মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

তামিমের মধুর প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড

মেজবাহ্-উল-হক

তামিমের মধুর প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড

তামিম ইকবাল। বাংলাদেশের ড্যাসিং ওপেনার। সেই ২০০৮ সালে টেস্টে অভিষেকের পর থেকে ওপেনিংয়ে এক প্রান্তে নির্ভরতার প্রতীক হয়ে আছেন। শুধু টেস্টে কেন, ওপেনিংয়ে ওয়ানডে ও টি-২০তেও এখনো তামিমের বিকল্প নেই। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে ব্যাটিংয়ে প্রায় সব রেকর্ডই তার দখলে।

ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের যে দাপট টেস্টে এখনো ফ্যাকাসে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স। ৯৩  ম্যাচে জয় মাত্র ৭টি (জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ২টি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ২টি)। ১৫ টেস্টে ড্র করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে বৃষ্টি। তবে টেস্টে বলার মতো যা অর্জন, তা কেবল ব্যক্তিগত রেকর্ড। আর ব্যক্তিগত পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে উজ্জ্বল তামিম ইকবাল।

ইংলিশদের বিরুদ্ধে আট টেস্টে সবগুলোতেই হেরেছে বাংলাদেশ। কিন্তু তারপরেও ইংল্যান্ড তামিম ইকবালের কাছে এক মধুর প্রতিপক্ষ। রেকর্ড বুক ঘাটলে দেখা যায় ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ড্যাসিং ওপেনার যেন উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর।

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তামিম খেলেছেন মাত্র চারটি ম্যাচ। তার মধ্যে দুটি সেঞ্চুরি এবং চারটি হাফ সেঞ্চুরি। দুটিই ইংল্যান্ডের মাটিতে। এক সেঞ্চুরি লর্ডসে, আরেকটি ম্যানচেস্টারে। সেঞ্চুরি দুটিই ২০১০ সালে। বাংলাদেশের মাটিতে খেলা ইংলিশদের বিরুদ্ধে দুই টেস্টেও হেসেছে তামিমের ব্যাট।

তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটের মধ্যে টেস্টকে ধরা হয় আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে। সাদা পোশাকে লড়াই। একজন ক্রিকেটার কতটা আগ্রাসী, কতটা উঁচু মানের তার বিচার হয় অনেকটা টেস্ট ক্রিকেটে তার পারফরম্যান্স দিয়ে। টেস্ট ক্রিকেটার মাত্রই আজন্ম সাধনা থাকে লর্ডস গ্রাউন্ডে খেলা। ইংল্যান্ডের এই গ্রাউন্ডে না খেললে যেন টেস্ট ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার যেন পূর্ণতাই পায় না! আর যদি লর্ডসের ‘অনার্স বোর্ডে’ নাম লেখানো যায় তাহলে তো কথাই নেই। তামিম তার টেস্ট ক্যারিয়ারে মাত্র একটি ম্যাচই খেলেছেন লর্ডসে, আর তাতেই করেছেন বাজিমাত। সেঞ্চুরি করে লিখেছেন লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নিজের নাম। ওই টেস্টে বাংলাদেশ ইংল্যান্ডের কাছে ৮ উইকেটে হেরে গেলেও দুই ইনিংসেই দাপটের সঙ্গে ব্যাটিং করেছেন তামিম। দ্বিতীয় ইনিংসে ১০০ বলে ১০৩ রানের সেই স্বপ্নিল সেঞ্চুরি, প্রথম ইনিংসেও করেছিলেন ৫৫ রান। কেভিন পিটারসেনের সরাসরি থ্রো-তে রান আউট না হলেও প্রথম ইনিংসেই সেঞ্চুরি পেতে পারতেন তিনি। তারপরেও লর্ডস তামিমকে দুহাত ভরিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে লর্ডসে তিনি সেঞ্চুরি করেছেন।

শুধু লর্ডসে কেন, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলা বাকি তিন ম্যাচেও ভয়ঙ্কর রূপে ছিলেন তামিম। ২০১০ সালের ওই সফরে ম্যানচেস্টার টেস্টেও সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। তামিম ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট খেলেছেন জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। সে ম্যাচে প্রথম ৮৫ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন। একই সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ঢাকায় ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্টে দুই ইনিংসেই হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন। প্রথম ইনিংসে ৭১ বলে ৮৫ রান, দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিলেন ৫২ রান। দুই ম্যাচেই দল বড় ব্যবধানে হারলেও তামিম ছিলেন স্বমহিমায় ভাস্মর।

সত্যিই টেস্টে ইংল্যান্ডকে সামনে পেলে যেন তামিমের ব্যাট প্রাণ খুঁজে পায়। ৪২ টেস্টে যেখানে তার গড় ৩৯.৪৬, সেখানে ইংলিশদের বিরুদ্ধে গড় ৬৩.১২। এর চেয়েও মজার বিষয় হচ্ছে, টেস্টে ইংলিশদের বিরুদ্ধে তামিমের স্ট্রাইক রেট তার ওয়ানডে স্ট্রাইক রেটের চেয়েও অনেক বেশি। টেস্টে তামিমের গড় স্ট্রাইক রেট যেখানে ৫৫.৪০, যেখানে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তার স্ট্রাইক রেট ৮৫.৫৯। যা তার ওয়ানডে স্ট্রাইক রেটের চেয়েও বেশি। ওয়ানডেতে ড্যাসিং ওপেনারের স্ট্রাইক রেট ৭৮.১০।

আরেকটি মজার তথ্য হচ্ছে, বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড টেস্টে উভয় দলের বর্তমান ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রানের মালিকও কিন্তু তামিমই। চার ম্যাচে তার রান ৫০৫। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক। তার মোট ৪০১।

এবারের টেস্ট সিরিজেও তামিমের ব্যাটের দিকেই তাকিয়ে বাংলাদেশ। দুই ম্যাচের সিরিজের প্রথম ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে তামিমের ঘরের মাঠ চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। এই মাঠে একটি সেঞ্চুরি রয়েছে ড্যাসিং ওপেনারের। ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে শতক করেছিলেন তিনি। তবে চট্টগ্রামে তামিমের টেস্টে গড় মোটেও ভালো নয়, ৩৩.০৯। ঘরের মাঠে ১১ ম্যাচে করেছেন মাত্র ৬৯৫ রান। ভক্তদের প্রত্যাশা ইংল্যান্ডকে সামনে পেয়ে জ্বলে উঠবে তামিমের ব্যাট, ঘরের মাঠে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করবে ‘লোকাল হিরো’!

সর্বশেষ খবর