হারলেই ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। সে ক্ষেত্রে ২৮ ডিসেম্বর ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচটা আনুষ্ঠানিকতা হয়ে দাঁড়াবে।

বাংলাদেশ

শহিদুল আলম, মো. নাসিরুল ইসলাম নাসির, মো. ইয়াসিন খান, ইয়ামিন মুন্না, মো. জাহিদ হোসেন, মো. মামুনুল ইসলাম, হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস, মোনায়েম খান রাজু, নাসির উদ্দিন চৌধুরী, সোহেল রানা ও সাখাওয়াত হোসেন রনি।

আফগানিস্তান

অভিয়াস আজিজি, আবাসিন আলিখিল, হাসান আমিন, জুবায়ের আমিরি, ফয়সাল শায়েস্তাহ, নুরউল্লাহ আমিরি, সাঈদ মোহাম্মদ হাশেমি, মসীহ সাইগানি, মুস্তাফা জাজাই, মুস্তাফা হাদিদ ও কনিস্ক তাহের।

সর্বশেষ খবর