মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

মুস্তাফিজ-রহস্যে রোমাঞ্চিত বিশ্ব

মেজবাহ্-উল-হক

মুস্তাফিজ-রহস্যে রোমাঞ্চিত বিশ্ব

বারমুডা ট্র্যাঙ্গেলের রহস্য উদ্ঘাটন— গত মার্চে হঠাত্ এক খবর বের হয়! নরওয়ের আর্কটিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল বিজ্ঞানী বারমুডা ট্র্যাঙ্গেলে সমুদ্রের একেবারে তলদেশে বিশাল আকারের কয়েকটি আগ্নেয়গিরি আবিষ্কার করেছেন। যেগুলোর জ্বালামুখ থেকে বের হওয়া বিষাক্ত মিথেন গ্যাস সব জলজ প্রাণীকে মেরে ফেলে। জাহাজের নেভিগেশন ব্যবস্থাকে নষ্ট করে দেয়। পানির ওপরে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় ১৫০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত কোনো বিমানও যেতে পারে না!

—এই উদ্ঘাটনের ফলে কি বারমুডা ট্র্যাঙ্গেলের ভয়াবতা কিছু কমেছে!

কিছু দিন আগে মুস্তাফিজকে নিয়েও এমন কথা শোনা গেছে ক্রিকেট বিশ্লেষকদের কাছে— মুস্তাফিজ যত ভালো বোলিংই করুক না কেন তার কাটার-স্লোয়ার-ইয়র্কার সবাই বুঝে গেছে! সত্যিই তো সবাই বুঝে গেছে। কিন্তু তাতে কি মুস্তাফিজের বোলিংয়ের ভয়াবহতা কিছু কমেছে? বরং যতই দিন যাচ্ছে মুস্তাফিজ আরও ভয়ঙ্কর হয়ে যাচ্ছেন। বারমুডা ট্র্যাঙ্গেলের মতো রহস্যময় হয়ে উঠেছেন। তার রহস্য সবাই জানবে কিন্তু ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পাবেন না কোনো ব্যাটসম্যান!

সব শেষ ম্যাচে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে মুস্তাফিজের বোলিং ফিগার— ৪-১-৯-২! আইপিএলের চলতি আসরে প্রথম মেডেন ওভার করেছেন কাটার মাস্টার। এবারের আসরে সবচেয়ে ইকোনমি বোলার। নিয়মিত বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে কিপটে বোলিং মুস্তাফিজের। এখন পর্যন্ত তিনি ওভারপ্রতি দিয়েছেন মাত্র ৫.৭৫ গড়ে রান। ৫ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন সাতটি।

মুস্তাফিজ এখন আইপিএলে ব্যাটসম্যানদের কাছে রীতিমতো আতঙ্ক হয়ে গেছেন। টি-২০ টুর্নামেন্টে কোনো বোলারই এর আগে এত বেশি সমীহ পাননি ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে! কী পাওয়ার প্লে, কী শেষ ওভার— মুস্তাফিজকে বল হাতে দেখলেই যেন কাঁপুনি ধরে যায় ব্যাটসম্যানের বুকে। আগের ম্যাচে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যান মানন ভোহরা তো মুস্তাফিজের বোলিং থেকে বাঁচতে গিয়ে রানের জন্য দৌড় শুরু করে দেন এবং রানআউট হয়ে যান।

মুস্তাফিজের করা ২৪টি বলই যেন ব্যাটসম্যানদের কাছে ‘বিভীষিকাময়’ এক অভিজ্ঞতা! কোন বলে কাটার দেবেন, কোন বলে ইয়র্কার দেবেন, কিংবা স্লোয়ার কোনটি— তা বোঝাই যেন দায় হয়ে গেছে।

বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় তারকা ভাবা হয় সাকিব আল হাসানকে। আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ের কোনো পর্যায়েই যেখানে শীর্ষে যেতে পারেননি বাংলাদেশের কেউ, সেখানে সাকিব একসঙ্গে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০— তিন ফরম্যাটেই সেরা অলরাউন্ডার হয়েছিলেন। মুস্তাফিজ যেন সাকিবকেও ছাপিয়ে যেতে বসেছেন।

শচীন টেন্ডুলকার ও রাহুল দ্রাবিড়ের সময়ে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটত! দ্রাবিড় যত ভালোই খেলুক না কেন সবসময় তাকে থাকতে হয়েছে টেন্ডুলকারের ছায়ায়। বাংলাদেশ দলে সাকিব যত দিন  খেলবেন তত দিন অন্যদের অবস্থাও একই হবে— এমনই ভাবা হচ্ছিল! কিন্তু মুস্তাফিজ তার বোলিং জাদু দেখিয়ে সবার ধারণা পাল্টে দিচ্ছেন। শুধু বাংলাদেশ কেন, ক্রিকেট বিশ্বই এখন মুস্তাফিজ-রহস্যে রোমাঞ্চিত।

শেষ ম্যাচে পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে জয়ের পর রাতে মুস্তাফিজকে দিয়ে কেক কাটানো হয়। সান রাইজার্স হায়দরাবাদের মেন্টর ভিভিএস লক্ষ্মণ নিজেই মজা করতে গিয়ে মুস্তাফিজের গোটা মুখে কেক মাখিয়ে দেন। কাটার মাস্টার যে এখন হায়দরাবাদের দলটির কতটা কাছের, তা এখান থেকেই বোঝা যায়। মুস্তাফিজ দলটির কাছ থেকে যে ভালোবাসা পাচ্ছেন তা আইপিএলের অন্য কোনো দলের কাছ থেকে বাংলাদেশের অন্য কোনো ক্রিকেটার পেয়েছেন কিনা! এর আগে আইপিএলে খেলা মাশরাফি, তামিম, আশরাফুল, রাজ্জাকের কথা না হয় বাদই দেওয়া হলো। সাকিব আল হাসান কলকাতা নাইট রাইডার্সের দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের অন্যতম নায়ক। তারপরও তো মাঝে মাঝে উপেক্ষার শিকার হতে হয় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে। প্রথম ম্যাচে তো সাকিবকে নামানোই হয়নি। আগের ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করার পরও পুনের বিরুদ্ধে কলকাতার অধিনায়ক সাকিবকে দিয়ে চার ওভারের কোটা পূরণ করেননি।

আর মুস্তাফিজ— খোদ সান রাইজার্স হায়দরাবাদ দলের মালিক, কোচ, মেন্টর অধিনায়ক সবাই তো তার ফ্যান হয়ে গেছেন। দর্শকরা তো মুস্তাফিজ বলতে পাগলপ্রায়— সেটা দলটির অফিশিয়াল ফ্যানপেজে লাইক-কমেন্ট-শেয়ারের বন্যা দেখেই বোঝা যায়। আইসিসিও যেন মুস্তাফিজের ভক্ত হয়ে গেছে! তাই ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থাটির বার্ষিক সাধারণ সভায় মুস্তাফিজের পারফরম্যান্সের ভূয়সী  প্রশংসা করা হয়েছে। বিশ্ব মিডিয়াতেও ফলাও করে তুলে ধরা হচ্ছে মুস্তাফিজকে। প্রশংসা, ভালোবাসা, পারফরম্যান্স— সব দিক দিয়েই কাটার মাস্টার সবাইকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। এই সাফল্য-বন্যা অব্যাহত থাকুক —জয়তু মুস্তাফিজ!

সর্বশেষ খবর