সোমবার, ১১ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

ভাঙল ইউরোপের ফুটবল মেলা

রাশেদুর রহমান

ভাঙল ইউরোপের ফুটবল মেলা

এক মাসের উয়েফা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ফুটবল উত্তেজনা শেষ হলো সেন্ট ডেনিসে। গতকাল এ মাঠেই ইউরোতে সেরা হতে লড়াইয়ে নেমেছিল ফ্রান্স-পর্তুগাল —এএফপি

উয়েফা ইউরো কাপ শুরু হয়েছিল ১৯৬০ সালে। বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক ৩০ বছর পর। প্যান-ইউরোপিয়ান ফুটবল টুর্নামেন্টের ধারণা সর্বপ্রথম দিয়েছিলেন ফ্রেঞ্চ ফুটবল ফেডারেশনের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল হেনরি ডেলৌনে। সেটা ছিল ১৯২৯ সালের কথা। হেনরির মৃত্যুর তিন বছর পর ১৯৫৮ সালে টুর্নামেন্টের বাছাইপর্ব শুরু হয়। ১৭ টা দল এতে অংশ নিয়েছিল। তবে রাজনৈতিক কারণে প্রথম ইউরো কাপে অংশ নেয়নি ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, পশ্চিম জার্মানি এবং ইতালির মতো দলগুলো। ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত প্রথম ইউরো কাপ তেমন একটা সফল না হলেও দ্বিতীয় আসরেই টুর্নামেন্টটা জমে ওঠে। দ্বিতীয়বারে বাছাইপর্বে অংশ নেয় ২৯টা দল। পশ্চিম জার্মানি এবারেও অনুপস্থিত ছিল।

১৪ টা আসর পেরিয়ে গতকাল শেষ হল ১৫তম ইউরো কাপ। ফ্রান্স-পর্তুগাল ফাইনালকে ঘিরে গতকাল পুরো ফ্রান্সই ছিল নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা। ম্যাচ হয়েছে সেন্ট ডেনিসের ফ্রান্স স্টেডিয়ামে। তবে রাজধানী প্যারিসও ছিল নিরাপত্তায় মোড়ানো। গত বছর প্যারিস হামলার ঘটনায় বেশ কয়েক জনের মৃত্যু পুরো ফ্রান্সকেই শোকাহত করেছিল। এমন ঘটনা আর চায়নি ফরাসিরা। অন্তত ইউরো কাপ চলাকালীন তো নয়ই।

ধীরে ধীরে উয়েফা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবলের অন্যতম টুর্নামেন্ট হয়ে উঠে। বিশ্বকাপের পরই এর মূল্যায়ন শুরু হয়। এমনকি পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো ফুটবল আসর কোপা আমেরিকাকেও পিছনে ফেলে দেয় ইউরো কাপ। দীর্ঘ ৫৬ বছরের ইতিহাসে ইউরোপিয়ানরা দারুণসব টুর্নামেন্ট দেখেছে। ফুটবলভক্তরা উপভোগ করেছেন ফুটবলের স্মরণীয় অনেক লড়াই। এ টুর্নামেন্টে খেলেছেন গার্ড মুলার, বেকেনবাওয়ার, মিশেল প্লাতিনি, ইয়োহান ক্রুইফ, ফন বাস্তেন, রাইকার্ড আর জিনেদিন জিদানের মতো গ্রেটরা। তবে সবার ভাগ্যেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব ছিল না। ইয়োহান ক্রুইফের মতো মহাতারকাও এখানে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি। অবশ্য ডাচরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ফন বাস্তেন, গুলিত আর রাইকার্ডের নেদারল্যান্ডস জিতেছিল ১৯৮৮ সালে। ১৯৬০ সালে শুরু হওয়ার পর মোট ১৫ বার অনুষ্ঠিত হলো ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ। ফ্রান্সে এবার প্রথমবারের মতো ২৬ দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে এ টুর্নামেন্ট। বিশ্বকাপের আদলে হয়েছে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালও। ইউরোপের প্রায় সব দেশ এ টুর্নামেন্টে অংশ নিলেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব রয়েছে কেবল ৯ দলের। এর মধ্যে জার্মানি, স্পেন আর ফ্রান্স মিলেই জয় করেছে ৮টা ইউরো! তিনবার করে এ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে জার্মানি ও স্পেন। তবে ফাইনাল খেলার দিক থেকে সবার উপরে জার্মানি। তিনবার চ্যাম্পিয়ন হওয়া ছাড়াও আরও তিনবার তারা ফাইনাল খেলেছে। অন্যদিকে স্পেন একবার রানার্সআপ হয়েছে। ফ্রান্স দুইবার ফাইনাল খেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দুইবারই। ফাইনালে হারের রেকর্ড ছিল না ফরাসিদের। একবার করে এ টুর্নামেন্ট জিতেছে সোভিয়েত ইউনিয়ন, ইতালি, চেক প্রজাতন্ত্র, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক এবং গ্রিস। দুবার ফাইনাল খেলেও ইউরো কাপ জিততে ব্যর্থ হয়েছে যুগোস্লাভিয়া। ১৯৬০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে আর ১৯৬৮ সালে ইতালির কাছে ফাইনাল হেরেছে তারা। এছাড়া ফাইনাল খেলেও শিরোপাবঞ্চিত বেলজিয়াম। ১৯৮০ সালে তারা হেরেছে জার্মানির কাছে। পর্তুগিজরা ফাইনাল হেরেছে ২০০৪ সালে গ্রিসের কাছে।

১৫তম ইউরো কাপের আসরে কী ফুটবল দুনিয়া নতুন চ্যাম্পিয়নের দেখা পেয়েছে! ৯টা দলই বার বার ঘুরে ফিরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। গত রাতে কী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল নতুন কিছু উপহার দিতে পেরেছে ফুটবল ভক্তদের! এর উত্তর এতক্ষণে সবার জানা হয়েছে নিশ্চয়ই। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো তো নতুন কিছু করে দেখানোর জন্য পূর্ণ প্রস্তুতই ছিলেন। এমনকি ফ্রান্সকে ফেবারিট স্বীকার করার পরও শিরোপা দেখছিলেন নিজের হাতে। রোনালদোর এ স্বপ্ন কী পূরণ হলো!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর