শনিবার, ২০ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

আমিই সর্বকালের সেরা

উসাইন বোল্ট ২০০ মিটার ১৯.৭৮ সেকেন্ড

মেজবাহ্-উল-হক

আমিই সর্বকালের সেরা

‘শূন্যের দিকে তাক করে তীর ছুড়ছেন’— এটি হচ্ছে জ্যামাইকান বিদ্যুৎ উসাইন বোল্টের ট্রেডমার্ক সেলিব্রেশন। রিও অলিম্পিকের সেরা আকর্ষণ ১০০ মিটার স্প্রিন্টে সোনা জয়ের পর এই চিরচেনা সেই ভঙ্গিতে উদযাপন করতে দেখা যায়নি বিশ্বের দ্রুততম মানবকে। কিন্তু রিওয়ে ২০০ মিটারে সোনা জিতে অলিম্পিকে ‘প্রিন্ট-ডাবল’-এ হ্যাটট্রিক করেই নিজের সেরা ভঙ্গিতে উদযাপন করলেন বোল্ট।

বেইজিং অলিম্পিক-২০০৮, লন্ডন অলিম্পিক-২০১২, রিও অলিম্পিক-২০১৬— টানা তিন অলিম্পিকে ১০০ মিটার ও ২০০ মিটার থেকে সোনা জিতে নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টি করলেন উসাইন বোল্ট। এখন তার সামনে রয়েছে ৪x ১০০ মিটার রিলে। এই ইভেন্টে সোনা জিততে পারলেই ‘ট্রিপল ট্রিপল’ হয়ে যাবে বোল্টের। কেননা আগের দুই অলিম্পিকেই ১০০ মিটার ও ২০০ মিটারের পাশাপাশি ৪x ১০০ মিটার রিলেতেও সোনা জিতেছেন।

লন্ডন অলিম্পিকে সোনা জয়ের পর বোল্ট বলেছিলেন, ‘আমি জীবন্ত কিংবদন্তি।’ গতকাল ২০০ মিটারে সোনা জিতেই বোল্ট ঘোষণা দিয়েছেন, আমিই সর্বকালের সেরা। এ কথা অবশ্য বোল্ট নিজে মুখে না বললেও হতো! কেন না ‘ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে’ তার সঙ্গে তুলনা করার মতো আর কেউ নেই। টানা তিন অলিম্পিকে ট্র্যাকে নেমে প্রতিটি ইভেন্ট থেকে সোনা জয় করা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়।

রিওয়ে ট্র্যাকে নামার আগেই জিতে গেছেন— বোল্টকে দেখে গতকাল এমনই মনে হচ্ছিল। দৌড় শুরুর আগে গ্যালারির দর্শকদের দিকে তাকিয়ে বার বার ‘ভি’ সাইন দেখাচ্ছিলেন জ্যামাইকান কিংবদন্তি। দৌড় শেষ করে রাখঢাক না করে বলেন, ‘আমি কী করতে পারি সেটা নিয়ে আর নতুন করে কিছু বলার নেই। আমি বিশ্বের দরবারে প্রমাণ করেছি, আমিই সর্বকালের সেরা। আমি এখানে কী জন্য এসেছি তা বুঝিয়ে দিয়েছি। তবে এটাই আমার শেষ অলিম্পিক।’

এরপর আবার নিজেই প্রশ্ন করে বলেন, ‘আমার কি প্রমাণ করার আর কিছু আছে যে আমিও সর্বকালের সেরা? মোহাম্মদ আলী, পেলের মতো সেরা হওয়ার জন্যই আমার যত প্রচেষ্টা।’

১০০ মিটার স্প্রিন্টের মতো ২০০ মিটার স্প্রিন্টেও যে বোল্ট সোনা জিতবেন— এ নিয়ে কারও সন্দেহ থাকার কথা নয়! কেননা হিটে ও সেমিফাইনালে দেখা গেছে প্রথম ১০০ মিটারেই বোল্ট তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে অনেক এগিয়ে গিয়ে পরের ১০০ মিটারে ধীরগতিতে দৌঁড়েছেন। সেমিফাইনালে দেখা যায়, শেষ দিকে বোল্ট মজা করতে করতে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কানাডার আন্দ্রে ডি গ্রেসের টাস লাইনে পা রাখেন। তারপরও টাইমিং হয়েছেন ১৯.৭৮। সে কারণেই ভক্তদের প্রত্যাশা বেড়ে গিয়েছিল— এবার ২০০ মিটারে নতুন রেকর্ড গড়বেন বোল্ট।

