শিরোনাম
শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

রোমাঞ্চিত ওয়ালশ

মেজবাহ্-উল-হক

রোমাঞ্চিত ওয়ালশ

কোর্টনি অ্যান্ড্রু ওয়ালশ —নামের মাঝেই কেমন যেন একটা আগ্রাসী ভাব! ১৯৮৪ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ব্যাটসম্যানদের কাছে ছিলেন মূর্তিমান ত্রাস! ২২ গজে তার সামনে দাঁড়াতে ভয় পাননি এমন কোনো ক্রিকেটার নেই। বল হাতে ১৬ বছর শাষণ করেছেন ক্রিকেট দুনিয়া। সর্বকালের সেরা পেসার তালিকা করলে হয়তো সবার উপরের থাকবে তার নাম! ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই জীবন্ত কিংবদন্তি এখন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের নতুন বোলিং কোচ।

টাইগারদের বোলিং কোচের দায়িত্ব পেয়ে রোমাঞ্চিত ক্যারিবীয় এই সাবেক পেসার। গতকাল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘বিসিবির বোলিং কোচ হিসেবে যোগ দিতে পারায় আমি দারুণ রোমাঞ্চিত। আমি বাংলাদেশের বোলারদের সঙ্গে কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছি।’

ওয়ালশের সঙ্গে তিন বছরের চুক্তি করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত। তবে চুক্তির মেয়াদ শুরু হয়েছে গতকাল ১ সেপ্টেম্বর থেকেই। ৫৩ বছর বয়সী ক্যারিবীয় কিংবদন্তি বাংলাদেশে আসবেন চলতি সপ্তাহেই।

ওয়ালশ এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সঙ্গে কাজ করেছেন। আইসিসি এমেরিকাস ক্রিকেট কম্বাইনের কোচিং দলেও ছিলেন তিনি। দায়িত্ব পালন করেছেন ক্যারিবীয়ান প্রিমিয়ার লিগের দল জ্যামাইকা তালাওয়াশের বোলিং পরামর্শক হিসেবে। সব শেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এবারই প্রথম টেস্ট খেলুড়ে কোনো দলের বোলিং কোচ হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন। সে কারণেই বাংলাদেশের হয়ে কাজ করার সুযোগ পাওয়াকে বিশেষ সুযোগ হিসেবে মনে করছেন তিনি। ওয়ালশ বলেন, ‘এমন একটি প্রতিভাবান দলের সঙ্গে কাজ করাটা আমার কোচিং ক্যারিয়ারের একটি বিশেষ কিছু।’

বোলার হিসেবে ওয়ালশ যতটা ত্রাস, মানুষ হিসেবে ততটাই বিনয়ী। তাই তো এক সময়ের বিশ্ব কাঁপানো এই বোলারের কাজ করতে আপত্তি নেই চন্ডিকা হাতুরাসিংহের সহযোগী হিসেবে। বরং তার মন্তব্যে লঙ্কান কোচের প্রতিও আস্থা ও শ্রদ্ধার বিষয়টি ফুটে উঠেছে। ওয়ালশ বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে দেখার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, তাদের দলে অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার রয়েছে। প্রধান কোচ হিসেবে চন্ডিকা হাতুরাসিংহে দারুণ কাজ করে চলেছেন। আশা করছি, তার সঙ্গে কাজ করে বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতির ধারায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারব।’

ক্রিকেটাতিহাসে ওয়ালশই প্রথম টেস্টে ৫ শতাধিক উইকেট শিকারি বোলার। তার উইকেট সংখ্যা ৫১৯। খেলেছেন ১৩২টি টেস্ট ম্যাচ। ওয়ানডেতে তার উইকেট ২২৭। তবে প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ১৮০৭টি উইকেট নিয়েছেন ওয়ালশ। তবে ওয়ালশের নাম উঠলেই ক্রিকেটামোদীদের স্মৃতিপটে হয়তো ১৯৯৫ সালে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেই টেস্ট ম্যাচটি ছবি ভেসে ওঠে। যে ম্যাচে ওয়ালশ একাই নিয়েছিলেন ১৩ উইকেট। প্রথম ইনিংসে ২০.৪ ওভার বোলিং করে মাত্র ৩৭ রানে নিয়েছিলেন ৭ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫.২ ওভার বোলিং করে মাত্র ১৮ রান দিয়ে নিয়েছে ৬ উইকেট। তবে এই কিংবদন্তি বোলার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এমন সব ম্যাচ জিতিয়ে দিয়েছেন যেখানে উইকেট শিকারের বিষয়টি গৌণ্য।

বাংলাদেশের ক্রিকেটাতিহাসে কোর্টনি ওয়ালশই সবচেয়ে হাইপ্রোফাইল কোচ। টাইগারদের কোচ হিসেবে কাজ করা দ্বিতীয় ক্যারিবীয়ান। এর আগে আরেক ক্যারিবীয় তারকা গর্ডন গ্রিনিজ বাংলাদেশের প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন। গ্রিনিজ ১৯৯৬ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের কোচ ছিলেন। ওই সময়ই বাংলাদেশের ক্রিকেট নতুন উচ্চতায় উঠে যায়। ১৯৯৭ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জিতে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায়। বাংলাদেশ ক্রিকেট বর্তমানে যে অবস্থানে তার ভিত্তিটা তৈরি করেছিলেন গ্রিনিজই।

ওয়ালশ এমন এক সময় দায়িত্ব নিলেন যখন দেশের ক্রিকেটের গ্রাফটা ঊর্ধ্বমুখী। ২০১৫ সালে টাইগাররা বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল এবং ঘরের মাঠে টানা পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সিরিজ জিতেছিল। বাংলাদেশের জয়ে বড় ভূমিকা ছিল পেসারদের। এই পেসার নিয়ে কাজ করে কিংবদন্তি ওয়ালশ বাংলাদেশের ক্রিকেটকে কতটা উচ্চতায় পৌঁছে দেন এখন সেটাই দেখার অপেক্ষা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর