মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

ভোটারের দুয়ারে প্রার্থীরা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ভোটারের দুয়ারে প্রার্থীরা

বাফুফের নির্বাচনী লড়াই তুঙ্গে। ৩০ এপ্রিল ভোটের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন হবে। কে জিতবে এ নিয়ে হিসাব-নিকাশ চলছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কমিটি গঠন হচ্ছে চার বছর পর পর। কিন্তু ফুটবলের কোনো উন্নয়ন ঘটছে না। কাজী সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত পরিষদ ও মনজুর কাদেরের নেতৃত্ব দেওয়া ‘বাঁচাও ফুটবল পরিষদ’ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। কেউ কেউ আবার প্যানেলের বাইরে থেকেও প্রার্থী হয়েছেন। ২১টি পদ, কিন্তু সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে নির্বাচনের প্রয়োজন পড়বে না। সম্মিলিত পরিষদের প্রার্থী সালাম মুর্শেদী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। দুই প্যানেলই নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে। এখানে ভিন্ন কোনো বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে না। মূল লক্ষ্য তাদের একটাই উন্নয়ন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও বলছেন জিতলে ফুটবল উন্নয়নে কাজ করবেন।

সত্যি বলতে কি প্রতিশ্রুতির ছড়াছড়ি। ফুটবলপ্রেমীরা বলছেন, নির্বাচন এলেই এই করব সেই করব বলে প্রার্থীরা মুখের ফেনা বের করে ফেলেন। এরপর সবই শেষ। ফুটবল সংকটাপন্ন অবস্থায়, এ নিয়ে কারও  কোনো সংশয় নেই। আট বছর ধরে ফুটবলাররা মূলত ফুটবলকে পরিচালিত করছেন। বিশেষ করে সালাউদ্দিনের মতো ফুটবল ব্যক্তিত্ব সভাপতি হওয়ার পর অনেকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন। ভেবেছিলেন নতুন কিছু ঘটবে। আট বছর একেবারে কম সময় নয়। কিন্তু সালাউদ্দিন, সালাম, বাদল, আসলাম, রুপু, বাবলুদের মতো পরিচিত ফুটবলাররা দায়িত্বে থাকার পরও উন্নয়নের বদলে অবনতিই ঘটেছে বলা যায়। আগেও মান অহঙ্কার করার মতো ছিল না। কিন্তু জনপ্রিয়তা ঠিকই ছিল। এখন না আছে মান না জনপ্রিয়তা। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ, বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ, বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব ও এস এ গেমসে সর্বত্রই হতাশা। বার বার কোচ বদল করেও জাতীয় দল মাঠে দাঁড়াতে পারছে না। এতটাই খারাপ অবস্থা যে ভুটানকে হারানো যাবে কিনা এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। ক্ষুব্ধ হয়ে ফুটবলপ্রেমীরা বলছেন, অযথা দেশের সুনাম নষ্ট করার মানে হয় না। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া বন্ধ করা উচিত।

মান একেবারে হতাশাজনক, এরপরও বর্তমান কমিটির অনেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। সালাউদ্দিন তৃতীয়বারের মতো প্রার্থী হয়েছেন। বলেছেন ‘আমরা ফুটবলের চাকা সচল রাখলেও জাতীয় দলের পারফরম্যান্স হতাশাজনক তা আমি স্বীকার করছি। কথা দিচ্ছি নির্বাচিত হলে এই অবস্থা আর থাকবে না।’ তার প্যানেল যে ইশতেহার ঘোষণা করেছে সেই অনুযায়ী কাজ করতে পারলে বড় ধরনের না হোক ফুটবলে যে পরিবর্তন আসবে তা নিয়ে সংশয় নেই। অন্যদিকে কাদেরের প্যানেল বলে আসছে সালাউদ্দিন নিরাপদ নন। আট বছরে দেশের ফুটবলকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছেন। তাই বাঁচাও ফুটবল নামে আলাদা প্যানেল দিয়েছে এবং নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। সালাউদ্দিনের বিপক্ষে দাঁড় করিয়েছেন ক্রীড়াঙ্গনে অচেনা মুখ কামরুল হাসান খানকে। প্রশ্ন উঠেছে তাই, সালাউদ্দিন যেখানে পারেনি সেখানে কামরুলের মতো অচেনা ব্যক্তি ফুটবলের উন্নয়ন ঘটাবেন কীভাবে? এটা মানতে নারাজ মনজুর কাদের, তার কথা ‘পাপনকে চিনত কে! তিনি কি ক্রিকেট খেলতেন। কই বিসিবি সভাপতি হওয়ার পর তার নেতৃত্বে ক্রিকেটের উন্নয়ন কি ঘটছে না? আমরা যোগ্য ব্যক্তিকে বেছে নিয়েছি, কামরুল নির্বাচিত হলে ফুটবলের বর্তমান হতাশাজনক অবস্থা দূর হবেই।’ কামরুলও বলেছেন, ‘ফুটবলার না হলেও নির্বাচিত হলে সবাইকে মিলে ফুটবল উন্নয়নে কাজ করব। তিনি বলেছেন, তার কাছে অর্থ কোনো ফ্যাক্টর হবে না। ১০০ জন ব্যবসায়ীর কাছে ১ কোটি টাকা করে চাঁদা চাইবো। এতেই আমার ১০০ কোটি টাকার ফান্ড হয়ে যাবে। সালাউদ্দিনও প্রথম অবস্থায় বলেছিলেন ফুটবলে টাকা কোনো সমস্যা হবে না। অথচ আট বছরে ফান্ডের জন্য তাকে হা-হুতাশ করতে হয়েছে।’ প্রার্থীরা ভোটারের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছেন। দুই প্যানেলই ফুটবলকে বদলানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এরপরও ফুটবলপ্রেমীরা সন্দিহান প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হবে কিনা। জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার গোলাম সারোয়ার টিপু বলেন, ‘সালাউদ্দিনের সঙ্গে আমার কোনো দ্বন্দ্ব নেই। দীর্ঘদিন এক দলে খেলেছি। গ্রেট ফুটবলারের সব গুণাবলি তার ভিতরে রয়েছে। কিন্তু সভাপতি হিসেবে ও পুরোপুরি ব্যর্থ। তাই আমি তার বিকল্প নেতৃত্বের প্রয়োজন মনে করছি। তারপরও বলব পরিবর্তন হলেই সব কিছু পাল্টে যাবে তা আমি বিশ্বাস করি না। কাজ করতে হবে, প্রতিশ্রুতি তো আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। নতুন বা পুরাতন যারাই আসুক না কেন এ থেকে বের হতে হবে। তা না হলে সংকটাপন্ন অবস্থা দূর করা যাবে না।’

সর্বশেষ খবর