২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিকে ১৯.৩০ সেকেন্ড সময় নিয়ে অলিম্পিক ও বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন। কিন্তু পরের বছর বার্লিনে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ১৯.১৯ সেকেন্ড সময় নিয়ে নিজের রেকর্ডটা ভেঙে নতুন আরেকটি রেকর্ড গড়েন। বোল্ট নিজেও ভেবেছিলেন, হয়তো এবার নতুন বিশ্ব রেকর্ড হচ্ছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়নি। সেমিফাইনালের টাইমিংটাই ফাইনালে অটুট থাকল।

১৯.৭৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে বোল্ট সোনা জিতলেও নিজের সেরা টাইমিংটা ধরে রাখতে পারেননি কানাডার স্প্রিন্টার আন্দ্রে ডি গ্রেসে। তিনি ২০.০২ সেকেন্ড সময় নিয়ে সিলভার জিতেছেন। ২০.১২ টাইমিং করে ব্রোঞ্জ জিতেছেন ফ্রান্সের স্প্রিন্টার ক্রিস্টোফি লিমেস্ট্রে। ১০০ মিটারে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন গ্রেসে। কিন্তু জাস্টিন গ্যাটলিন ২০০ মিটারের সেমিফাইনালে বাদ পড়ার পরই যেন সিলভার অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল তার।

প্রত্যাশা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত বিশ্ব রেকর্ড গড়তে না পারায় কিছুটা হতাশও হয়েছেন বোল্ট। সে হতাশা থেকেই বলেছেন, ‘আমি আরও দ্রুত গতিতে দৌড়াতে চেয়েছিলাম। নতুন করে বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার পা চলছিল না।’ মজা করে বলেন, ‘যখন আমি একটু পাশে গিয়েছিলাম তখন পা আমাকে ডেকে বলল, শোনো, আমরা এর চেয়ে দ্রুত গতিতে দৌড়াতে পারব না।’

অলিম্পিকে কে সর্বকালের সেরা বোল্ট নাকি মাইকেল ফেলপস? বোল্ট আটটি ইভেন্টে অংশ নিয়ে সবগুলোতেই সোনা জিতেছেন। আর মাইকেল ফেলপস জিতেছেন ২৩টি। সব মিলিয়ে তার পদক সংখ্যা ২৭টি। দুটি করে সিলভার ও ব্রোঞ্জ রয়েছে। তবে নিজেকে ফেলপসের সঙ্গে তুলনা করতে চান না বোল্ট। তিনি বলেন, ‘দুইটা সম্পূর্ণ আলাদা ইভেন্ট। দুইটার আবেদন দুই রকম। তাই দুইটার কোনো তুলনা হতে পারে না।’ তবে বোল্ট আবার এ কথাও বলেছেন, ‘আমি পুঁচকে কারও সঙ্গে হারি না!’ ফেলপস অনেক পদক জিতলেও রিওতে ১০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে হেরে যায় সিঙ্গাপুরের নতুন সাঁতারু জোসেফ স্কুলিংয়ের কাছে।

 

যে কোনো গেমসের প্রাণ হচ্ছে— অ্যাথলেটিকস। আর অ্যাথলেটিকসের প্রাণ যে ১০০ মিটার ও ২০০ মিটার স্প্রিন্ট তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না! আর দুই ইভেন্টেই গত এক দশক ধরে শাসন করে চলেছেন বোল্ট। তাই বোল্টের তুলনা আর কারও সঙ্গে হতে পারে না। বোল্টের তুলনা কেবলই বোল্ট— দ্য গ্রেটেস্ট স্পোর্টম্যান অব দ্য আর্থ।

২০০ মিটারে বোল্ট

২০০৮ অলিম্পিক     বেইজিং ১৯.৩০ সেকেন্ড    অলিম্পিক রেকর্ড

২০০৯ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ     বার্লিন  ১৯.১৯ সেকেন্ড     বিশ্বরেকর্ড

২০১১ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ     দেগু   ১৯.৪০ সেকেন্ড

২০১২ অলিম্পিক     লন্ডন ১৯.৩২ সেকেন্ড

২০১৩ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ     মস্কো ১৯.৬৬

২০১৫ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ     বেইজিং ১৯.৫৫

২০১৬ অলিম্পিক     রিও   ১৯.৭৮

সর্বশেষ খবর