শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ব্যর্থ অফেন্স, নিষ্ক্রিয় ডিফেন্স

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ব্যর্থ অফেন্স, নিষ্ক্রিয় ডিফেন্স

ক্রিকেট ঘিরেই উচ্ছ্বাসে ভাসছে ক্রীড়ামোদীরা। সাফল্যের পর সাফল্য আসছে। আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সামনে সিরিজ। টাইগাররা সাফল্য পাবে এ প্রত্যাশা দেশবাসীর। ফুটবলে সেই রুগ্নদশা। একের পর এক হার। কোনো অবস্থায় ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। এতটা সংকটাপন্ন অবস্থায় ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ইতিহাসে সর্ব নিম্ন অবস্থান করছে। জাতীয় দলের বিপর্যয় ক্রীড়ামোদীদের ভাবিয়ে তুলেছে। তবে মহিলারা আবার ফুটবলে আলো ছড়াচ্ছে। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ ফুটবলে দুইবার শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশের কিশোরীরা। এবার অনূর্ধ্ব-১৬ দল ইতিহাস গড়ল। এএফসি কাপ বাছাইপর্বে তারা অপরাজিত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আগামী বছর সেপ্টেম্বরে মেয়েরা চূড়ান্ত পর্বে খেলবে। এমন সাফল্যে প্রশংসায় ভাসছে কিশোরীরা। পুরস্কারে ভরে যাচ্ছে কৃষ্ণাদের হাত। বাফুফে থেকে সংবর্ধনা জানান হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ইতিহাস গড়া মেয়েদের সংবর্ধনা দেবেন।

পুরুষদের যেখানে জ্বলে উঠার কথা সেখানে কিনা মেয়েরা এখন ফুটবলে আশা-ভরসার প্রতীক। পুরুষ জাতীয় দলে এমন বিবর্ণ অবস্থা কেন? আগেও যে গর্ব করার মতো ফুটবলাররা দেশকে ট্রফি উপহার দিয়েছে তা বলা যাবে না। কিন্তু এতটা সংকটাপন্ন অবস্থা ছিল না।ফুটবলারদের মধ্যে চমৎকার সমন্বয় ছিল। যা এখন দেখা যাচ্ছে না। শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে জিততে পারবে না এটাই স্বাভাবিক। অথচ এক সময় থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া জাতীয় দল হার মানতো। বিস্ময় হলেও সত্যি যে ইরান চ্যাম্পিয়ন পিরুজী দলকে ধরাশায়ী করেছিল ঢাকা মোহামেডান। হারিয়ে ছিল উত্তর কোরিয়া ও কাতার চ্যাম্পিয়নকেও। আফগানিস্তানের বিপক্ষে জাতীয় দলের জয়টা স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। এই আফগানিস্তানকে নিয়ে ছেলেখেলা খেলেছিল ঢাকা আবাহনী। আর মালদ্বীপ ও ভুটানতো দাঁড়াতেই পারত না। গোলের বন্যায় ভেসে যেত। অবস্থা এমন ছিল যে ম্যাচের আগে কম গোল দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের কাছে অনুরোধ রাখা হতো।

এগুলো এখন গল্পই মনে হবে। কালের বিবর্তনে এখন আফগানিস্তান ও মালদ্বীপের মতো দল বাংলাদেশকে নিয়ে ছেলেখেলা খেলছে। কিছুদিন আগে মালেতে প্রীতিম্যাচে মালদ্বীপ ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করে বাংলাদেশকে। ভুটানকেও হারানো যাচ্ছে না। ঢাকায় এশিয়ান কাপ প্লে-অফ ম্যাচে ভুটানের সঙ্গে গোল শূন্য ড্র করে। ১০ অক্টোবর থিম্পুুতে অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলবে। যে অবস্থা তাতে বাংলাদেশ শোচনীয়ভাবে হেরে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

পারফরম্যান্সের কথা চিন্তা করে বার বার কোচ পরিবর্তন করা হচ্ছে। কিছুই লাভ হচ্ছে না। ব্যর্থতার বৃত্তে আটকিয়ে আছে বাংলাদেশ। না ডিফেন্স না অফেন্স কোনো ক্ষেত্রে জ্বলে উঠতে পারছে না। ফুটবলে মেসি ও রোনালদোর মতো তারকারা গোল মিস করছেন। চিলির বিপক্ষে টাইব্রেকারে মেসি গোল করতে না পারায় আর্জেন্টিনা কোপা-আমেরিকা কাপ জিততে পারেনি। ম্যাচে গোল মিস হবেই। কিন্তু বাংলাদেশের ফুটবলাররাতো এখন জালই চোখে দেখছে না। ফাঁকা নেট পেয়ে ও ক্রিকেটের ওভার বাউন্ডারি হাঁকাচ্ছে ফুটবলাররা। কই সালাউদ্দিন, আসলাম বা সাব্বিররা যখন খেলতেন তখনতো এ অবস্থা ছিল না। ১৯৮৫ সালে ঢাকায় সাফগেমস ফাইনালে ভারতীয় বিপক্ষে আসলাম যে দর্শনীয় হেডে গোল করেন তা দেখে প্রতিপক্ষ কোচের মন্তব্য ছিল তার দেখা সেরা গোলের একটি। ১৯৭৭ সালে আগাখান গোল্ডকাপে অলইন্ডিয়া দলের বিপক্ষে মোসাব্বের যে দর্শনীয় গোল করেন তা দেখে প্রতিপক্ষ অধিনায়ক গুরুদেব সিংয়ের মন্তব্য ছিল বিশ্বের সেরা গোলের একটি। আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের ফুটবলাররা অনেক দর্শনীয় গোল করেছেন যা এখনো চোখে ভাসে। অথচ ফুটবল যে গোলের খেলা এখন সেটা বোধ হয় ভুলে গেছে ফুটবলাররা। তা না হলে সহজ সহজ সুযোগ নষ্ট হয় কীভাবে? তাহলে কি পোস্টের দৈর্ঘ্য ছোট হয়ে গেছে বাংলাদেশের । এতো গেল আক্রমণ ভাগের কথা। রক্ষণভাগের অবস্থাতো আরও করুণ। প্রতিপক্ষের সামান্য আক্রমণই সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। হালকা আক্রমণেই জালে বল। কোচ ক্রুইফ একবার ঠাণ্ডা করে বলেছিলেন, আমাদের রক্ষণভাগ প্রতিপক্ষের অফেন্সের দায়িত্ব পালন করে। গোল খাচ্ছে না তারা প্রতিপক্ষকে গোল উপহার দিচ্ছে। একবার চিন্তা করুন জাকারিয়া পিন্টু, ছোট নাজির, আশরাফ, কায়সার হামিদ, মোনেম মুন্নাদের কথা। তাদেরকে টপকাতে প্রতিপক্ষের ঘাম বের হয়ে যেত। আশি দশকে মালদ্বীপের কোচ বলেছিলেন বাংলাদেশের যে শক্ত ডিফেন্স তাতে গোলরক্ষকের প্রয়োজন পড়ে না। এখনকার ডিফেন্ডারদের যে অবস্থা তাতে মনে হয় মাঠে তাদের দায়িত্ব হচ্ছে নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে শুধু খাওয়া। এ অবস্থা যদি হয় তাহলে বাংলাদেশ আর জ্বলে উঠবে কবে। বিদেশি দল নয় এখন তাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত কৃষ্ণাদের দেখে!

সর্বশেষ খবর