শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

চূড়ান্ত পর্বের হাতছানি

ক্রীড়া প্রতিবেদক

চূড়ান্ত পর্বের হাতছানি

জিতলেই চূড়ান্ত পর্ব অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যাবে বাংলাদেশের। চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে তাই হালকা অনুশীলন সেরে নিচ্ছেন কৃষ্ণারা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

এ যেন ফাইনালের লড়াই। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ মহিলা ফুটবল বাছাইপর্বে বাংলাদেশ-চাইনিজ তাইপে মুখোমুখি হচ্ছে আজ। সন্ধ্যা ৬টায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে। দুই দল তিন ম্যাচে জয়ী হয়ে পুরো ছয় পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে। আজ যারা জিতবে ২০১৭ থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য চূড়ান্ত পর্বে যাওয়া অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যাবে। ড্র হলে গোল পার্থক্যে ‘সি’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হবে। ৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ গ্রুপের শেষ ম্যাচ খেলবে আরব আমিরাতের বিপক্ষে। অন্যদিকে তাইপে ও ইরান মুখোমুখি হবে। শেষ ম্যাচ কোনো ফ্যাক্টর নয়, দুর্বল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে বাংলাদেশ ও চাইনিজ তাইপে জিতবে তা নিশ্চিতই বলা যায়। আজকের ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। যেন ফাইনাল। চূড়ান্ত পর্বে হাতছানি দিচ্ছে দুই দলকেই।

টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বাংলাদেশের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেছিলেন, গ্রুপে আমরা কাউকে হালকা চোখে দেখছি না। তবে আমাদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে। ওরা শক্তিশালী দল, চূড়ান্ত পর্বে যাওয়ার জন্য দুই দলেরই ফাইট হবে। অধিনায়ক কৃষ্ণা রানীও একই কথা বলেছিলেন।

আগের তিন ম্যাচে ইরান, সিঙ্গাপুর ও কিরগিজস্তানকে গোলের বন্যায় ভাসিয়ে জয় পেয়েছে। বিশেষ করে কিরগিজস্তানের বিপক্ষে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। ১০ গোলে জয়। বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে এত ব্যবধানে কোনো দলেরই জেতার রেকর্ড নেই। জাতীয় পুরুষ দল যেখানে হত্যাশার বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না, সেখানে কিশোরীদের পারফরম্যান্স ফুটবলপ্রেমীদের মুগ্ধ করে ছাড়ছে। এমন নৈপুণ্য প্রদর্শন করার পরও নিজেদের মাটিতে চাইনিজ তাইপেকে কি হারানো সম্ভব হবে না? পুরুষ জাতীয় দলে জয়টা না হয় স্বপ্নে পরিণত হয়েছে, কিন্তু মেয়েরা সত্যিই আশার আলো জ্বালিয়েছে। সালমা, জাহানারারাও ক্রিকেট খেলে তেমন আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারেননি। কিন্তু কৃষ্ণারা দেশের মান উজ্জ্বল করেছে। যে মালদ্বীপ এক সময় মোহামেডান ও আবাহনীর কাছে পাত্তা পেত না, তারাই এখন জাতীয় দলকে নিয়ে ছেলেখেলা খেলছে। গত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে গ্রুপ পর্বে হার মেনেছে বাংলাদেশ। বুধবার মালেতে অনুষ্ঠিত প্রীতি ম্যাচে ৫-০ গোলে হেরেছে মালদ্বীপের কাছে। যা বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে বড় লজ্জা বলা যায়। পুরুষদের দুঃসময়ে কিশোরীরা বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করছে। দেশবাসী চেয়ে থাকবে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের দিকে। সবাই অপেক্ষা করছে জয়ের জন্য। দুশ্চিন্তা যে একেবারে নেই তাও বলা যাবে না। তীরে এসে তরী ডুবলে আক্ষেপের শেষ থাকবে না। কোচ ছোটন বলেন, চাইনিজ তাইপে নিঃসন্দেহে শক্তিশালী দল। মেয়েদের পারফরম্যান্সে অবশ্যই আমি সন্তুষ্ট। কিন্তু তাইপেকে হারাতে হলে সবাইকে জ্বলে উঠতে হবে। কোনোভাবে সুযোগ নষ্ট করা যাবে না। মেয়েদের ওপর আস্থা রয়েছে। তাই জয়ের ব্যাপারে আমি পুরোপুরি আশাবাদী।

কৃষ্ণা রানীর যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ গোল উৎসবে মেতেছে। নিজে খেলছেন সতীর্থদের খেলাচ্ছেন। দলের ভিতর চমৎকার সমন্বয় রয়েছে। লাল-সবুজের বিজয়ের পতাকা উড়াতে কিশোরীরা আজ মরিয়া হয়ে লড়বে। এই বিশ্বাস দেশবাসীর রয়েছে।

গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলেই বাংলাদেশের কিশোরীরা আগামী বছর চূড়ান্ত পর্বে বড় বড় দলের বিপক্ষে খেলবে। গতবারের সেমিতে খেলা উত্তর কোরিয়া, জাপান, চীন ও স্বাগতিক থাইল্যান্ড সরাসরি খেলার সুযোগ পেয়েছে। বাছাইপর্ব থেকে আসবে দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী দল। অস্ট্রেলিয়া কতটা শক্তিশালী দল তার প্রমাণ মিলেছে বাছাইপর্বে এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচে ৫০ গোল দিয়ে। সুতরাং চূড়ান্ত পর্বে ওঠা মানে কিশোরীদের বড় প্রাপ্তি। এই সুযোগ কোনোভাবে হাতছাড়া করতে চায় না ছোটনের শিষ্যরা। চাইনিজ তাইপেকে হারিয়ে স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছাতে চায়। দেখা যাক, রাতে কৃষ্ণারা দেশকে বিজয়ের উৎসবে ভাসায় কিনা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর